X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত দ্বীপ-সাইফুলের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেতো না’

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
৩০ নভেম্বর ২০১৯, ২০:১০আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৩৪

নিহত দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলাম সাতক্ষীরায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল বলে দাবি করেছে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাদের দাবি, এই দুই সন্ত্রাসী একজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দ্বীপ-সাইফুল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি ও স্থানীয়রা এমন দাবি করেন।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিহত দ্বীপ মুন্সীপাড়ার সোহাগ হত্যা মামলার আসামি। কালীগঞ্জে বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মামলা আছে। এছাড়া দুই জনের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। সাইফুল ইসলাম ও দ্বীপ আজাদ শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল। তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকে ভয়ে মুখ খুলতো না।’

জানতে চাইলে প্রায় একই দাবি করেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানও। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিহত দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তারা এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে, তারা একজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না।’

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, দ্বীপ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবির পক্ষে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। দ্বীপ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছিল। সে  সব সময় পিস্তল নিয়ে ঘুরতো। সাদিক ও মীর মোস্তাক আহমেদ রবির লোক হওয়ায় কেউ কিছু বলার সাহস করতো না। এমপি রবির ছত্রছায়ায় সে বেড়ে উঠেছে।

একাধিক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, দ্বীপকে দিয়ে সাদিক চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ তার সব অপকর্ম করাতো। দ্বীপের কাছে সব সময় অস্ত্র থাকতো। কিছু হলেই সে অস্ত্র বের করে গুলি করার হুমকি দিতো।

এই প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলাম ছাত্রলীগের কর্মী নয়, তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা কখনও ছাত্রলীগের কোনও পদে ছিল না। তারা বিবাহিত। তবে আমার কাছে অনেকে অভিযোগ করেছেন, তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে বেড়াতো।’

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত এই দুই জন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের দেহরক্ষী কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ‘তারা সাদিকের সঙ্গে ঘুরতো, কিন্তু তার দেহরক্ষী কিনা বলতে পারবো না। কে কার দেহরক্ষী রাখবে, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারও কোনও কু-কর্মের দায়ভার জেলা ছাত্রলীগ নেবে না।’

নিহত দ্বীপ আজাদের বাবা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে বিবাহিত নয়। তার বয়স কম। সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশে আমার ডেকোরেটরের ব্যবসা আছে, সে সেখানে বসতো। দোকানটি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমানের বাড়ির সামনে হওয়ায় সেও অনেক সময় এখানে এসে বসতো। আমার ছেলে সন্ত্রাসী কিনা, সেটা আমার জানা নেই। আমার ছেলের মৃত্যুর ব্যাপারে কাউকে দোষারোপ করতে চাচ্ছি না।’

দ্বীপের বাবা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক আমার দ্বীপকে তুলে নিয়ে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর কোনও সন্ধান পাইনি। আজ সকালে একজন ফোন করে বলে বাইপাস সড়কে আপনার ছেলের লাশ পড়ে আছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানের মোবাইলফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘তারা সন্ত্রাসী ছিল না।’ তিনি এই প্রসঙ্গে আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই জন ছাত্রলীগের কর্মী ছিল কিনা, সেটা আমার জানা নেই। এটা ছাত্রলীগ ভালো বলতে পারবে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, সেটাও ভালো জানি না। তবে তাদের দুই জনকে (সাইফুল ইসলাম ও দ্বীপ আজাদ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের সঙ্গে ঘুরতে দেখেছি। যে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

এদিকে, শনিবার দুপুরে শহরের মুনজিতপুর এলাকায় দ্বীপ আজাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। তার লাশ নিতে অপেক্ষা করছে পরিবার।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলাম চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। ৩০ অক্টোবর শ্যামনগর বিকাশের শাখা ব্যবস্থাপকসহ তিন জন সাতক্ষীরার একটি ব্যাংক থেকে ২৬ লাখ টাকা নিয়ে শ্যামনগর ফিরছিলেন। তারা কালীগঞ্জে পৌঁছালে তিন জনের একটি মোটরসাইকেল তাদের গতিরোধ করে ফাঁকা গুলি ছুড়ে টাকা ছিনতাই করে নেয়। এ ব্যাপারে বিকাশের শাখা ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে ১ নভেম্বর অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তদন্তের প্রয়োজনে সাইফুল ইসলাম ও দ্বীপ আজাদকে আটক করি।  তাদের তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস এলাকায় গেলে তাদের সহযোগীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে আমরা পাল্টা গুলি ছুড়ি। তাদের সহযোগীদের বন্দুকের গুলিতে তারা আহত হয়। হাসপাতাল নেওয়ার পথে সাইফুল ও দ্বীপ আজাদ মারা যায়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি চাকু, চার রাউন্ড গুলি, দুটি পিস্তল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলামকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়। পরে মধ্যরাতে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের বকচরা মোড়ে তাদের নিয়ে অভিযানে গেলে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ দাবি করে।

/এনআই/এমএনএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটরসাইকেল বহরে বোমা হামলা
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী