X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জমে উঠেছে দিনাজপুরের লিচু বাজার, দামও নাগালে

দিনাজপুর প্রতিনিধি
৩০ মে ২০১৬, ১১:০০আপডেট : ৩০ মে ২০১৬, ১১:০০
image

লিচুর বাজার

সুস্বাদু ও দেশব্যাপী খ্যাত দিনাজপুরের লিচুর জমজমাট বাজার শুরু হয়েছে। তবে দাম নিয়ে কৃষক-ব্যবসায়ীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কৃষকরা বলছেন গত বছরের তুলনায় এবারে লিচুর দাম অনেক কম। আর ব্যবসায়ী কিংবা আড়তদাররা বলছেন, লিচুর আকার ও গুণগত দিক দিয়ে এবারে লিচুর দাম বেশি। তবে কৃষিবিদরা বলছেন, প্রচণ্ড খরার কারণে এবারে লিচু ছোট হওয়ায় দাম কম, তাছাড়া এবারে লিচুতে মোটাতাজাকরণ ওষুধ তেমনটি ব্যবহার হয়নি।

মধুমাসের ফল হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের লিচু দেশব্যাপী খ্যাত। অনেকে এই জেলাকে লিচুর রাজ্য হিসেবে অভিহিত করে। আর এ জেলার লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাঁঠালি উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছর এ জেলা থেকে লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আর বেদেনা জাতের লিচু বিদেশেও রফতানি হয়।

এদিকে লিচু লাভবান ফল হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে লিচুর আবাদ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত ২০০৯ সালে লিচু চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর, ২০১০ সালে ১ হাজার ৭৮০ হেক্টর, ২০১১ সালে ১ হাজার ৯৬৫ হেক্টর। ২০১২ সালে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর।

লিচুর বাজার

কৃষি বিভাগ দুই বছর কোনও জরিপ না চালালেও ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে এবং চলতি বছরে ৪ হাজার ১৮৩ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে।  

সূত্রটি জানায়, এ বছরে দিনাজপুর জেলায় ৪ হাজার ১৮৩ হেক্টর জমির ৫ হাজার ২৯৮টি বাগানে ৬ লাখ ৪৫টি গাছে লিচু উৎপাদন হচ্ছে। এ পরিমাণ গাছ থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন লিচু। আর একেকটি গাছে গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার লিচু ধরে।

প্রতি বছরই মধু মাসের আগমনে খুশি হয় দিনাজপুরের লিচু চাষি, বাগানি ও ব্যবসায়ীরা তথা সারাদেশের মানুষ। তবে এবারে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে শুরুতে লিচুতে দেখা দেয় খোসা পঁচা ও ফেটে যাওয়া রোগ।  বালাইনাশক স্প্রে করেও এর প্রতিকার পায়নি কৃষকরা। এতে করে দামের ব্যাপারে এবারে লিচুতে ক্ষতির আশঙ্কা ছিল কৃষকদের। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছিল ফরমালিন আতঙ্ক। তবে সেসব আতঙ্ক কাটিয়ে বাজারে পুরোদমে লিচু আনতে শুরু করেছে কৃষক ও বাগান ব্যবসায়ীরা। আর ফরমালিনের যে আতঙ্ক ছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরীক্ষা করেও তা এবারে পাওয়া যায়নি।

বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ

দিনাজপুরের নিউ মার্কেট এলাকায় লিচু বিক্রি করতে আসা কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান,খরার কবলে পড়ে এবারে লিচুর দানা ছোট হয়েছে। পাশাপাশি লিচুতে দেখা দিয়েছিল পচা ও ফেটে যাওয়া রোগ। দামের বিষয়ে শঙ্কা থাকলেও ভালো দাম পাচ্ছেন তারা।

কিসামত মাধবপুর থেকে লিচু বিক্রি করতে আসা কৃষক কুদ্দুস আলী ও মোবারক শাহ জানান, লিচুর মোটামুটি দাম ভালো। তবে আরও দাম বেশি হওয়া উচিৎ ছিল, কারণ এবারে লিচু উৎপাদন করতে বেশি খরচ হয়েছে। তারা জানান, খরার কারণে পানি সেচ ও সারের ব্যবহার বেশি হয়েছে। যাতে করে প্রতিটি লিচু গাছে প্রায় ৫ থেকে ৭শ’ টাকা বেশি খরচ হয়েছে।

দিনাজপুরের লিচু বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ওঠা বোম্বাই জাতের লিচু প্রতি একশ’টি ১৫০ থেকে ২২০ টাকা, মাদ্রাজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, বেদেনা লিচু ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, চায়না থ্রি ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাধববাটি থেকে আসা লিচু বাগান ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম জানান, বাজারে লিচুর দাম প্রতিদিনই ওঠানামা করছে। যার ফলে তাদেরকে কোনও দিন লাভ আবার কোনওদিন আসল নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। তবে লোকসানের যে আশঙ্কা ছিল তা নেই।

লিচু

লিচু কিনতে আসা মিজানুর রহমান লুলু জানান, ঢাকায় আত্মীয় ও ছেলেকে পাঠানোর জন্য লিচু কিনতে এসেছেন তিনি। দাম মোটামুটি ভালো। তবে  সবচেয়ে ভালো কথা যে, এবারে লিচুতে ভেজাল পায়নি প্রশাসন। 

স্থানীয় কিংবা ঢাকা, চট্টগ্রাম বিভিন্ন স্থান থেকে আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে এবার অনেক লিচু আবাদ হয়েছে। যার ফলে লিচুর দাম কম-যার প্রভাব পড়ছে দিনাজপুরের বাজারে। তবে তুলনামূলকভাবে গত বছরের চেয়ে এবারে লিচুর বাজার দাম বেশি।

ময়মনসিংহ থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী শরিফ উদ্দিন জানান, এবারে রংপুর, নওগাঁ, পাবনা, নাটোরেও লিচু আবাদ হয়েছে। যার ফলে এবার দাম কিছুটা কম। তবে তিনি জানান,সব জায়গার চেয়ে দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা অনেক বেশি।

ঢাকা থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী দিলদার আলী জানান, দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা সবখানেই বেশি। লাভ কম হলেও ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য এখানের লিচুর ব্যবসা করেন।

তিনি আরও জানান, এ বছরে লিচুর ব্যবসা করতে কোনও শঙ্কা নেই তার।  তাছাড়া আবহাওয়াও মোটামুটি ভালো বিরাজ করছে।

দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরুল আহসান জানান, এবারে খরা আবহাওয়ার কারণে লিচুর দানা কম হয়েছে। তাছাড়া এবারে লিচু মোটাতাজাকরণের হরমোন ব্যবহার না হওয়ায় আকারে লিচু ছোট হয়েছে। যাতে করে আকার অনুযায়ী দাম কম। তাছাড়া রমজান মাসে লিচুর চাহিদা কমে যাবে এই অজুহাতে দাম কম হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এবারে আংশিক হলেও আগামী বছর পুরোপুরিভাবে কোনও প্রকার কীটনাশক ও হরমোন ছাড়াই লিচু আবাদ হবে, যেটি মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য একটি ভালো দিক।

 আরও পড়ুন: সময় কাটছে না চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহী ভাল্লুকদের

/এআর/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার