X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক লাইব্রেরি বদলে দিলো একটি গ্রাম

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:০০আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:৫১

দেশে তখন গণ-আন্দোলন প্রবল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১০ দফার স্লোগান মন্ত্রের মতো উচ্চারিত হতো। এমনই সময়ে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন গ্রামের কয়েকজন যুবক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শুরু হলো। এর সঙ্গে যুক্ত হন স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা। ১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু হয় লাইব্রেরির। নাম দেওয়া হয় অনির্বাণ লাইব্রেরি। গ্রামের যুবসমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করা, বাল্যবিবাহ ও কুসংস্কারমুক্ত করে মানুষজনকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিয়ে আসা ছিল—এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।

খুলনা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে পাইকগাছা উপজেলার মামুদকাটি গ্রামে অনির্বাণ লাইব্রেরির অবস্থান। হরিঢালী ইউনিয়নের হিন্দুপ্রধান এই গ্রামটিতে এবং আশপাশের দু-তিনটি গ্রামে একসময় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বাল্যবিবাহ ও নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন গ্রামের মানুষজন। গত ৩২ বছরে লাইব্রেরির বদৌলতে বদলে গেছে গ্রামটি। বর্তমানে এখানে বাল্যবিবাহ হয় না। প্রায় প্রতিটি ঘরে রয়েছেন সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদে কর্মরত মানুষজন। শুধু পাইকগাছা কিংবা খুলনায় নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সামাজিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে এই লাইব্রেরি।

যেখানে ব্যতিক্রম এই লাইব্রেরি

এই লাইব্রেরি অন্য দশটা লাইব্রেরি থেকে আলাদা। লাইব্রেরি ঘিরে গড়ে উঠেছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন। শুরু থেকে সপ্তাহে এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বসে পাঠচক্র। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাপ্তাহিক বৈঠক হয়। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখানো হয়। লাইব্রেরির আয়োজনে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প হয়। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় উপবৃত্তি।

এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে লাইব্রেরিতে বসে পাঠচক্র

শুরুর ইতিহাস

সোনাতনকাটি গ্রামের জয়দেব কুমার ভদ্র (বর্তমানে ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ), মানিক ভদ্র, মামুদকাটি গ্রামের বিশ্বকর্মা মন্ডল ও হরিঢালী গ্রামের মৃণাল ঘোষ ১৯৯০ সালে গ্রামে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এরপর আশপাশের কয়েক গ্রামের যুবকদের নিয়ে বৈঠক করে লাইব্রেরি স্থাপনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের যুক্ত করা হয়। মহান বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে ১০ ডিসেম্বর গ্রামের হরিসভার ঘরে অনির্বাণ লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের বাড়িতে যেসব বই ছিল সেগুলো দিয়ে লাইব্রেরি চালু করা হয়। পরে সবার কাছ থেকে বই ও অর্থ নিয়ে এটিকে সমৃদ্ধ করা হয়।

লাইব্রেরি থেকে বৃত্তি 

লাইব্রেরির পক্ষ থেকে প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এলাকার কৃষকদের দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছে লাইব্রেরি। এমনকি বীজ-সার সরবরাহ করছে। করোনাকালে ত্রাণ সহায়তা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। দুর্যোগে এলাকাবাসীর পাশে থাকছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণ জ্ঞানের বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে মনিরউদ্দিন-অনির্বাণ বৃত্তি দেওয়া হয়। এসএসসি-এইচএসসি উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের নীলসাগর-অনির্বাণ বৃত্তি দেওয়া হয়। গত পাঁচ বছর ধরে এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দুই সেট করে স্কুলড্রেস দেওয়া হচ্ছে। 

লাইব্রেরিতে বই সংখ্যা

লাইব্রেরিতে গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও নাটকসহ প্রায় ১৫ হাজারের বেশি বই রয়েছে। আছে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। শিশুদের আলাদা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। লাইব্রেরির সদস্যরা কেবল বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারেন। তবে লাইব্রেরিতে বসে সবার জন্য বই ও পত্রিকা পড়ার সুযোগ আছে। এখানে জাতীয়, স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা রাখা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন পেয়েছে লাইব্রেরিটি। সদস্য-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় ১১ শতাংশ জমি কিনে তিনতলা ভবনে কার্যক্রম চলছে লাইব্রেরির।

উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখানো হয় শিক্ষার্থীদের

অনির্বাণ সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ

গত কয়েক বছরে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষকে আকৃষ্ট করেছে এই লাইব্রেরি। দূর-দূরান্তের অনেকে লাইব্রেরির কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন। লাইব্রেরিকে শুধু বই পড়ার স্থানে সীমাবদ্ধ রাখেননি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা। এটিকে প্রগতিশীলতা, মুক্তচিন্তা ও সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছেন। অনলাইন এবং প্রিন্ট আকারে অনির্বাণ সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ হচ্ছে। ধীরে ধীরে সাময়িকীকে মানসম্পন্ন ত্রৈমাসিক সাহিত্য সাময়িকীতে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

যেভাবে সদস্য হওয়া যায়

আজীবন সদস্য, দাতা সদস্য ও সাধারণ সদস্য—এই তিন ধরনের সদস্য রয়েছে লাইব্রেরির। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী যে কেউ এক হাজার টাকায় ফরম পূরণ করে সদস্য হতে পারেন। আজীবন সদস্য হতে ২০ হাজার টাকা এককালীন দিতে হয়। এর বেশি মূল্যের বই, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও আর্থিক অনুদান দিয়ে দাতা সদস্য হওয়া যায়। সারা বছরই সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলে। দেশ-বিদেশে বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি অনলাইন সদস্য রয়েছে লাইব্রেরির।

লাইব্রেরির কর্মসূচি

লাইব্রেরিতে সারা বছরই কোনও না কোনও কর্মসূচি থাকে। মহান স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সুকান্ত ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকের জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়। বাংলা নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করা হয়। এলাকার শিল্পীরা নাটক থেকে শুরু করে নানা পরিবেশনায় অংশ নেন। জেলা শহর ও রাজধানীর শিল্পীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এছাড়া একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক দিয়ে প্রতি শুক্রবার ক্লিনিক পরিচালিত হয়। দরিদ্রদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি সপ্তাহে দুই দিন শিশুদের নিয়ে ছবি আঁকা, নাচ এবং গানের বিষয়ে শিশু একাডেমির আদলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি লাইব্রেরির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। 

শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় উপবৃত্তি

যাদের দিয়ে চলছে লাইব্রেরির কার্যক্রম

বর্তমানে লাইব্রেরির সভাপতির দায়িত্বে আছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর কালিদাশ চন্দ্র চন্দ। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন প্রভাত দেবনাথ। লাইব্রেরির প্রথম কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক কালিদাশ চন্দ্র চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মানিক ভদ্র। এলাকার প্রবীণ শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হিসেবে আছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব অশোক মধাব রায় ও সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গণেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য। এছাড়া একজন লাইব্রেরিয়ান এবং একজন অফিস সহকারী কাম নাইটগার্ড রয়েছেন। তারা দুজন বেতনভুক্ত কর্মচারী। এর বাইরে ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিকের চিকিৎসকের জন্য একটা মাসিক সম্মানী দিতে হয়।

যা আছে লাইব্রেরিতে

তিনতলা ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে ২৫০ জন দর্শক ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট হলরুম। যেখানে আছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম, ডক্টরস চেম্বার এবং অফিস রুম। দোতলায় লাইব্রেরি রুম, কম্পিউটার ল্যাব, দুটি পৃথক রিডিং রুম এবং কমন রুম এবং গেস্ট রুম। তিনতলায় লাইব্রেরি রুমসহ পাঁচটি গেস্ট রুম আছে।

পরিবেশ সংরক্ষণে লাইব্রেরির উদ্যোগ

অনির্বাণ লাইব্রেরি সংলগ্ন এলাকাকে পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে তিন হাজার মাটির পাত্র বিভিন্ন গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাখিদের জন্য তিনটি পৃথক স্থানে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হয়। পরিবেশ সংরক্ষণে লাইব্রেরির এসব উদ্যোগ সবার নজর কেড়েছে। 

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

প্রাথমিকভাবে পাইকগাছা ও তালা উপজেলার অসহায় ও সংগ্রামী নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ, ছাগল এবং হাঁস-মুরগি পালনে সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৫টি সেলাই মেশিন বিতরণের কর্মসূচি শুরু হবে। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে খাদ্য সরবরাহসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

খুলনা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে পাইকগাছা উপজেলার মামুদকাটি গ্রামে অনির্বাণ লাইব্রেরির অবস্থান

