X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতিসৌধ নির্মিত না হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে শহীদদের স্বারক চিহ্নগুলো

নীলফামারী প্রতিনিধি
১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:১৮আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৫৯


ভিত্তি প্রস্তর নির্মিত হলেও হয়নি স্মৃতিসৌধ

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের বধ্যভূমিতে আজও নির্মিত হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। ফলে ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত শহীদদের স্বারক চিহ্নগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। একাধিক বার স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অর্থ বরাদ্ধ, স্থান সংকট ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

স্মৃতিসৌধ নির্মিত না হওয়ার কারণ: জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডিপুটি কমান্ডার কান্তি ভূষণ কুণ্ডু জানান,২০০০ সালে ৯ অক্টোবর শহরের ওয়াপদা মোড়ের সড়ক দ্বীপে মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদ স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের ভিত্তিফলক উম্মোচন করা হয়। এর নামকরণ করা হয় ‘স্বাধীনতা শহীদ স্মৃতি ভাস্কর্য।’ এই নকশা তৈরি করেন ভাস্কর হাবিবা সুলতানা বেলী সরকার। এর আগেও নকশাটি তৈরি করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রধান শিল্প নির্দেশক জিএমএ রাজ্জাক। এতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২ লাখ ৩৭ হাজার  ৩৯৮ টাকা। কাগজে কলমে হিসাব নিকাশ হলেও বাস্তবে তা আজও নির্মিত হয়নি। সর্বশেষ সৈয়দপুর শহরের ক্যান্টনমেন্ট সড়কের ডাক বাংলার বিপরীতে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের ফলক উম্মোচন করা হয় ঘটা করে। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু দিনের মধ্যেই ভিত্তি স্থাপনের সাইন বোর্ডটি চুরি হয়ে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এভাবে বারবার থেমে যাচ্ছে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের কাজ। যে কারণে স্বাধীনতার চেতনার স্বপ্ন আজও স্বপ্নই রয়ে গেছে।

তবে শহীদ ভাস্কর্য স্বাধীনতা স্মৃতি নির্মিত না হলেও ৭১ এর প্রজন্মরা ছোট পরিসরে ‘স্মৃতি অম্লান’ নির্মাণ করেছে। এ ছাড়াও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শিশু পার্কে নিজস্ব উদ্যেগে ও অর্থায়নে ‘শহীদ স্মৃতি ফলক’ ও রেলওয়ে কারখানার অভ্যন্তরে ‘স্মৃতি স্তম্ভ’ নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছে।

৭১ এর প্রজন্মরা ছোট পরিসরে নির্মাণ করে ‘স্মৃতি অম্লান’

মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দপুরের অবস্থা: তখন অন্যান্য জেলার তুলনায় সৈয়দপুর শহরের অবস্থা ছিল একেবারে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। কারণ অন্য জেলার তুলনায় সৈয়দপুরে অবাঙালিদের (উর্দুভাষী) বসবাস ছিল বেশি। ৪৭-এর দেশ ভাগের পর থেকে সৈয়দপুর শহরে বিপুল সংখ্যক ঊর্দুভাষী ভারতের বিহার রাজ্য থেকে এসে এখানে বসতি গড়ে তোলে। বিট্রিশরা সে সময়, রেলওয়ে কারখানায় দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের জন্য তাদের এনে জায়গা দেয়। এর সুবাদে বংশ পরম্পরায় এখানে তাদের বসতি গড়ে উঠে। সে সময় মুক্তিযুদ্ধে পক্ষে অবাঙ্গলিদের সংগঠিত করতে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য শহিদ ডা. জিকুরুল হক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শওকত আলী টুলটুল ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার দেলোয়ার হোসেন বুলবুল।

সে সময়, হানাদার বাহিনী বাঙালিদের আটকে রেখে বিমান বন্দরের মাটি কাটার কাজে লাগিয়ে দেয় এবং বাঙ্গালিদের ওপর চরম জুলুম নির্যাতন চালায়। ওই সময় শহরের বাঙালিরা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে, সে সময় সৈয়দপুর শহরের পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুরের চিরির বন্দর উপজেলার আলোকদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহাতাব বেগ পাকিস্তানী দোসরদের হাত থেকে নিরিহ বাঙালিদের উদ্ধারের জন্য তার ব্যক্তিগত বন্দুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে। কিন্তু শহরে ঢুকার আগেই হানাদার বাহিনী শহরের মিস্ত্রী পাড়া এলাকায় তাকে গুলি করে হত্যা করে। মূলত তিনিই ছিলেন এ অঞ্চলের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দপুরে ঠিক কতজন মানুষ শহীদ হয়েছেন তার সঠিক হিসাব না থাকলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় এ সংখ্যা হাজারের বেশি।

গণহত্যা: জানা যায়, ’৭১ এর ২৩ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনীরা হিন্দু ও মাড়োয়ারি পরিবারের সদস্যদের ভারতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে ট্রেনে করে হলদিবাড়ী এলাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের কমান্ডার ফজলুল হক বলেন, সেদিন ৭১ এর ২৩ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনীরা হিন্দু ও মাড়োয়ারী পরিবারের সদস্যদের ভারতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে ট্রেনে করে হলদিবাড়ী এলাকায় নিয়ে গিয়ে ৩৫০ জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নীলফামারীর সৈয়দপুরে এটি ছিল সবচেয়ে বড় গণহত্যা। এ শহরে এমন অনেক পরিবারও আছে যাদের কেউ বেঁচে নেই।

এতবড় গণহত্যা ও ঘটনা বহুল স্মৃতিকে ধরে রাখতে সৈয়দপুরে আজও নির্মিত হয়নি স্মৃতিসৌধ। কিন্তু স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণের জঠিলতা ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগের কারণে তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

আরও পড়ুন: ৪৪টি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া






/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন