দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত ভার থানা পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে গোয়েন্দায় পুলিশে ন্যস্ত করা হয়েছে। এদিকে, গ্রেফতারকৃত তিন আসামির দুই জন নরিবুল ও সান্টুর ৭ দিনের করে রিমান্ডের আদেশ মঞ্জুর করেছেন বিচারক।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে মামলাটি ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এর আগে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ঘোড়াঘাট থানার পরিদর্শক তদন্ত মমিনুল ইসলাম, আর এখন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি ইমাম জাফর।
এদিকে, আজ শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ৯ মিনিটে আটক ২ আসামি নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমারকে দিনাজপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘোড়াঘাট আমলি আদালত-৭ এর বিচারক শিশির কুমার বসুর আদালতে হাজির করা হয়।
দিনাজপুরের কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন জানান, বিকেলে আটক দুই আসামি নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমারকে আদালতের বিচারকের কাছে সোপর্দ করা হয়। মামলাটি প্রথম থেকে ঘোড়াঘাট থানার পরিদর্শক মোমিনুল ইসলাম তদন্ত করছিলেন। পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে মামলাটি থানা থেকে গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। দিনাজপুর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম জাফর মামলাটির তদন্তভার পেয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি ইমাম জাফর দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ডিবির ওসি ইমাম জাফর জানান, মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আমরা আসামিদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিচারকের নিকট ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। বিচারক দুই আসামির প্রত্যেকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এছাড়াও মামলার প্রধান আসামি আসাদুল ইসলামকে এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হলে তারও বিরুদ্ধে রিমান্ড চাইবো আমরা।
মূল আসামি আসাদুল হাজতে
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় আটককৃত প্রধান আসামি আসাদুল হককে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রংপুর র্যাব-১৩ এর একটি টিম রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা আসাদুলকে নিয়ে এসে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মামলাটির তদন্ত সংস্থা এখন ডিবি হওয়ায় থানা থেকে তাকে দিনাজপুর ডিবি কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল রবিবার তাকে আদালতে উপস্থিত করে রিমান্ডের আবেদন করতে পারেন গেয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা ইমাম জাফর।
উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর ( বুধবার) রাতে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে তাকেসহ তার বাবাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করে র্যাব। বুধবার রাতেই এ ঘটনায় ওয়াহিদা খানমের ভাই বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন। ৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ভোরে এ ঘটনায় প্রথমের আসাদুল ও পরে নবিরুল ও সান্টু নামে মোট তিন জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুল অসুস্থবোধ করলে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকেই শনিবার সন্ধ্যায় তাকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। অপর দুই আসামি নাবিরুল ও সান্টুকে শনিবার ভোররাতেই ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের পর তাদের আদালতে নিলে বিচারক উভয়ের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপর আসামি আসাদুলকে আগামীকাল রবিবার আদালতে হাজির করা হতে পারে। এদিকে এ ঘটনায় হামলাকারীদের সহযোগী সন্দেহে আরও তিনজনকে আটক করেছে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ। এরা হচ্ছে ইউএনওর ওপর হামলার মামলার প্রধান আসামি আসাদুল ইসলামের ভাই আশরাফুল ইসলাম শাওন (৪০), ইউএনওর বাসভবনের মালি সুলতান কবির (৩৭) ও মামলার অন্যতম আসামি সান্টু কুমারের আত্মীয় শ্যামল কুমার (৩৩)। অন্যদিকে, ঘটনায় গুরুতর আহত ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ঢাকায় সফল অস্ত্রোপচার হলেও তিনি এখনও ঝুঁকিমুক্ত নন। তার বাবারও শরীরের নিচের অংশ এখন অসাড় হয়ে আছে।