প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে দুই পাড়ের মানুষ নদীতে নৌকা ভাসিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে পূজার শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তবে এবার সাতক্ষীরার দেবহাটায় সীমান্ত নদী ইছামতির বুকে করোনার কারণে ভাসেনি মিলনমেলার তরী।
দেবহাটার প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব বলেন, ২০১৩ সাল থেকে সীমান্ত নদী ইছামতির বুকে স্ব-স্ব জলসীমার মধ্যে থেকে মিলনমেলায় অংশ নিতেন দুই পাড়ের মানুষ। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস এ বছর উৎসবের সেই আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।
ইছামতি পাড়ের বাসিন্দা দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, সোমবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে সীমিত পরিসরে বাংলাদেশ ও ভারত সীমানায় প্রতিমা বিসর্জন দেন দুই দেশের বাসিন্দারা। প্রতিবারের মতো এবার ইছামতি নদীর বুকে সুতা আর পতাকা টাঙিয়ে নির্ধারণ করা জলসীমায় দুই পাড়ের মানুষ জড়ো হতে পারেননি। এবার ইছামতির স্রোতের টানে এপারের পানি ওপারে, ওপারের পানি এপারে এলেও দুই দেশে মানুষ একসঙ্গে হতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে সকাল থেকে ইছামতি নদীর দু’পাড়ে উপস্থিত হতেন হাজারো মানুষ। বছরের এই একটি দিনের জন্য তারা অপেক্ষায় থাকতেন। ১৯৪৭ সালে দেশের সীমানার বুকে দ্বিজাতি তত্ত্বের ধারালো ছুরি আঘাত করার পর ভাগ হয়ে যায় বাংলা। এপার-ওপার দুই বাংলায় পড়ে যায় আত্মীয়তার ছেদ। ফলে এপারের স্বজনরা ওপারের স্বজনদের সঙ্গে এবং ওপারের স্বজনরা এপারের স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হতেন বিজয়া দশমীতে। এদিন সীমান্ত খুলে দেওয়া হতো। দুই দেশের মানুষ এপার-ওপার হতে পারতেন। সময় কাটাতে পারতেন স্বজনদের সঙ্গে।
তবে ২০১৩-২০১৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিলে ভারতের পশ্চিম বাংলা সরকার নিরাপত্তার কারণে বিজয়ী দশমীর দিন এপার-ওপার হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাস চৌধুরী বলেন, ২০১৩ সালের পর থেকে থেকে স্ব-স্ব জলসীমার মধ্যে ভাসতো মিলনমেলার নৌকা। নির্ধারিত জলসীমায় গিয়ে দুই দেশের মানুষ স্বজনদের সঙ্গে উপহার ও কুশলাদি বিনিময় করতেন। এতে দুই বাংলার মানুষের আনন্দে কিছুটা হলেও ভাটা পড়ে। তবে এবার সেই আয়োজনও ছিল না।
দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর সীমিত পরিসরে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কঠোর নিরাপত্তায় বিজয়া দশমী পালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।