করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজশাহীতে বিধি-নিষেধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার পরিবর্তে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, মার্কেট, দোকানসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। এই সময়ে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। বিধি-নিষেধ অমান্য করলে জরিমানা করা হবে।
রবিবার (৬ জুন) বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনা সংক্রান্ত জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের বিষয় জানান করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কমিটির (সিটি করপোরেশন পর্যায়) সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
মেয়র বলেন, ‘অতীতের চেয়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েছে। এবারের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত শক্তিশালী। যখন কাউকে আক্রান্ত করছে, তখন ফুসফুস অকার্যকর করে দিতে বেশি সময় নিচ্ছে না। এসব কিছু বিবেচনা করে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজশাহীতে বিধি-নিষেধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। পূর্বের সন্ধ্যা ৭টার পরিবর্ততে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, মার্কেট, দোকানসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে থ্রি-হুইলার সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারে ৫টা মানে ৫টায়, ৬টা মানে ৬টায়, এক্ষেত্রে উদাসীনতা বা গাফিলতি বরদাশত করা হবে না। জীবিকার জন্য দোকানপাট খোলা রাখতে হচ্ছে, কিন্তু মানুষের জীবনটাও বাঁচাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজ ( রবিবার) সকাল থেকে নগরীর পাঁচটি পয়েন্টে করোনার র্যান্ডম টেস্ট শুরু হয়েছে। কাল ( সোমবার) থেকে এটি আরও বাড়ানো হবে। বিভিন্ন মোড়ে জমায়েত হওয়া লোকদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে যদি করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়, তাদের চিহ্নিত করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। তাহলে সে আর বাইরে করোনা বিস্তার করতে পারবে না।’
আরও কঠোর পদক্ষেপের নেওয়ার কথা উল্লেখ করে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি এবং তরুণদের অ্যাকটিভ করে জনসাধারণকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করা হবে। জনসচেতনতাবৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো হবে। যারা মাস্ক ব্যবহার করবেন না, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া বিধিনিষেধ অমান্য করবেন, তাদের জরিমানা করা হবে। বিধি-নিষেধ অমান্যকারীদের মধ্যে কাউকে কাউকে করোনা সংক্রান্ত ব্যাপারে সচেতনতামূলক কাজে লাগানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল ( সোমবার) থেকে পার্শ্ববর্তী গোদাগাড়ী, তানোর ও মোহনপুর থানা এলাকার ভেতর দিয়ে শহরে কেউ প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিদিনই করোনা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। যদি করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে তাহলে ১৪ দিনের জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর লকডাউন ঘোষণা করা হবে।’
লকডাউনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জীবন ও জীবকা দুটিই চলাতে হবে। এই মুহূর্তে যদি কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়, তাহলে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার আমের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দ্রব্যমূল্যও বৃদ্ধি পাবে। অসংখ্য গরিব ও অসহায় মানুষদের জন্য তা কষ্টের হবে। আমরা লকডাউনের বিরোধী নই, আগামী তিন থেকে পাঁচ দিন করোনা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাসপাতাল সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সদর হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার কথা বলেছেন। তিনি সম্মত হয়েছেন। সদর হাসপাতালকে যত শিগগিরই সম্ভব করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। মিশন হাসপাতালটিও আরেকবার নেওয়া যায় কিনা, সেই আলোচনাও চলছে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন– করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কমিটির (বিভাগীয় পর্যায়) সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ূন কবীর, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কমিটির (জেলা পর্যায়) সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, আরএমপি পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার), সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার, রাজশাহী চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
এদিকে, রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ ফ্রি করোনা টেস্ট করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পাঁচটি ক্যাম্পেইন করে ভ্রাম্যমাণ টেস্ট করা হয়েছে। রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বোয়ালিয়া থানার সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টসহ নগরীর হড়গ্রাম বাজার, সিঅ্যান্ডবি মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড় ও তালাইমারী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময় নগরীর পাঁচটি পয়েন্টে মোট এক হাজার ২০০টি ফ্রি টেস্ট করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা ফ্রি ক্যাম্পেইন করছি। এর মাধ্যমে জানতে পারবো নতুন করে রাজশাহীতে করোনার ভ্যারিয়েন্ট কতটুকু আছে। সারা বাংলাদেশ রাজশাহীকে নিয়ে আতঙ্কিত। রাজশাহী নগরীর পাঁচটি পয়েন্টে টেস্ট করা হচ্ছে, সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি টেস্ট করার জন্য। আজ (রবিবার) টেস্টের বেশির ভাগ নেগেটিভ এসেছে। আমরা আশাবাদী জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানলে আমরা করোনা প্রতিরোধ করতে পারবো।’
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন কাউয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমাদের পাঁচটি টিম নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে করোনার টেস্ট করছে। রাজশাহীতে কী পরিমাণ সংক্রমণ আছে সেটা দেখতে এই কার্যক্রম করছি। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে সংক্রমণ কতটা ছড়িয়ে গেছে সে বিষয়ে আমরা ধারণা পাবো।’
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মূলত জনসাধারণের মাঝে এই টেস্ট করে তার রিপোর্ট দেখার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে রাজশাহীর লকডাউনের বিষয়ে।
প্রতিটি স্থানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সে সময় সেখানে স্বাস্থ্য টিম ও আরএমপির পুলিশ সদস্যরা উপস্থিতি রয়েছেন।
