ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ জুনায়েদের নামে চত্বর এবং শহীদ আনাসের নামে সড়ক উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সোমবার (৭ জুলাই) ডিএসসিসির অঞ্চল-০৫ আওতাভুক্ত ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন চত্বর এবং দ্বীননাথ সেন সড়কের নতুন নামকরণের অনুষ্ঠান হয়। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী প্রমুখ।
৫ আগস্ট সকালের দুর্বিষহ স্মৃতি স্মরণ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, চানখারপুলে যে স্থানে আনাস এবং জুনায়েদ শহীদ হয়, আমি তার পাশেই ছিলাম। আমরা সবাই পুলিশ, এপিবিএন এর ব্যারিকেড ভেঙ্গে শহীদ মিনারের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হই, কিন্তু গুলিতে জুনায়েদ-আনাসসহ আরও অনেকে শহীদ হয়। আমরা এই শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। যে অদম্য দেশপ্রেম এবং প্রেরণা থেকে তারা জীবন দিয়েছে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য, আমরা সবাই মিলে এমন বাংলাদেশই গড়ে তুলবো।
উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা দূর করণের জন্য আর যেন কাউকে জীবন দিতে না হয়, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত বাহিনী যেন অন্যায়ভাবে এমন গণহত্যা না করতে পারে, তাই এই গণহত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে আমাদের সবার সম্মিলিত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
দেশব্যাপী মানুষের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় এই লড়াই সফলতা পাবে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আনাস ও জুনায়েদের মতো ১৪-১৫ বছরের বাচ্চারা একটি মন নিয়ে জন্মেছিল বলে অন্যায়কে মেনে নেয়নি।
শহীদদের রক্ত বৃথা গেলে যারা দায়িত্ব নিয়েছি তারা দায়ী থাকবো উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, এই সন্তানদের রক্ত যেন কখনও বৃথা না যায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, চানখাঁরপুলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট আগামী ১৪ জুলাই গঠন করা হবে এবং ৫ আগস্ট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে যেন আগামী এক শতাব্দী আমাদের সন্তানদের গায়ে কেউ হাত তোলার সাহস না পায়।
ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, আনাস ও জুনায়েদ শুধু দুটি নাম নয়। এটি একটি চেতনা, একটি আদর্শ।
ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে সংরক্ষণের সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে উল্লেখ করে প্রশাসক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় আদর্শে রূপ দিতে হলে, জুলাই শহীদদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
এছাড়া, স্থানীয় সরকার বিভাগ সারা দেশে শহীদের নামে স্মৃতিফলক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জাহেদী।
অনুষ্ঠানে শহীদ আনাসের মা এবং শহীদ জুনায়েদের বাবা বক্তব্য প্রদান করেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ এবং ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দাবি করেন। এছাড়াও সব শহীদদের কবর সংরক্ষণ এবং স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, ডিএসসিসির ৪৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ১৪ বছরের কিশোর মেহেদী হাসান জুনায়েদ ছাত্রদের পানি খাওয়াতে তার মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে এসেছিলেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চাঁনখারপুলে মিছিলরত অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
৫ আগস্ট আরও শহীদ হয়েছিলেন শাহারিয়ার খান আনাস। আদর্শ একাডেমি গেন্ডারিয়ার দশম শ্রেণির ছাত্র আনাস মায়ের উদ্দেশ্য চিঠি লিখে বীরের মতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে নেমে এসেছিলেন চানখাঁরপুলের রাজপথে।