X
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ ও তুরস্ক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চায়

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৭ জুলাই ২০২৫, ২২:০০আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২:১০

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করতে চায় বাংলাদেশ ও তুরস্ক। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে তুরস্ক। এছাড়া তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে বাংলাদেশের। এ প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ২৪ ঘণ্টার সফরে ঢাকা আসছেন তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি সেক্রেটারি হালুক গোরগান। সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

এ বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, উভয়পক্ষের আগ্রহ রয়েছে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার। গত কয়েক বছর ধরে তুরস্ক থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আগে থেকে তাদের সঙ্গে অন্য ধরনের সহযোগিতাও ছিল। 

তিনি বলেন, ‘তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সফরে এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।’

তুরস্কের আগ্রহের জায়গা

তুরস্ক প্রায় ৫০টি দেশে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেশটি ১৫১ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে, যা তাদের অস্ত্র রফতানির প্রায় ৫ শতাংশ। বাংলাদেশে রফতানির পরিমাণ সামনে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করে তুরস্ক তার মধ্যে দ্বিতীয়। তুরস্ক ন্যাটো মানসম্পন্ন অস্ত্র উৎপাদন করে এবং সমপর্যায়ের অন্য দেশগুলোর তুলনায় দেশটির পণ্যের মূল্য কম। এছাড়া তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় করার সময়ে কোনও ধরনের শর্ত আরোপ করা হয় না।

তুরস্ক থেকে কেন অস্ত্র ক্রয় করা হয়

১০-১২ বছর আগেও তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো ছিল না। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে দেশটি নিন্দা জানায়। বিষয়টি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ভালো চোখে দেখেনি। ফলে ওই সময়ে কিছু মাসের জন্য দুই দেশই তাদের রাষ্ট্রদূতকে নিজ নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যায়।

অবস্থার বড় ধরনের পরিবর্তন হয় ২০১৬ যখন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সামরিক ক্যু’র চেষ্টার সময় তাকে অল্প সময়ের মধ্যে সমর্থন জানায় বাংলাদেশ। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বরফ গলতে শুরু করে। এর পরপরই ওই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করেন এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।

২০১৭ সাল থেকে তুরস্ক থেকে বড় আকারে অস্ত্র ক্রয় শুরু করে বাংলাদেশ এবং গত আট বছরে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য অস্ত্র সরবরাহকারী হিসাবে পরিচিত লাভ করে দেশটি।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়- অস্ত্রের গুণাগুণ, শর্তযুক্ত বা শর্তহীন কিনা, মূল্য, মূল্য পরিশোধের সময়সীমা প্রভৃতি। তুরস্কের পণ্য ন্যাটো মানদণ্ডসম্পন্ন। গুণাগুণ ভালো। একইসঙ্গে দামও কম এবং শর্তহীন।’

তিনি বলেন, ‘এসব কারণে বাংলাদেশ তুরস্কের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। চীনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে পণ্যের গুণাগুণ নিয়ে কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করে। কিন্তু মূল্য ও মূল্য পরিশোধের সময়সীমা এবং শর্তহীন হওয়ায় বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে চীনের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ করছে।’

সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র

প্রতিরক্ষা বিষয়ে তুরস্কের প্রযুক্তি অনেক উন্নত এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারে।

সাবেক আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘বর্তমানে যুদ্ধ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন আকাশযুদ্ধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন বা ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ড্রোন বা বিমান যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় সামনের দিনগুলোতে আকাশপথে শ্রেষ্ঠত্ব বিজয়ী নির্ধারণ করবে।’

তিনি বলেন, ‘ড্রোন প্রযুক্তিতে তুরস্ক অনেক দূর এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশেও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ড্রোন তৈরি করছে। বাংলাদেশের এখন যেটি দরকার সেটি হচ্ছে অ্যান্টি-ড্রোন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এর মানে হচ্ছে অন্য কোনও শক্তি যদি ড্রোনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর হামলা করে, সেটি যেন আমরা প্রতিরোধ করতে পারি।’

প্রযুক্তি অনুযায়ী এটি তেমন উচ্চ পর্যায়ের নয় এবং এই সহযোগিতার ফলে বাংলাদেশের জন্য খরচও কম পড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উচ্চ প্রযুক্তি তৃতীয় দেশকে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শর্ত থাকে। এ ধরনের কম উচ্চ প্রযুক্তির বিষয়ে তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করবে।’

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
থানা থেকে লুট হওয়া পিস্তল মাটির নিচ থেকে উদ্ধার
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবার অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে
তুরস্কে বিরোধীদলীয় আরও ৩ মেয়র গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই সংস্কার শেষ করতে হবে: আখতার হোসেন
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই সংস্কার শেষ করতে হবে: আখতার হোসেন
গণমাধ্যমকে হুমকির প্রতিবাদ জানিয়ে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের বিবৃতি
গণমাধ্যমকে হুমকির প্রতিবাদ জানিয়ে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের বিবৃতি
শেষ ম্যাচ কি খেলতে পারবেন শান্ত?
শেষ ম্যাচ কি খেলতে পারবেন শান্ত?
আমরা মিডিয়ার স্বাধীনতা চাই: হাসনাত আব্দুল্লাহ
আমরা মিডিয়ার স্বাধীনতা চাই: হাসনাত আব্দুল্লাহ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
‘আ.লীগের সদস্যরা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে না পারে’
‘আ.লীগের সদস্যরা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে না পারে’
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য সংগ্রহ করেছে মন্ত্রণালয়
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য সংগ্রহ করেছে মন্ত্রণালয়
তিন নেতাকে অব্যাহতি দিলেন জিএম কাদের
তিন নেতাকে অব্যাহতি দিলেন জিএম কাদের