কুষ্টিয়ার মিরপুরে পদ্মায় আবারও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের মির্জানগর এলাকায় পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে জাতীয় গ্রিডের দ্বিতীয় নম্বর বৈদ্যুতিক টাওয়ার পোল। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আবাদি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক।
এর আগে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পদ্মা নদীতে তলিয়ে যায় পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশের (পিএলসি) ১ লাখ ৩২ কেভি একটি টাওয়ার পোল। গত এক সপ্তাহে মিরপুর উপজেলার সাহেবনগর, মির্জানগর, তালবাড়িয়া এলাকায় প্রায় ১০০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পানির তোড়ে হঠাৎই তলিয়ে যায় জাতীয় গ্রিডের ২ নম্বর বৈদ্যুতিক টাওয়ার পোল। পানির তোড়ে তলিয়ে যাচ্ছে একরের পর একর ফসলি জমি। স্থানীয় মাদ্রাসা ও বসতবাড়িও হুমকির মুখে পড়েছে। এর আগে আরও একটি বৈদ্যুতিক টাওয়ার পোল তলিয়ে যায় পানির তোড়ে। অব্যাহত ভাঙনে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকার হাজারো মানুষ।
মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ইসাহক জানান, ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বেশ কয়েক বিঘা জমি। বসতবাড়িই এখন সম্বল। যেভাবে ভাঙছে নদী, তাতে শেষ সম্বল বসতবাড়ি যেকোনও সময় বিলীন হয়ে যাবে।
একই এলাকার সুমনা খাতুন বলেন, ‘সহায়-সম্বল বলতে বাড়িটুকুই। জমি জায়গা যা ছিল তা আগেই নদী কেড়ে নিয়েছে। বাড়িটুকু হারালে পরিবার নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো?’
বহলবাড়িয়া জামিউল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ জুয়েল জানান, মাদ্রাসার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে পদ্মা নদী। যেভাবে ভাঙছে তাতে যেকোনও মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে মাদ্রাসাটি। এ নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে, শনিবার দুপুরে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।
স্থানীয় পদ্মা নদী রক্ষা কমিটির নেতা মুফতি ইয়াকুব বিন আজমল বলেন, ‘পদ্মার পানি কমার কারণে সম্প্রতি ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পদ্মা নদীতে তলিয়ে গেছে জাতীয় গ্রিডের দ্বিতীয় নম্বর বৈদ্যুতিক টাওয়ার পোল। হুমকির মুখে রয়েছে স্থানীয় সাহেবনগর জামিউল মাদ্রাসার ভবনটি।’
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে ভাঙনও তীব্র হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব এলাকায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে সেই এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পানি কমলেই কাজ শুরু করা হবে।