X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘হাটে বসে নিজের পণ্য বিক্রিতে লজ্জা নেই’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
১৬ মে ২০২২, ১৮:৩৫আপডেট : ১৬ মে ২০২২, ১৮:৩৫

সম্প্রতি গ্রামের হাটে কচুর লতি বিক্রি করে আলোচনায় আসেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রামের হাটে বসে তার লতি বিক্রির ছবি ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক প্রিন্স বলেন, ‘হাটে বসে নিজের উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে কোনও লজ্জা নেই। এতে অন্য উদ্যোক্তারা আরও অনুপ্রাণিত হবে। তরুণরা উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হবে। 

স্থানীয়রা জানান, ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে রয়েছে বাবুলের বাজার। সম্প্রতি সেই বাজারে নিজের খামারে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করছিলেন ড. প্রিন্স। ওই মুহূর্তের কয়েকটি ছবি তুলে রাখেন তারই কর্মচারী আল আমিন। পরে হৃদয় নামে তার আরেক কর্মচারী ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেন। 

সেই পোস্ট প্রিন্স শেয়ার করে কিষাণ কৃষি উদ্যোগ নামের একটি আইডিতে। পোস্ট করে  প্রিন্স লিখেন, ‘আজ স্থানীয় বাজারে ১৬ কেজি কচুর লতি বিক্রি করলাম, কেজি ৫০ টাকা। বাজারের সবচেয়ে দামি সবজি এখন। পাইকার বলেছিল ৪০ টাকা, দিই নাই। তবে লতির সম্ভবত জাত পাত আছে, আরেকটু মোটা সেগুলো একটু কম। যদিও তিন জনের কাছ থেকে বাজার দামের থেকেও কম নিয়েছি, কারণ তাদের কাছে লতি কেনার তেমন টাকা ছিল না।’ এই পোস্টে মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ছবির বিষয়ে ড. প্রিন্স বলেন, ঈদের পর থেকে অনেক শ্রমিকই ছুটিতে আছে। সেজন্য নিজেই স্থানীয় বাজারে ১৬ কেজি কচুর লতি নিয়ে যাই বিক্রি করতে। প্রথমে পাইকার ৪০ টাকা কেজি দরে কিনতে চেয়েছিল, কিন্তু অন্যদের মতো সেখানে বসে থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। 

প্রিন্স মনে করেন, নিজের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই। এতে উদ্যোক্তারা আরও অনুপ্রাণিত হবে। তরুণরা উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হবে।

প্রিন্স জানান, তাদের বাড়ি বরিশালে। তার বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় আর্মি কলোনিতে বড় হয়েছেন তিনি। ২০০০ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ ডিগ্রি নেন ২০০৬ সালে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হরিপদ ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে নেন পিএইচডি ডিগ্রি। বর্তমানে বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. প্রিন্স। পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও কৃষিকে ভালোবেসে ২০১৪ সালে তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিমি দূরে রাঙামাটিয়া ইউনিয়নে হাতিলেইট গ্রামে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন। ৮ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘কিষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নামে একটি খামার।

তার বাগানে ড্রাগন ফলের তিন প্রজাতিসহ বিভিন্ন ফলের পাঁচ হাজার গাছ আছে। রয়েছে মাহালিশা, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বাউ-৪, কাঁচামিঠা, তাইওয়া গ্রিন, কাটিমন, পালমার, মল্লিকাসহ ১০ প্রজাতির আম, চায়না থ্রি, মঙ্গলবারিসহ তিন প্রজাতের লিচু, মিসরীয় শরিফা, স্ট্রবেরি, চেরি, থাই পেয়ারা, আম, লেবু, জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা, সফেদা, আতাফল, কদবেল, আমলকি, ডেউয়া, ডুমুর, কাঠবাদাম, জামরুল, থাই জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা ও কলা। দেশি-বিদেশি পাঁচ হাজার ফলগাছের একটি নার্সারিও রয়েছে তার। 

ড. প্রিন্স বলেন, আমাদের কৃষিজমির সংখ্যা কমছে। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। এ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে কৃষির সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ার বিকল্প নেই। সেই চিন্তা থেকেই বাগান করি। প্রয়াত শ্বশুরের কাছ থেকে কৃষির আদ্যোপান্ত হাতেকলমে শিখেছি। তিনি একজন স্কুলশিক্ষক হলেও কৃষিতে খুব পারদর্শী ছিলেন। 

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পরিকল্পিত একটি ফলের বাগান গড়তে সময় লাগে কমপক্ষে সাত থেকে আট বছর। ‘কিষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ বাগানটির বয়স হয়েছে সাত বছরেরও বেশি। আমি নিজেকে এখনও সফল মনে করি না। কৃষিতে সফলতা আসবে, তবে সেটি ধীরে। উদ্যোক্তাকে অভিজ্ঞ হতে হবে।    

ড. প্রিন্স বলেন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফল আবাদ আমার লক্ষ্য। বাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে নিজের উৎপাদিত কেঁচো সার ও জৈব সার ব্যবহার করি। ফলগাছে পোকামাকড় নিধনে বেশি ব্যবহার করি বিভিন্ন রকমের ফাঁদ।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি ভালো কৃষি উদ্যোক্তা হতে চান এবং টিকে থাকতে চান, তাকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। নিজের পণ্য নিজেকেই বিক্রি করতে হবে। অন্যের ওপর ভরসা করে সফল হওয়া যাবে না। 

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএনপির ৭ আইনজীবীর আদালত অবমাননার বিষয়ে আদেশ বুধবার
বিএনপির ৭ আইনজীবীর আদালত অবমাননার বিষয়ে আদেশ বুধবার
২০১৬ সালের নির্বাচনে দুর্নীতি করেছিলেন ট্রাম্প: প্রসিকিউটর
ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার বিচার২০১৬ সালের নির্বাচনে দুর্নীতি করেছিলেন ট্রাম্প: প্রসিকিউটর
যে পুরস্কার জিতে ফেদেরারকে ছুঁলেন জোকোভিচ 
লরিয়াস অ্যাওয়ার্ড যে পুরস্কার জিতে ফেদেরারকে ছুঁলেন জোকোভিচ 
একাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’
একাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’
সর্বাধিক পঠিত
সিলিং ফ্যান ও এসি কি একসঙ্গে চালানো যাবে?
সিলিং ফ্যান ও এসি কি একসঙ্গে চালানো যাবে?
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস