গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় নিখোঁজের নয় দিন পর কলাবাগানের ভেতর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার অর্ধগলিত লাশের পরিচয় মিলেছে। লাশটি রেজাউল করিম (৪০) নামের এক পোশাককর্মীর। পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ কলাবাগানে ফেলে যায় ছিনতাইকারীরা।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় শ্রীপুর থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- শ্রীপুর পৌরসভার বকুলতলা এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে শাহাদাত হোসেন শান্ত (২৫), উজিলাব এলাকার মৃত আফাজ উদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম ওরফে পাগলা মামুন (৫২), নেত্রকোনার টেঙ্গা গ্রামের মৃত আলী ওসমানের ছেলে জুলহাস (৩৪)। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের শনাক্ত ও অবস্থান নিশ্চিত হয়ে শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গত ৯ মার্চ সন্ধ্যায় শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক লাগোয়া ময়লার ভাগাড়ের পাশের একটি কলাবাগান থেকে একটি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের হাত-পা প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। পরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বজনদের মাধ্যমে শনাক্ত করে লাশটি রেজাউল করিমের। রেজাউল নেত্রকোনা সদর উপজেলার টাকরোনা ইউনিয়নের দুর্গাশ্রম গ্রামের এছাক মুন্সির ছেলে। তিনি গিলারচালা এলাকার এইচপি পোশাক কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করতেন এবং ওই এলাকায় স্ত্রী হালিমা আক্তার এবং মেয়ে সুমাইয়া আক্তারকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
রেজাউল করিমের স্ত্রী হালিমা আক্তার জানিয়েছেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকালে কারখানা ছুটির পর বাসায় আসেন রেজাউল। ইফতারের আগে স্ত্রীকে বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন রাত ৮টার পর থেকে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রেজাউল করিম সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় চার জন ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে। রেজাউলের কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু রেজাউল টাকা ও মোবাইল দিচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা পাশের কলাবাগানে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে যায়। ঘটনার ৯ দিন পর অর্ধগলিত অবস্থায় সেখানে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। লাশটি অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। পরে জড়িত একজনকে প্রথমে গ্রেফতার করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুজন কুমার পণ্ডিত বলেন, ‘ওই দিন অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রেজাউলের পরিচয় শনাক্ত করে ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা অপরাধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাদের রিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরেকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’