রংপুরের চিনিকলের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর ৯ মাস পার হলেও এখন পুনর্বাসিত হননি গাইবান্ধার সাঁওতালরা। এখনও তাদের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। প্রশাসন পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও এখনও নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনও পদক্ষেপ, মাঝে-মধ্যে কিছু ত্রাণ জুটলেও বেশিরভাগ দিন কাটে অর্ধাহার-অনাহারে। ফলে বঞ্চনার গল্প যেন ফুরোচ্ছেই না সমতলের আদিতম এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষগুলোর।
রংপুর চিনিকল প্রতিষ্ঠার আগে শত শত বছর ধরেই স্থানীয়দের সঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করছিলেন সান্তাল বা সাঁওতালরা। তবে ১৯৬২ সালে চিনিকলটি প্রতিষ্ঠার সময় বেশ কিছু শর্তে এসব জমি অধিগ্রহণ করেছিল সরকার। এরমধ্যে চিনিকলের পতিত জমিগুলোতে তাদের থাকতে দেওয়াসহ চাষবাষের কথাও ছিল। তবে পরবর্তীতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ এসব শর্ত না মানায় জমি উদ্ধারের দাবিতে ৯ মাস আগে স্থানীয়দের সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছিলেন সাঁওতালরা। বিষয়টির চূড়ান্ত মীমাংসা এখনও হয়নি, তবে উচ্ছেদ হয়ে গেছে তারা। এখন তারা ঠাঁই নিয়েছেন মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ার সাঁওতাল পল্লিতে। সেখানেই খেয়ে না খেয়ে সাঁওতালরা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে আছেন। এছাড়া উচ্ছেদ ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে অনেক পুরুষ কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছেন না।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খড় ও ছোট ছোট ত্রিপলের (তাবু) নিচে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর কেউ ঘরে, কেউ ঘরের উঠানে, কেউ রাস্তায় বসে আছেন। অনেকে আশপাশের বাড়িতে ঝি এর কাজ করছেন। আবার কেউ মাঠে-ঘাটে খড় কুড়াচ্ছেন। তবে এসব নিঃস্ব ও কর্মহীন মানুষের এখন প্রয়োজন স্থায়ী ঘরসহ কর্মের।
আমেনা হেমরন নামে এক নারী সাঁওতাল বলেন, ‘৬ নভেম্বরের হামলার ঘটনায় যা ছিল তা শেষ হয়েছে। এখন আমরা একবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এভাবে খেয়ে না খেয়ে ৯ মাস ধরে তাদের দিন কাটছে। পরনের কাপড় আর মাথার ওপর চালের ছাউনি ছাড়া তাদের কিছুই নেই। ঝড়ে বৃষ্টিতে ঘরে চালও উড়ে গেছে দুইবার। তবুও সেই চাল আবার খুঁজে এনে কোনোরকমে থাকতে হচ্ছে’।
কিসকো সরেন বলেন, ‘বাপ-দাদার জমি ফেরত পাওয়ার আশায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। কবে কখন জমি ফেরত পাবেন তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এছাড়া হামলা ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বদলি করা হলেও তাদের বিচার হয়নি। তারা এ হামলা ঘটনার দ্রুত বিচার দেখতে চান’।
পলুস মাস্টার বলেন, ‘এখনও তারা ভয়ে বাইরে যেতে পারেন না। এ কারণে হাতে কাজকর্ম নেই। ফলে স্ত্রী-সন্তানসহ কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে তাও জানা নেই’।
তবে সাঁওতালরা ত্রাণ সহযোগিতা না পেলেও এ অভিযোগ অস্বীকার করেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জহিরুল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া সাঁওতাল পল্লিতে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া সাঁওতাল পরিবারের মাঝে সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত আছে’।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘হামলার ঘটনায় যে দুটি মামলা হয়েছে তা নিয়ে পিবিআই তদন্ত চালাচ্ছে। এছাড়া সাঁওতালদের জীবনমানের উন্নয়ন ও তাদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে’।
/টিএন/