নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২২ মাস পর আদালতে মামলা হয়েছে। থানা পুলিশ দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি নিতে গড়িমসি করায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পর সেখান থেকে নির্দেশ পেয়ে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) মামলার বাদী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৯ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৯শ’ থেকে এক হাজার জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানাকে এফআইআর (এজাহার) হিসেবে গণ্য করার (নথিভুক্ত) নির্দেশ দেন।
অভিযোগ রয়েছে, নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে মেয়রের বিরোধের জের ধরে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়র আইভীর র্যালিতে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বেশ কিছু নেতাকর্মী। এ সময় প্রকাশ্যে বেশ কিছু অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত অস্ত্র উঁচিয়ে মেয়রের র্যালিতে অংশ নেওয়া সুধীজন ও আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের তাড়া করে। এরপরই উভয়পক্ষে সংঘর্ষ ও মেয়রকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে।
মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার জানান, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বিকাল চারটার সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী জনসচেতনতা বাড়াতে একটি র্যালি বের করেন। র্যালিটি নগরীর চাষাঢ়া এলাকার সায়াম প্লাজা মার্কেটের সামনে এলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে মেয়র আইভীকে হত্যার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত কয়েকজন সন্ত্রাসী অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসহ বিপুল সংখ্যক হকারকে সঙ্গে নিয়ে চারদিক থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কাউন্সিলর, সাংবাদিকসহ ৪৩ জন গুরুতর আহত হন। এতে শতাধিক মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মকতা-কর্মচারী ও সঙ্গে থাকা লোকজন মানব ঢাল তৈরি করে মেয়র আইভীর জীবন রক্ষা করেন।
এ ঘটনার ৫ দিন পর ২২ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ একটি অভিযোগ দিলেও পুলিশ সেটি থানায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে জিডি হিসেবে গ্রহণ করে। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনও প্রকার আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ বছরের ১৭ এপ্রিল পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন তিনি।
কিন্তু, তাতেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় মামলার বাদী উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত দ্বৈতবেঞ্চ নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়েরের নির্দেশ দেন। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি (জি এম এ সাত্তার) বুধবার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় চানমারী এলাকার নিয়াজুল ইসলাম খান (৫২), মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম (৪৯), সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল (৪৮), শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন (৪৬), মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন (৩৫), চানমারী এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব (৪২), জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন (৩২), উত্তর চাষাঢ়ার নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির (৫২), ফতুল্লার চঞ্চল মাহমুদসহ (৫২) আরও অজ্ঞাত ৯শ’ থেকে ১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলা ও তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আদালতের নির্দেশে মামলা হয়েছে। আদালত অভিযোগটি থানায় এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এ সংক্রান্ত সংবাদ:
হকার ইস্যুতে শামীম ওসমান ও আইভীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, গুলি ও টিয়ারশেল
নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধ একজনসহ আহত ৬ জন ঢামেকে
না.গঞ্জে পিস্তল হাতে কে এই নিয়াজুল?
কোন আক্রোশে আমার ওপর হামলা: আইভী (ভিডিও)