বৈরী আবহাওয়াসহ নানা কারণে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর এখনও জমে ওঠেনি। মেলার শুরু থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও এখনও বেচাকেনা আশানুরূপ হয়নি। তবে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ছুটির দিন থেকে মেলা পুরোদমে জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ী ও আয়োজকদের।
ব্যবসায়ী ও আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপ-শহরের ৪ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মেলার এবারের আসর শুরু হয়। তবে তীব্র শীতের কারণে দর্শনার্থী আশানুরূপ হয়নি। এ ছাড়া রাজধানীর বাইরে পূর্বাচলে মেলার আয়োজনের স্থান হওয়ার ফলে যাতায়াতে সড়কে বেশ যানজটের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। সপ্তাহের কর্মচাঞ্চল্যময় দিনগুলোতে যানজটের তীব্রতা বেশি থাকে। ফলে এসব দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সংখ্যা বরাবরের মতো কম হচ্ছে। এ ছাড়া এখনও কিছু স্টলের সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়নি। এসব কারণে মেলা জমে উঠেনি। তবে ছুটির দিনে পুরোদমে জমে উঠবে বলে আশা তাদের।
বৃহস্পতিবার সোনারগাঁয়ের চৌরাস্তা থেকে বন্ধুদের নিয়ে মেলায় এসেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নীরব আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেলা এখনও সেভাবে জমে ওঠেনি। অনেক স্টলের কাজ সম্পন্ন হয়নি। পুরোপুরি জমে উঠতে আরও সময় লাগবে। আর ছুটির দিন ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে দর্শনার্থী ও ক্রেতা সমাগম কম হয়ে থাকে। ফলে আগামীকাল ছুটির দিনে লোক সমাগম বেশি হবে।’
স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ফতুল্লা থেকে মেলায় এসেছেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, আসার পথে অনেক যানজটে পড়েছি। এমনিতে অনেক দূর, তার ওপরে যানজট। সন্ধ্যা হতেই এই এলাকায় প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। এখনও মেলা সেভাবে জমে ওঠেনি। মেলা আরও জমলে আসবো।
বাণিজ্য মেলায় কসমেটিকস পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, মেলায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। অনেকে মেলা ঘুরে দেখতে এসেছেন। আবার অনেকে দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। এ ছাড়া শুরুতে শীতের তীব্রতা ছিল। এখনও সেভাবে জমে ওঠেনি। প্রতি বছর শুরুর এক থেকে দুই সপ্তাহ পর মেলা জমে ওঠে। আশা করছি, শুক্রবার ছুটির দিনে মেলা জমবে।
ছুটির দিনে মেলা পুরোদমে জমে উঠবে উল্লেখ করে জামা-কাপড়ের ব্যবসায়ী রহমত উল্লাহ বলেন, শুক্রবার ছুটির দিনে অনেক লোকসমাগম হবে। প্রতি বছর ছুটির দিনগুলোতে মেলা জমে উঠেছিল। সারা সপ্তাহের লোকসান ছুটির দিনে পুষিয়ে নেওয়া যায়। কারণ ওই দিন অনেক বেচাকেনা হয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ছুটির দিনে স্বাভাবিকভাবে লোকসমাগম বেশি হয়। শুক্রবার ছুটির দিনে লোকসমাগম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
প্রসঙ্গত, এবারের মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬২টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্তোরাঁ আছে। দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শত ভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশীয় বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, কার্পেট, প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, আসবাব, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি সামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিশিয়াল চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, খেলার সামগ্রী, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামিন, পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, ফাস্ট ফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, গৃহসজ্জার উপকরণ ইত্যাদি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে।
ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করায় আগে থেকেই ঘরে বসে টিকিট কেটে সহজেই মেলায় প্রবেশ করা যাচ্ছে। আবার কেউ কাটতে না পারলে মেলা প্রাঙ্গণে এলে টিকিট বুথ থেকে কেটে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার জন্য সময়ক্ষেপণ কিংবা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না ক্রেতা-দর্শনার্থীদের।
মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।