নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার (১৫ জুলাই) সকাল ৯টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুইদিন আগেও পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা ১৯৮৯ এর বন্যার ভয়বহতাকে হার মানায়। এছাড়া এখনও পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
ডালিয়া পয়েন্টে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও চর, গ্রাম ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ফলে বানভাসি ও বসতহারা পরিবারগুলো দুর্ভোগে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশিদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ডিমলা উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে, ছয়টি ইউনিয়নে চার দিনের বৃষ্টিপাতে বন্যায় ছয় হাজার ২৭০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীগর্ভে বসতভিটা বিলিন হয়েছে ১৪৭ পরিবারের। ওই পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য নতুন করে ১১০ মেট্রিকটন চাল নগদ ১ লাখ টাকা ও এক হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে।
উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, চাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি গ্রামে নদী ভাঙনে ৮৭ পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, চড়খড়িবাড়ি, পূর্বখড়িবাড়ি এলাকায় ২৪ পরিবার, খালিশা চাপানির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, বাইশপুকুর ও ছোট খাতায় ১৩ পরিবার এবং খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের দাবি ২৩ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এই নিয়ে উপজেলায় ১৪৭ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বানভাসিদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও এই মুহূর্তে শুকনো খাবার বিতরণ জরুরি। সীমিত প্যাকেট দিয়ে খাবারের সমস্যা সমাধান করা কঠিন।
ডিমলা উপজেলার চাতুনামা ও ভেন্ডাবাড়ি গ্রামের বানভাসি শফিয়ার রহমান জানান, প্রতি বছরে এভাবে বন্যায় বাড়ি হারিয়ে পথে বসেছেন তারা, এজন্য স্থায়ী সমাধান জ্বরুরি। ত্রাণ ও শুকনো খাবার দিয়ে জীবন চলে না। আমরা ত্রাণ চাই না, স্থায়ী সমাধান চাই। বন্যার পরে যে ধকল যায় সেটা না দেখলে বোঝা যায় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, এবারের বন্যায় প্রথম দফায় ৩ হাজার ২৪৫, দ্বিতীয় দফায় ৪ হাজার ৮০০ এবং তৃতীয় দফায় তা বেড়ে মোট ৬ হাজার ২৭০ পরিবার পানিবন্দি হয়। এর মধ্যে ১৪৭ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ওইসব বানভাসি মানুষের জন্য ১১০ মেট্রিক টন চাল ও এক লাখ টাকা ও ১০০০ শুকনো খাবারের প্যাকে বরাদ্দ পেয়েছি। ইতোমধ্যে তা স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।