X
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
৩০ মাঘ ১৪৩১

‘গত কোরবানির পর এবার ঈদে গরুর মাংস খেয়েছি, রাখবো আর কী’

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
১৮ জুন ২০২৪, ১৬:০২আপডেট : ১৮ জুন ২০২৪, ১৬:০২

মুসলমানদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদের অন্যতম বিষয় হলো কোরবানি বা ত্যাগ। আল্লাহর খুশির উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা বিভিন্ন পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-অসহায়দের মাঝে এবং এক ভাগ আত্মীয়দের মাঝে বিলিয়ে দেন। কোরবানির মাংসের বিলিবণ্টনে এলাকাভেদে নিয়মে ভিন্নতা রয়েছে।

সাতক্ষীরা শহর এবং উপকূল এলাকায় যে সকল সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা কোরবানি করে থাকেন তারা সেই কোরবানির মাংসগুলো পার্শ্ববর্তী মসজিদে দিয়ে আসেন। মসজিদের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা মাংসগুলো একজায়গায় করে সেগুলোকে পরিবারের সদস্য অনুযায়ী বণ্টন করে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঈদের দিন সাতক্ষীরা শহরে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করার জন্য আসেন এবং দলবেঁধে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেন।

সাতক্ষীরা উপকূলের গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনীসহ একাধিক এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই এলাকায় কোরবানি দেওয়ার হার কমেছে ৩০ শতাংশ। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর অনেক মানুষ কোরবানি করেননি। বিগত বছরগুলোতে ১০০ জন কোরবানি করলে এ বছর ৭০ জন কোরবানি করেছেন।

সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপকূল এলাকার গাবুরা ইউনিয়নের জামিলা খাতুন বলেন, ‘গত বছর কোরবানিতে মাংস খেয়েছিলাম। আর এ বছর কোরবানিতে মসজিদ থেকে ১ কেজির একটু বেশি মাংস পেয়েছি। কী আর সংরক্ষণ করবো! পরিবারের সদস্য পাঁচ জন; সে হিসেবে এই মাংসটুকু আমাকে দিয়েছে। যা পেয়েছি, তা রান্না করে খেয়ে ফেলেছি। এই এলাকায় যারা বড়লোক আছেন তাদের ফ্রিজ আছে। তারা কোরবানি করে মাংস ফ্রিজে রাখেন। যাদের ফ্রিজ নাই তারা পাশে কারও বাড়িতে রেখে আসেন। আর গরিব লোকদের সেরকম মাংস হয় না যে ফ্রিজে রাখতে হবে। আর অল্প কিছু হলেও তা রান্না করে দু-একদিনেই তারা তা খেয়ে ফেলে।’

গাবুরা ইউনিয়নের গাইন বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, ‘এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন গরিব হয়ে গেছে। যাদের কোরবানি দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে, তাদের বাড়িতে ফ্রিজ আছে। অনেকে প্রতিবেশীর বাড়ির ফ্রিজে রেখে আসেন। আর দুস্থ-গরিব মানুষের মাংস কিনে খাওয়া স্বপ্নের মতন ব্যাপার। কোরবানির সময় মসজিদ থেকে যে মাংস দেওয়া হয় সেটুকু তারা রান্না করে খেয়ে ফেলেন। তাদের সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ গত বছর কোরবানিতে মাংস খেয়েছিল আর এ বছর খাচ্ছে।’

একই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকায় একসময় ধনী মানুষদের বসবাস ছিল। প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। যে সকল মানুষ সামর্থ্যবান ছিল নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তারা তাদের সম্পদ হারিয়ে আজ নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অনেক উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বর্তমানে নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডুমুরিয়া তরফদার বাড়ি জামে মসজিদের পক্ষ থেকে ১০০  পরিবারের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়েছে। যে সকল সামর্থ্যবান ব্যক্তি কোরবানি করে থাকেন তারা মসজিদে দিয়ে যান। সেই মাংসগুলো একজায়গায় করে তালিকা করে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অনেকে মসজিদে এসে তাদের অংশ নিয়ে গেছেন। মাথাপিছু ২২৫ গ্রাম করে মাংস দেওয়া হয়েছে সে হিসেবে পাঁচ জন থাকলে এক কেজি করে মাংস পেয়েছে। সেগুলো তো রান্নাবান্না করে খেয়ে ফেলেছে তারা। তাই তাদের সংরক্ষণের কোনও প্রয়োজন পড়েনি। এর চেয়ে যারা একটু বেশি পেয়েছে তারা হয়তো রান্না করে দু-একদিন দিন রেখে খাবে।’

সাতক্ষীরা পৌরসভার রাজারবাগান এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ঈদুল আজহার দিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ শহরে আসেন। এসে বিভিন্ন এলাকায় যারা কোরবানি করেছে তাদের বাড়িতে গিয়ে মাংস সংগ্রহ করেন। অনেক মানুষ একসঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন বাড়িতে যান। এরপর মাংস সংগ্রহ করে তারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যান।’

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, ‘এই এলাকা দুর্যোগপ্রবণ। প্রতিবছর কোনও না কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানে আঘাত হানে। অনেকের কাজকর্ম নেই। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালে মাছের ঘের ভেসে গেছে। সেজন্য এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোরবানি করতে পারেন না। খুবই কম মানুষ কোরবানি দিতে পারে। তাদের বাড়িতে ফ্রিজ আছে তারা সেখানেই মাংস সংরক্ষণ করে রাখেন। আর গরিব-অসহায় মানুষ তারা যেটুকু মাংস পায় সেগুলো রান্না করে খেয়ে ফেলে। তাদের সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না।’

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
বিজিবি-বিএসএফের মানবিকতায় শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখলেন শরিফা
সাতক্ষীরায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো শেখ মুজিবের একাধিক ম্যুরাল
হত্যা মামলায় কলেজের অধ্যক্ষ গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি উদ্বেগজনক: ইউনিসেফ বাংলাদেশ
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি উদ্বেগজনক: ইউনিসেফ বাংলাদেশ
দীপু মনির ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ
দীপু মনির ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ
সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পুলিশের ধাওয়া
সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পুলিশের ধাওয়া
আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় জামায়াত
আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় জামায়াত
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনে জরিপ: যা লিখছেন সাধারণ মানুষ
শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনে জরিপ: যা লিখছেন সাধারণ মানুষ
‌‘হেফাজতে ইসলামের আপত্তিতে’ লালন স্মরণোৎসব বন্ধ
‌‘হেফাজতে ইসলামের আপত্তিতে’ লালন স্মরণোৎসব বন্ধ
তোপের মুখে অফিস ছাড়লেন ইউএনও
তোপের মুখে অফিস ছাড়লেন ইউএনও
৩২ নম্বরে বুলডোজারে উঠে স্লোগান দিয়েছি, ছাত্রলীগের প্রথম আক্রোশের শিকার আমি
সংবাদ সম্মেলনে কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি৩২ নম্বরে বুলডোজারে উঠে স্লোগান দিয়েছি, ছাত্রলীগের প্রথম আক্রোশের শিকার আমি
জাতিসংঘ মিশনে মনোনীত হবেন না র‍্যাব, ডিজিএফআই বা ডিবি সদস্য
জাতিসংঘ মিশনে মনোনীত হবেন না র‍্যাব, ডিজিএফআই বা ডিবি সদস্য