X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন

সার্টিফিকেট সংরক্ষণে নেই, তাই হলফনামায় ‘স্বশিক্ষিত’

আতাউর রহমান জুয়েল, ময়মনসিংহ
০৩ মার্চ ২০২৪, ২০:০২আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪, ২০:০৬

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচ জন। এর মধ্যে তিন জন উচ্চশিক্ষিত হলেও দুজন স্বশিক্ষিত। তবে তাদের কারও বিরুদ্ধেই মামলা নেই। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে তিন জন আওয়ামী লীগের, একজন জাতীয় পার্টির, আরেকজন নতুন মুখ। তারা হলেন—বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (দেয়ালঘড়ি), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া), শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাদেকুল হক খান টজু (হাতি), কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. মো. রেজাউল হক (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম (লাঙ্গল)। তাদের মধ্যে একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী, একজন বিএসসি পাস, একজন এলএলবি পাস ও বাকি দুজন স্বশিক্ষিত।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মো. ইকরামুল হক টিটু নিজেকে বিএসসি পাস উল্লেখ করেছেন। পেশা দেখিয়েছেন ব্যবসা। আর্থিক দিক দিয়ে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। নগদ আছে এক কোটি ৬৮ লাখ ৫১ হাজার ৮৪২ টাকা। ব্যাংকে জমা সাত কোটি ৭৬ লাখ চার হাজার ৩১৮ টাকা, কোম্পানির শেয়ার আছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬২ হাজার ৪২৪ টাকা। শেয়ার সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় ২৭ লাখ ১১ হাজার ৮৪০ টাকা। নিজের যানবাহনের দাম ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। স্বর্ণ রয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকার। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৩ লাখ ১৯ হাজার ২২৫ টাকা। ইলেকট্রনিকস পণ্য রয়েছে চার লাখ টাকার। আসবাবপত্র রয়েছে দুই লাখ টাকার। কৃষিজমি রয়েছে ৪৬ লাখ ৬০ হাজার ২৫০ টাকার। অন্যান্য খাতে রয়েছে ৭৫ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯২ টাকা। তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। ব্যাংকে ঋণ আছে দুই কোটি ৬২ লাখ ২২ হাজার ৩৩৪ টাকা। 

এহতেশামুল আলম শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে লিখেছেন স্বশিক্ষিত। পেশা দেখিয়েছেন স্টেশনারি সামগ্রী বিক্রেতা। নগদ টাকা আছে চার লাখ ৯৯ হাজার ৫৭০। বাড়ি-দোকান ভাড়া থেকে বছরে আয় দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে বছরে আয় চার লাখ টাকা। শেয়ার-সঞ্চয়পত্রে আমানত নেই। পারিবারিক স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে ১০ তোলা। গাড়ি আছে দুটি। যার দাম ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিকস পণ্য রয়েছে ৫০ হাজার টাকার। আসবাবপত্র রয়েছে ৫০ হাজার টাকার। নিজের নামে চারতলা বাড়ি আছে। কেনার সময়ে এর আর্থিক মূল্য ছিল ১৮ লাখ টাকা। কৃষি ও মৎস্য খাতে বিনিয়োগ নেই। ঢাকা ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখায় কার লোন রয়েছে ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭০ টাকা। তার বিরুদ্ধেও কোনও মামলা নেই।

সাদেকুল হক খান টজু হলফনামায় নিজেকে এলএলবি পাস উল্লেখ করেছেন। পেশা দেখিয়েছেন আইনজীবী। নগদ ৯৪ লাখ ৪১ হাজার ৮৬০ টাকা আছে। রয়েছে ১০ তোলা স্বর্ণ। যা বৈবাহিক সূত্রে পেয়েছেন। ব্যাংকে ঋণ নেই। বাড়ি-দোকান থেকে বছরে আয় ৯০ হাজার টাকা। পেশা থেকে বছরে আয় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। ভূমি বিক্রিতে আয় ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫২০ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৯৭ হাজার ৬৬০ টাকা। আসবাবপত্র রয়েছে এক লাখ টাকার। ইলেকট্রনিকস পণ্য রয়েছে এক লাখ টাকার। নিজের নামে একতলা বাড়ি আছে। যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। কৃষি ও মৎস্য খাতে কোনও বিনিয়োগ নেই। তার বিরুদ্ধেও কোনও মামলা নেই।

শহীদুল ইসলাম হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছেন। পেশা দেখিয়েছেন ব্যবসা। নগদ টাকা আছে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার। কোনও ঋণ নেই। নিজের কোনও স্বর্ণ নেই। ব্যবসা থেকে বছরে আয় তিন লাখ টাকা। ব্যাংকে অর্থ জমা নেই। কৃষি, অকৃষি, বাড়ি-দালান কিছুই নেই। তার বিরুদ্ধেও কোনও মামলা নেই।

ভোটারদের কাছে একেবারেই নতুন মুখ রেজাউল হক শিক্ষায় সবচেয়ে এগিয়ে। হলফনামায় নিজেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী বলে উল্লেখ করেছেন। পেশা দেখিয়েছেন আইনজীবী। পেশা থেকে বছরে আয় চার লাখ ১০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিকস পণ্য ও আসবাবপত্রের মূল্য অজানা উল্লেখ করেছেন। নগদ আছে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ২৩৩ টাকা। ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। যা বৈবাহিক সূত্রে পেয়েছেন। তার কোনও ঋণ নেই।

হলফনামায় স্বশিক্ষিত উল্লেখ করার বিষয়ে মেয়র প্রার্থী এতেশামুল আলম বলেন, ‘আনন্দ মোহন কলেজে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতি করেছি এবং কলেজ সংসদ নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচন করেছিলাম। ইতিহাস বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেছি। তবে অনেক আগের লেখাপড়া বিধায় বাসায় সার্টিফিকেট সংরক্ষণে রাখার সুযোগ হয়নি। এজন্য হলফনামায় স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছি।’

হলফনামায় স্বশিক্ষিত উল্লেখ করা জাতীয় পার্টির নেতা মেয়র প্রার্থী শহীদুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

হলফনামায় উল্লেখ করা প্রার্থীদের সম্পদের হিসাবের বিষয়ে জেলা নাগরিক আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক শিব্বির আহমেদ লিটন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যিনি মেয়র হবেন নগরবাসীর কাছে তার কোনও কিছুই গোপন করা উচিত নয়। সবকিছুই প্রকাশ করা উচিত। তবে প্রার্থীদের হলফনামা কখনও তদন্ত করে দেখা হয় না। এজন্য প্রার্থীরা তথ্য গোপনের সুযোগ পান। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কঠোরভাবে দেখা উচিত।’

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হলফনামায় প্রার্থীদের তথ্য গোপনের কোনও অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রার্থীদের তথ্য গোপনের বিষয়ে কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি।’

প্রসঙ্গত, আগামী ৯ মার্চ দ্বিতীয়বারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।

/এএম/
সম্পর্কিত
লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে আবারও ময়মনসিংহের মেয়র টিটু
কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটিতে ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৬ শতাংশ
ময়মনসিংহ সিটিতে নারী ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো
সর্বশেষ খবর
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে