বরিশালে ভুল প্রশ্নপত্রে এসএসসি’র প্রথমপত্র পরীক্ষা নেওয়ায় নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের হল সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৪ শিক্ষককে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এই পদক্ষেপ নেয়। একইসঙ্গে ওই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা বোর্ড থেকে ৩ সদস্যের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুটি কমিটিকে পরবর্তী ৫ ও ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তকৃত হল সুপার হলেন হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম এবং পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন ওই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাসুদা বেগম,মো. সাইদুজ্জামান এবং সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শাহানাজ পারভীন শিমু ও শেখ জেবুন্নেছা। এদের মধ্যে শেখ জেবুন্নেছা ও মাসুদা বেগম এমপিওভুক্ত এবং শাহনাজা পারভীন শিমু ও মো. সাইদুজ্জামান খণ্ডকালীন শিক্ষক।
এদিকে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার দাসকে প্রধান করে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জোবায়দা নাসরিন। কমিটিকে পরবর্তী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার দাস।
অপরদিকে শিক্ষা বোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছেন বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আব্বাস উদ্দিন এবং দুই সদস্য হলেন বোর্ডের উপ-সচিব আব্দুর রহমান ও সেকশন কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। এই কমিটিকে পরবর্তী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস।
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, এসএসসি পরীক্ষা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্পর্শকাতর পরীক্ষা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট হল সুপার এবং ওই কক্ষের ৪ পরিদর্শক দায়িত্বে অবহেলা,গাফিলতি এবং খামখেয়ালি করেছে। এ কারণে তাৎক্ষণিকভাবে হল সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত এবং অপর ৪ কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষককে চলতি এসএসসি পরীক্ষার সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে এই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া কোনও পরীক্ষার্থী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি’র প্রথম দিন বাংলা প্রথমপত্রের নৈর্ব্যত্তিক পরীক্ষায় হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুটি কক্ষে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি ধরা পড়লে শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া কোনও শিক্ষার্থী যাতে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেই প্রতিশ্রুতি দেন। ওই কেন্দ্রে নগরীর জগদিস সারস্বত গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং অক্সফোর্ড মিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
এর মধ্যে জগদিস সারস্বতের ৪৮ শিক্ষার্থী ভুলপ্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান। তবে অক্সফোর্ড মিশন স্কুলের কতজন শিক্ষার্থী ভুলপ্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, হালিমা খাতুন কেন্দ্রে ক্যাজুয়াল পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নপত্রের ৪টি প্যাকেট পাঠানো হয়েছিলো। কেন্দ্রে দুটি প্যাকেট খোলা হয়েছে,বাকি দুটি প্যাকেট খোলা হয়নি। সে হিসেবে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা কোনোভাবেই ৪০ জনের বেশি হবে না।