বর্তমান শিখন স্তরে বাংলা বর্ণ ও শব্দ চেনা, পড়তে পারা এবং একক অঙ্ক শনাক্তকরণে পিছিয়ে আছে শিশু শিক্ষার্থীরা। রাজশাহীর ও খুলনায় এমন জরিপ পরিচালনার পর উঠে আসে এসব চিত্র। তবে দুটি জেলার মধ্যে শিশুদের তুলনামূলক এগিয়ে ও পিছিয়ে থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
গত ১৮ ডিসেম্বর ওয়েভ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে খুলনায় অনুষ্ঠিত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কনসালটেশন মিটিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এডুকেশন আউট লাউড (ইওএল) প্রকল্পের আওতায় এই সভা হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মীর আলীফ রেজা। আলোচনায় ছিলেন খানজাহান আলী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রোমানা ইয়াসমিন, স্ট্রিট চাইল্ডের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমতিয়াজ হৃদয়, আইআরভির প্রধান নির্বাহী মেরিনা আক্তার যূথী, নবলোকের প্রোগ্রাম প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান সেতু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ও মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লিপি আমিনা।
অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বঙ্গবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন, ছায়াবৃক্ষের মাহবুব আলম বাদশা, নুরুন্নাহার হিরা প্রমুখ।
সভায় ১০ দফা সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং বরাদ্দ করা অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের ক্লাসে নিয়মিতকরণে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, শিক্ষার গুণগত মান অর্জনে শ্রেণির পাঠদান শ্রেণিতেই সম্পন্ন করা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা, পাঠ্যপুস্তকসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও বিতরণ করা, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় চালু করা এবং গুণগত শিক্ষার মানোন্নয়নে নীতিনির্ধারক, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সব অংশীজনের মতামতের আলোকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
অনুষ্ঠানে অভিভাবক মাহবুব আলম বাদশা বলেন, এখনকার সন্তানরা মোবাইল ব্যবহারে অভিভাবকদের চেয়েও জ্ঞানী। কিন্তু পড়াশোনায় পিছিয়ে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন দরকার, সৃষ্টিমূলক শিক্ষা কারিকুলাম প্রয়োজন।
বঙ্গবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখনকার শিক্ষা কারিকুলাম হলো আমি কী জানি সেটা নয় বরং আমি কী পারি, সেটাই দেখা। কোচিং শিক্ষা এ জায়গায় নেই। তাই কোচিং নয়, শিক্ষার্থীর পারাকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাকে নিজ থেকে গড়তে দিতে হবে।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লিপি আমিনা জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার ৪-এর অংশ হিসেবে শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে।
প্রস্তাবিত শিক্ষা কারিকুলাম প্রসঙ্গে খানজাহান আলী থানার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রোমানা ইয়াসমিন বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে টিকে থাকতে হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের যুব সমাজ যাতে নিজেদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারে, সে জন্যই নতুন কারিকুলামের সূচনা হতে যাচ্ছে। যার সুফল পেতে একটু সময় নিতে হবে। অভিভাবকদের সচেনতা সৃষ্টিতে ২০২৪ সালে খুলনায় শিক্ষা মেলার আয়োজন হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কোচিং অভিভাবকদের অতি উৎসাহের ফল। কোচিং প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য, কমিউনিকেটিং অ্যান্ড কোলাবোরেটিং ফর চেঞ্জ প্রকল্পের আওতায় এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে। ২০২১ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালে জরিপ সম্পন্ন হয়। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় খুলনার ৩৬টি গ্রাম ও রাজশাহীর ৫২টি গ্রামে এ জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপের আওতায় আসা ১ হাজার ৫৩৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে খুলনার রয়েছে ৭০০ জন। এসব শিক্ষার্থীকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জরিপকালে খুলনার ৯টি উপজেলার ৩৬টি গ্রামের ৭২০টি পরিবারের সঙ্গে জরিপকারীরা সংযোগ স্থাপন করেন। সামগ্রিকভাবে খুলনা ও রাজশাহীর ৮৮টি গ্রামের ১ হাজার ৭৬০টি পরিবার ও ১ হাজার ৫৩৩ জন শিক্ষার্থী এ মূল্যায়নের আওতায় আসে।
শিক্ষার গুণগত মান নির্ণয়ে ওয়েভ ফাউন্ডেশন খুলনার দিঘলিয়া, কয়রা, পাইকগাছা, ফুলতলা ও রূপসায় সম্প্রতি এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে আর্থিক সহযোগিতা করে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা স্ট্রিট চাইল্ড ইউকে এবং অক্সফাম আইবিআইএস।