ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। শহীদ মিনারের বেদির ওপর মালামাল রেখে ব্যবসা করছেন তারা। ব্যবসায়ীসহ ক্রেতারাও বেদিতে উঠছেন জুতা পায়ে। সারাক্ষণ থাকছে নোংরা ও আবর্জনাযুক্ত পরিবেশ। দেখে মনে হবে শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণের কেউ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাকান্দা উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিতে থরে থরে সাজানো তরমুজসহ বিভিন্ন ফল। এ ছাড়া রয়েছে পানের ডালা। শহীদ মিনারের পুরো বেদি ব্যবসায়ীদের দখলে। এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানে যেসব ক্রেতা আসছেন, তারা জুতা পায়ে বেদিতে উঠছেন।
তরমুজ ব্যবসায়ী সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমরা শহীদ মিনারের বেদির ওপরে মালামাল রেখে বেচাকেনা করছি। কখনও প্রশাসনের লোকজন আমাদের বাধা দেয় না। প্রশাসন যদি আমাদের আলাদা জায়গা করে দেয় ব্যবসা করার জন্য, তাহলে এখান থেকে সরে যাবো আমরা।’
আরেক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলেও আমরা শহীদ মিনারের ওপরে দোকান সাজিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছি। সরকার পরিবর্তনের পরও সেভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছি। তবে অনেক ব্যবসায়ী ও ক্রেতা জুতা পায়ে শহীদ মিনারের বেদিতে উঠে যায়। এটি নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখলে ভালো হতো।’
পান ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মালামাল বেদিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। তবে মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করি আমরা। পানের খাঁচা বেদির ওপর সাজিয়ে রাখায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এটি সত্য।’
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আব্দুল মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শহীদ মিনারের কাছে আসলেই এর পরিবেশ দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। শহীদ মিনারকে এভাবে অপমান করার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। এসব দেখার জন্যই কী ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। অনেকের রক্তের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষা পেয়েছিলাম। শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা শহীদ মিনারের এমন বেহাল অবস্থা ভাবা যায় না। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাঝে দেশপ্রেম থাকলে শহীদ মিনারের এমন অপমান হতো না। দ্রুত শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সম্মানের জায়গায় ফিরে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’
তারাকান্দা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই শহীদ মিনারের এমন পরিস্থিতি। এই শহীদ মিনার অন্যত্র স্থানান্তর করা গেলে এর পবিত্রতা ধরে রাখা সম্ভব। এ বিষয়ে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে সবচেয়ে ভালো হয়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিগগিরই শহীদ মিনার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। যারা শহীদ মিনারকে অপমান করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’