ঈদের দ্বিতীয় দিনে গাজীপুর সাফারি পার্কে দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে। মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সাফারি পার্কে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এদিন কর্তৃপক্ষ শুধু পার্কে প্রবেশের টিকিট বিক্রি করেছেন ১৬ হাজার ২০০টি। প্রতিটির মূল্য ৫০ টাকা। হিসাবে একদিনে বিক্রি হয়েছে আট লাখ ১০ হাজার টাকার টিকিট। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা পার্কে প্রবেশ করেছেন।
মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও ঈদের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পার্ক খোলা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিট কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের দিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৩ হাজার দর্শনার্থী পার্কে প্রবেশ করেছেন। তাদের কাছে ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার ছুটির দিনে আট লাখ ১০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে।’
এদিন সরেজমিনে পার্কের প্রধান ফটকে দেখা যায়, টিকিটের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দর্শনার্থীরা। ফটকের বাইরে উন্মুক্ত মাঠে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা ওই মাঠে ব্যক্তিগত ও ভাড়ায় চালিত গাড়ি পার্কিং করে রেখেছেন। সেখানে খাবারের দোকান ছাড়াও ঘোড়ায় চড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পার্কে প্রবেশের পর চোখে পড়ে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন। আলাদা বেষ্টনীতে কোর সাফারিতে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীরা লাইনে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কোর সাফারিতে বাঘ, ভালুক, সিংহ, জেব্রা, জিরাফসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী আছে। দর্শনার্থীদের নিয়ে প্রাণীদের বেষ্টনীর ভেতর ঘুরছে আটটি মিনিবাস।
এ ছাড়া সাফারি কিংডমে প্রবেশের পরই চোখে পড়েছে আলাদা টিকিট কাটার বুথ। সেখান থেকে টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা দেখেছেন ম্যাকাও, টিয়া, ঘুঘুসহ বিভিন্ন বিদেশি পাখি। কেউ কেউ আবার ম্যাকাও পাখির সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। এতে দর্শনার্থীরা যে যার মতো করে আনন্দ উপভোগ করেছেন।
পার্কের ভেতরে দর্শনার্থীরা পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখছেন কুমির, হাতি, জলহস্তী, মদনটাক, উটপাখি, ইমু পাখি, বিভিন্ন ধরনের সাপ, ইগল, ভুবন চিল ও রঙিন মাছ। পার্কের ভেতরে শিশুদের জন্য রয়েছে শিশুপার্ক। সেখানে প্রবেশ করতে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে শিশুদের। পরে বিভিন্ন রাইডে চড়েছে তারা। এ ছাড়া শিশুদের জন্য রয়েছে নাইন-ডি থিয়েটার। এখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রাণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
কালিয়াকৈরের সফিপুর থেকে পার্কে ঘুরতে এসেছেন পোশাক শ্রমিক দম্পতি আবু সাঈদ ও কণা আক্তার। তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ঈদের পরদিন এতো লোক হবে বুঝতে পারেননি। টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে প্রায় এক ঘণ্টার মতো। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে কোর সাফারিতে প্রবেশের টিকিটের জন্য। প্রচুর দর্শনার্থী আসায় এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের।
ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের অনেক দিনের আবদার ছিল সাফারি পার্কে আসার। এবার ঈদের ছুটি বেশি হওয়ায় তাদের আবদার পূরণ করার জন্য পার্কে এসছি। প্রাকৃতিক পরিবেশে পশুপাখি ঘুরে দেখেছি সবাই। বেশ আনন্দ উপভোগ করেছি আমরা।’
শ্রীপুরের বরমী থেকে পার্কে ঘুরতে এসেছেন পাঁচ বান্ধবী বিউটি আক্তার, সালমা আক্তার, মৌসুমী আক্তার, সাজেদা খাতুন এবং মুন্নী আক্তার। তারা জানিয়েছেন, তাদের উপজেলায় পার্কের অবস্থান হলেও পাঁচ বান্ধবীর একসঙ্গে কখনও পার্কে আসা হয়নি। এবার একসঙ্গে পার্কে এসে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছেন তারা। দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় তাদের বাড়তি আনন্দ জুড়িয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে পার্কে প্রবেশের পদ্ধতি খুবই সুন্দর ছিল। এতে করে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে প্রবশে করলেও কোনও সমস্যা হচ্ছে না।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পার্ক খোলা ছিল। ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন এমন দর্শনার্থী থাকবে বলে আশা করছি।’
প্রসঙ্গত, শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ইন্দ্রপুর গ্রামে অবস্থিত সাফারি পার্ক। প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। তবে ১২ বছর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা এবং পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিটের মূল্য নেওয়া হয় ১০ টাকা। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটিতে বন্ধ থাকে পার্ক।