X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা

মো. হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:৫০আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:৫০

খুলনা বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সাল, মার্চের শুরু থেকেই উত্তাল ছিল খুলনা। জেলা সার্কিট হাউসে অবস্থান নেওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর ২৭ মার্চ সকালে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। ওই হামলায় ২৭ জন হানাদার সেনা নিহত হয়। মুক্তির প্রবল বাসনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ফুঁসে ওঠে খুলনার জনতা। মার্চের ৩ তারিখে চারটি বন্দুকের দোকান লুটে অস্ত্র সংগ্রহ করে স্থানীয়রা। এরপর স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তারা।

২৫ মার্চ রাত থেকেই রেল লাইন উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলে খুলনার মুক্তিকামী মানুষেরা। ২৭ সার্চ সার্কিট হাউসে হামলার পর প্রতিটি জুট মিলে অস্ত্র সরবরাহ করে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।  

মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার শেখ কামরুজ্জামান টুকু, মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী,তৎকালীন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এম এম মুজিবর রহমান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৭ মার্চের পর যশোর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী শহরের দিকে আসতে শুরু করে। এর ফলে ফুলতলা, দৌলতপুর, বয়রানহ বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের সময় খুলনায় ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার জনতা বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধে অংশ নেন। ১৫ থেকে ২০ জন ব্যক্তি এ প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেন বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু।

মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী জানান, ২৭ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নওয়াপাড়া হয়ে ফুলতলায় প্রবেশ করে। সেখানে জনতার সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সেসময় এক কিশোর যোদ্ধা মারা যান। এরপর পাকিস্তানিরা পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিক নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে দৌলতপুরেও জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। বয়রা এলাকায় এসে জনতার সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ হয় হানাদার বাহিনীর।

স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নিজেও নেতৃত্ব দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘খুলনার যুদ্ধে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, শেখ আব্দুল কাইয়ুম, মির্জা খয়বরসহ ১২ থেকে ১৫ জন নেতৃত্বে ছিলেন। শুরুর দিকে প্রতিরোধে প্রায় পাঁচশ’ জনতা অংশ নেন। ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্যে পাইকগাছার বাকায় ৬ জন, বটিয়াঘাটায় ২ জনসহ বিভিন্ন স্থানে অনেকেই প্রাণ হারান।

খুলনা বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধ মুক্তিযোদ্ধা এম এম মুজিবর রহমান জানান, ১৯৭১ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। টেস্ট পরীক্ষা শেষ। সেসময় নির্যাতনের শিকার হয়ে রূপসার আলাইপুর থেকে ৪টি হিন্দু পরিবার তাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের কথা শুনে মনের মধ্যে জেদ তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। ১৯৭১ সালের আগস্টের মাঝামাঝি নৌকায় করে বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর পৌঁছালে রাজাকারের একটি দল তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় রাজাকারদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। রাজাকার বাহিনী সংখ্যায় কম থাকায় তাদের পিছু হটানো সম্ভব হয়। এরপর তেরখাদার পাতলা গ্রামে উত্তর খুলনা মুক্তি বাহিনীর হেডকোয়ার্টারে এসে অবস্থান করেন তারা। 

অক্টোবরের শেষের দিকে তেরখাদার মণ্ডলগাতি গ্রামে রাজাকারদের সঙ্গে বড় আকারের যুদ্ধ হয়। প্রথমে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে। পাকিস্তানি বাহিনী সংখ্যায় বেশি ছিল। ফলে যুদ্ধের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান অনেক মুক্তিযোদ্ধা।

তেরখাদার বর্তমান ডাক বাংলো তৎকালীন রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল। ১৯৭১ সালের ১২ বা ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চার দিক দিয়ে ক্যাম্পটি ঘিরে ফেলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। ওই ঘটনার পর ক্যাম্পের সব রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা ধীরে ধীরে খুলনার দিকে অগ্রসর হন। এ সময় খরবারিয়া ক্যাম্প, পালের বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে। আবার কোনও কোনও জায়গায় খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ চলছিল।

১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও খুলনায় তা ঘটে একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর। এখানে শিরোমনিতে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক ট্যাংক যুদ্ধ। এমন ট্যাংক যুদ্ধ দেশের অন্যত্র খুব কমই ঘটে বলেও জানিয়েছেন খুলনার মুক্তিযোদ্ধারা।

উল্লেখ্য, অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য ১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকেই খুলনা শহর ছিল উত্তাল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নসহ স্বাধীনতাকামী মানুষ এক হয়ে রাজপথে নামতে শুরু করেছিল। দৌলতপুর ও খালিশপুর থেকে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিছিল নিয়ে খুলনার বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়। ৩ মার্চ খুলনায় মিছিলে হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় তিন জন। প্রতিবাদে মিছিলকারীরা শহরের কে ডি ঘোষ রোডে অবস্থিত কয়েকটি বন্দুকের দোকান ভেঙে বন্দুক, রাইফেল ও গুলি সংগ্রহ করে। এই অস্ত্র নিয়ে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জয়বাংলা বাহিনীর সদস্যরা খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

আরও পড়ুন:


সীমানা প্রাচীরের অভাবে অরক্ষিত ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ

/এএইচ/আপ-বিএল/
সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
টিভিতে আজকের খেলা (২ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২ মে, ২০২৪)
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!