চলতি বছর করোনা এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষকে ৩০ লাখ টাকা (খাদ্য, গৃহ নির্মাণ সামগ্রী এবং আমন বীজ) সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে টর্নেডোতে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। পোশাকশ্রমিক বাবা-মায়ের অগ্নিদগ্ধ পাঁচ বছরের শিশু মারিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়অ হয়েছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিজস্ব দেড়শ স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে ‘অনির্বাণ ব্লাড ফর লাইফ’ সংগঠন কাজ করছে। 

ছাত্র-যুবকদের জন্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব ও ট্যুরিস্ট বোট

অনির্বাণ লাইব্রেরি সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদে একটি মাঝারি ট্যুরিস্ট বোট তৈরি করা হয়েছে। যাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নৌ-ভ্রমণ এবং সুন্দরবন ভ্রমণের সুযোগ পান স্থানীয়রা। সেইসঙ্গে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের বিকাশ ঘটে। পাশাপাশি এলাকার ছাত্র ও যুবকদের জন্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব চালু করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টির জন্য লাইব্রেরি এবং আশপাশের ৫০ মিটার পর্যন্ত ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মডেল লাইব্রেরি

এই লাইব্রেরি সবার জন্য একটি মডেল বলে উল্লেখ করেছেন অনির্বাণ লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘লাইব্রেরিতে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের বই পড়া, কবিতা ও গানসহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতা থাকে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পাশাপাশি মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। বই পড়ার পাশাপাশি লাইব্রেরিতে কবিতা, গান শেখানো, এমনকি একাডেমিক পড়ায় সহায়তা করা হয়। এখান থেকে কৃষিবিষয়ক নানা তথ্য দেওয়া হয়। কেউ চাইলে চাকরির খোঁজ-খবর দেওয়া হয়।’

৩২ বছর আগে যে স্বপ্ন নিয়ে লাইব্রেরির যাত্রা হয়েছিল আজ তা ছাড়িয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন অনির্বাণ লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও বর্তমান সহ-সভাপতি মানিক ভদ্র। তিনি বলেন, ‘আমরা সফল। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের লাইব্রেরিকে অনুকরণ করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এটি আসলে সবার জন্য অনুকরণীয়।’

অনির্বাণ লাইব্রেরিকে বাতিঘর বলছেন সুশীল সমাজ

অনির্বাণ শুধু লাইব্রেরি নয়, এই অঞ্চলের বাতিঘর বলে জানিয়েছেন উপজেলার দক্ষিণ সোনাতনকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লতা রানী। তিনি বলেন, ‘পুরো উপজেলার মানুষজন উপকৃত হচ্ছেন। দরিদ্ররা সহযোগিতা পান, শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পায় এবং অসুস্থরা চিকিৎসা পায়। এমন কোনও সামাজিক কাজ বাকি নেই যা অনির্বাণ লাইব্রেরি বাস্তবায়ন করেনি। এটি আমাদের গ্রামকে বদলে দিয়েছে। বলা যায় সবার আইকন।’ 

ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে শেখানো হয় ছবি আঁকা ও শিল্প সাহিত্য

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল ভদ্র বলেন, ‘একটি লাইব্রেরির ছোঁয়ায় পুরো এলাকা বদলে গেছে। বর্তমানে এখানে আর বাল্যবিবাহ হয় না। প্রতিটি বাড়িতে শিক্ষিত মানুষজন আছেন। এসব সম্ভব হয়েছে পাঠাগারের কল্যাণে।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামে একটি লাইব্রেরি ঘিরে যেসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে তা আশাজাগানিয়া। যেখানে তরুণ-তরুণীরা বই পড়ে না, সংস্কৃতি চর্চা করে না, মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেখানে এই লাইব্রেরির সদস্য ও পাঠকদের উল্টো চিত্র। এখানের প্রজন্ম বইমুখী, সমাজমুখী। এই লাইব্রেরি ঘিরে গড়ে উঠেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন।’   

বিএফইউজে’র সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘লাইব্রেরি যে অন্তহীন জ্ঞানের আধার—তার বাস্তব প্রমাণ প্রত্যন্ত গ্রামের এই লাইব্রেরি। এখানে আলো ছড়ানোর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করা হয়। এর মাধ্যমে সামাজিক কুসংস্কার ছেড়ে আলোর পথে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষজন।’

/এএম/
সম্পর্কিত
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসগণগ্রন্থাগারে গণফাটল, পাঠকের নিত্যসঙ্গী আতঙ্ক
উচ্চশিক্ষার রেফারেন্স বই চেয়ে চেয়ে আর কতদিন?
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের ৬ বছর, কী প্রভাব পড়েছে সমাজে
সর্বশেষ খবর
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়