২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে নিহত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু। নিহত সেন্টু বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের মৃত আফছার উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। তার লাশ রামারপোল গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। নেত্রীকে বাঁচাতে এক লাফে মঞ্চে উঠেছিলেন সেন্টু, বললেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও সেন্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাজীব হোসেন ভূঁইয়া রাজু।
সেদিনকার ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজীব হোসেন ভূঁইয়া রাজু বলেন, সমাবেশ চলাকালীন সময় আমিসহ সেন্টু ভাই মঞ্চের সামনে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে যখন গ্রেনেড হামলা শুরু হয়, তখন সেন্টু ভাই প্রিয় নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) রক্ষা করতে এক লাফে মঞ্চে উঠে অন্যদের সাথে নেত্রীকে ঘিরে রাখেন। এক পর্যায়ে আমি (রাজু) দৌড়ে নিরাপদে আশ্রয় নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে সেন্টু ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়।
রাজু আরও বলেন, গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে মুলাদীর রামারপোল গ্রামে শহীদ সেন্টু স্মৃতি সংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ২১ আগস্ট সভা ও সমাবেশ করে যাচ্ছি। এ বছর ২১ আগস্ট রবিবার উপজেলা আ. লীগের উদ্যোগে সেন্টুর বাড়িতে দিনভর কোরানখানি, স্মরণসভা, মিলাদ মাহফিল ও কাঙালি ভোজ অনুষ্ঠিত হবে।
সেন্টুর বন্ধু রাজু বলেন,ছাত্রজীবন থেকেই সেন্টু আ. লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আমরা শহীদ সেন্টুর খুনীদের ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী এবং এর পরিকল্পনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
কালা সেন্টুর শ্বশুর মুলাদী উপজেলার রামারপোল এ. এম উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল হাসানাত মৃধা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২১ আগস্ট সেন্টু আ’লীগের জনসভায় যায়। স্টেজের কাছে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনছিল। সভাস্থলে গ্রেনেড বিস্ফোরণ হলে সেন্টুর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। শরীর থেকে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বের করতে অপারেশন থিয়েটারেও নেওয়া হয়। কিন্তু অপারেশন চলার সময় ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে সে মারা যায়।
সেন্টুর স্ত্রী আইরিন সুলতানা বেবী বলেন, আমার স্বামীর হত্যাকারীদের শাস্তি চাই।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সেন্টুর স্ত্রী বেবী আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে ২১ আগস্টের স্মরণ সভায় কেন্দ্রীয় আ’লীগের দাওয়াত পেয়ে আমি, আমার একমাত্র কন্যা আফসানা আহম্মেদ রিদি, শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্যরা শোকসভায় গিয়ে বসার জায়গাও পাইনি। একারণে আমরা বৃদ্ধা শাশুড়ি গত ২ বছর ধরে শোকসভায় যান না। আমাদের বসার ব্যবস্থাটুকুও কেউ করে দেন না।
তিনি বলেন,প্রতিবছর ২১ আগস্ট এলে সেন্টুর পরিবারের প্রতি দায়সাড়াভাবে সমবেদনা জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মিডিয়াকর্মী ব্যতীত তার পরিবারের খোঁজ নেন না কেউ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে নিহতদের পরিবারগুলোর সদস্যরা যেন সাক্ষাৎ করতে পারেন, সেব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান সেন্টুর স্ত্রী আইরিন সুলতানা বেবী।
সেন্টুর বাবা আফছার উদ্দিন হাওলাদার চাকুরি করতেন বরিশাল সিঅ্যান্ডবিতে। সে সুবাদে সেন্টু বরিশাল জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময় শহিদুল্লাহ হলে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন।
এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয় যেভাবে
গ্রেনেড হামলার এক যুগ: আর মাত্র দুই সাক্ষী বাকি
কুদ্দুসের পরিবার পালিয়েছিল ৬ মাস