মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই আলোচিত শিশু সুরাইয়া এখন ভালো নেই। তার ডান চোখ একবারেই নষ্ট হয়ে গেছে, সংকটাপন্ন অবস্থা বাম চোখেরও। ডান হাতেও জোর পায় না সে।
মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় অবস্থিত সুরাইয়াদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মা নাজমা বেগমের কোলে অবিরাম কেঁদে চলেছে সুরাইয়া। যে স্বপ্ন আর আশ্বাসের ঝুলি নিয়ে ঢাকা থেকে হাসিমুখে ফিরে এসেছিল সুরাইয়ার বাবা-মা, সেই মুখ এখন বিষন্ন, মলিন।
গত বছরের ২৩ জুলাই সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মায়ের গর্ভেই গুলিবিদ্ধ হয় সুরাইয়া। মাগুরা সদর হাসপাতালে ওইদিনই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আহত অবস্থায় জন্ম নেয় সে। গুরুতর অবস্থায় মা ও শিশুকে পাঠানো হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর তাকে শঙ্কামুক্ত বলে ছেড়ে দেন চিকিৎসকরা। মিডিয়ায় ঝড় তুলে হাসি মুখে সুরাইয়াকে নিয়ে ফিরে আসেন তার বাবা-মা। কিন্তু কয়েক মাস আগে সুরাইয়াকে নিয়মিত চেকআপের জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, সুরাইয়া ডান চোখে দেখতে পাচ্ছে না। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে বাংলাদেশ আই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সম্প্রতি সেখানকার কনসালটেন্ট ডা. সাব্বির আনোয়ার জানিয়েছেন, সুরাইয়ার ডান চোখটি চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে এবং বাম চোখের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এদিকে, ঘটনার পর অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়ালেও এখন আর কেউ খোঁজ নেয় না বলে জানালেন সুরাইয়ার বাবা-মা। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে সুরাইয়ার সব ধরনের দায়িত্ব নেওয়া হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনও বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভুঁইঞা বলেন, ঘটনাটি মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সে সময় সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যম থেকে দেড় লাখ টাকা মতো আর্থিক সহযোগিতাও পাই যা ঢাকা থাকতেই খরচ হয়ে যায়। তখন সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়, সুরাইয়ার পড়ালেখা ও চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে। কিন্তু ওই সব মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করেও এখন সাড়া পাচ্ছি না। আর এত চিকিৎসা ব্যয় আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে আর বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ঢাকা যেতে হয়। এতে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এরইমধ্যে ওষুধের দোকানে ৩৫ হাজার টাকা দেনা করে ফেলেছি।
এদিকে, এ ঘটনার মামলায় সাত আসামি জামিনে ছাড়া পেয়ে এখন বাইরে। বাচ্চু ভুঁইঞার অভিযোগ, মূল দুই আসামি আলী ও সুমন সেন এখনও জেলহাজতে থাকলেও যারা জামিন পেয়েছে তারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। সব মিলে এখন ভালো নেই সুরাইয়া ও তার পরিবার।
/বিটি/এএইচ/
আরও খবর পড়ুন-