X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবন রক্ষীদের অরক্ষিত জীবন, নেই নৌযান ও সরঞ্জাম

আবুল হাসান, মোংলা
০১ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:৫৬আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:৫৬

চারদিকে পানি, এর ভেতরে বন। এর নাম সুন্দরবন। প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশে। যার আয়তন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার। বিশাল ও দুর্গম এই বন রক্ষায় বন বিভাগের যেসব রক্ষী দায়িত্ব পালন করেন, তাদের জীবন অরক্ষিত। তাদের নেই আধুনিক নৌযান ও সরঞ্জাম। ফলে ঝুঁকি নিয়ে অভিযান চালান তারা।

বনরক্ষীরা বলছেন, সুন্দরবনের একাংশ থেকে অন্য অংশে যেতে জলপথই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সুন্দর এই বন ঘিরে অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়। আবার সুন্দরবনে আশ্রয় নেয় অনেক অপরাধী। বনের কাঠ চুরি করে নিয়ে যায় দস্যুরা। হরিণ শিকার করে কেউ কেউ। কিন্তু বন বিভাগের জলযান তেমন নেই। যা রয়েছে তাও তেলের অভাবে চালানো যায় না।

এ অবস্থায় যেসব বনরক্ষী গভীর বনে দায়িত্ব পালন করেন, তারা সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে লোকালয়ে এনে চিকিৎসা করাটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। জেলেদের মাছ ধরা ট্রলারের অপেক্ষায় থাকতে হয় লোকালয়ে এসে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। আবার কখনও কখনও তাদের খাবারও শেষ হয়ে যায়। তখন জেলেদের কাছে থেকে খাবার নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। আবার রেশন ও অন্যান্য সুবিধাও পান না তারা।

নেই আধুনিক নৌযান ও সরঞ্জাম। ফলে ঝুঁকি নিয়ে অভিযান চালান তারা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন একজন বন সংরক্ষক। দুটি বিভাগীয় অফিসের দায়িত্বে আছেন দুজন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)। এই দুটি বিভাগের (পূর্ব ও পশ্চিম) চারটি রেঞ্জের আওতায় ১৬টি স্টেশন ও ৬৩টি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। সেগুলো বন্যা ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বনরক্ষীদের জন্য নিরাপদ নয়। জ্বালানি তেমন না পাওয়ায় এবং জলযান না থাকায় টহল কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। এই সুযোগে বনে চোরাকারবারি ও অপরাধীরা মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। 

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘আধুনিক নৌযান না থাকায় অভিযান চালাতে সমস্যায় পড়তে হয় বনরক্ষীদের। অপরাধীদের দ্রুতগামী নৌযান আছে। আমাদের যেসব নৌযান আছে, সেগুলো অপরাধীদের দ্রুতগামী নৌযানের সঙ্গে পেরে ওঠে না। এজন্য অপরাধীদের ধরতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হয় রক্ষীদের।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বনরক্ষীদের আছে বহু পুরনো চাইনিজ রাইফেল এবং এসএলআর। অথচ সুন্দরবনের দস্যুদের রয়েছে আধুনিক অস্ত্র। ফলে এসব অস্ত্র দিয়ে দস্যুদের দমন করা সম্ভব হয় না। এজন্য বনরক্ষীদের শক্তিশালী অস্ত্র দেওয়া প্রয়োজন।’

কটকা ও কচিখালী টহল ফাঁড়ির বনরক্ষী আব্দুস সবুর, নজরুল ইসলাম এবং শহিদুল ইসলাম জানান, সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেও বাড়তি সুযোগ পান না তারা। কম বেতন পান। নেই রেশনিং ব্যবস্থা ও ঝুঁকি ভাতা। তাদের জীবন অনেকটাই অনিরাপদ। অনেকটা দুঃখে-কষ্টে চলতে হচ্ছে তাদের। 

তারা আরও জানান, গহীন বনের ফাঁড়িগুলো থেকে লোকালয়ে এসে ওষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় বাজার করতে হয়। বন্যা হলে তারা বনের ফাঁড়িগুলোতে থাকতে পারেন না। এখানে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই।

সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এজন্য সুন্দরবন রক্ষা ব্যবস্থা ও রক্ষীদের আধুনিকায়ন করতে চান তারা।

সুতারখালী ফরেস্ট স্টেশন

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবন সুরক্ষায় দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের লোকবল সংকট আছে। আধুনিক নৌযানের সংকট দীর্ঘদিনের। এজন্য আধুনিক নৌযান যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বনরক্ষীদের আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’

সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত বনরক্ষীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার—এমনটি জানালেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আগের তুলনায় বনরক্ষীদের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। সুন্দরবন সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবন ও বনরক্ষীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে।’

ইকোট্যুরিজম প্রকল্পের আওতায় বনরক্ষীদের জন্য পাঁচটি জলযান কেনাসহ ২৫ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে বলেও উল্লেখ করেন উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় চারটি জলযান কেনাসহ তিন কোটি টাকার কাজও চলমান। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে ১৬ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
তীব্র গরমেও শীতল করমজল!
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
মৎস্যঘের থেকে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো কুমির উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!