X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

সবজির দাম বেশি, কৃষকের মুখে হাসি

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
২০ আগস্ট ২০২২, ১০:০০আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২২, ১০:০০

রাজশাহীতে উৎপাদিত সবজির চড়া মূল্যে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। মাঠে-ঘাটে সবজি ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। উৎপাদন আশানুরূপ হওয়ায় এবার দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তারা।

চাষিরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন পটল, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, করলা, কাঁচা মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা, পুঁইশাক ও পেঁপে আবাদ লাভজনক হলেও ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যান্য বছর আবাদ করে উৎপাদন খরচ দিয়ে তেমন লাভ হতো না। তবে এবার সব সবজির দাম বেশি পাচ্ছেন তারা।

পবা উপজেলার সাইরপুকুর, দর্শনপাড়া বিল, বিল নেপালপাড়া, বিল ধর্মপুর, বাগধানী, বড়গাছী, পূর্ব পুঠিয়াপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধানের পাশাপাশি উঁচু জমিতে বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ করেছেন চাষিরা। দাম ভালো পাওয়ায় অনেকে আগাম ফসল তুলছেন।

চাষিদের ভাষ্য, চলতি মৌসুমে যারা তুলনামূলক নিচু জমিতে মরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ করেছেন, তারা শঙ্কায় ছিলেন। কারণ বৃষ্টি শুরু হলে আবাদ নষ্ট হয়ে যেতো। এবার তা হয়নি। ফলে বিঘাপ্রতি গড়ে ২৫ থেকে ৩০ মণ কাঁচা মরিচ ও শাকসবজি ঘরে তোলার প্রত্যাশা করছেন তারা।

চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে কাঁচা মরিচের মণ এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত ছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একই মরিচের মণ আট হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। তবে হঠাৎ কেন দাম বেড়ে গেলো তা বলতে পারছেন না তারা।

তবে আমদানির খবরে কিছুটা কমেছে দাম। এরই মধ্যে বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি থাকায় বর্তমানে মরিচের মণ ছয় হাজার টাকায় নেমেছে। এই দাম স্থিতিশীল থাকলে দ্বিগুণের বেশি লাভ থাকবে বলে জানান চাষিরা।

মরিচের দাম বেশি পাওয়ায় দারুণ খুশি পবার হুজুরিপাড়া ইউনিয়নের সাইরপুকুর গ্রামের কৃষক ইসরাফিল ও তার স্ত্রী মিনা আক্তার। তারা জানান, বর্গা নিয়ে ১৮ শতক জমিতে জিয়া জাতের মরিচ আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। সার-কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে দ্বিগুণ লাভ থাকবে তাদের। মরিচের এমন দাম এর আগে দেখেননি তারা।

বড়গাছী ইউনিয়নের দাদপুর পূর্বপাড়া এলাকার চাষি মো. রবিন নওহাটা হাটে গত বৃহস্পতিবার এক মণ পটল ৭৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, গত রবিবারের হাটে পটলের মণ ৯০০ টাকা বিক্রি করেছিলাম। গত বছর বৃষ্টির কারণে পটলের আবাদ ভালো হয়নি এবং বাজারেও দাম তেমন ছিল না। তাই লোকসান গুনতে হয়েছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে এবং বাজারে দামও বেশি পাচ্ছি। ফলে দ্বিগুণ লাভের আশা করছি।’

মোহনপুর উপজেলার পটল ব্যবসায়ী সালাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বাজারে আমদানি বেশি হওয়ায় ৮০০ টাকায় কিনেছি পটলের মণ। এর আগের হাটে আরও বেশি ছিল দাম। কিছুটা কমেছে। এবার মাঠপর্যায়ে সবজির দাম বেশি।’

নওহাটা হাঁটের পটল ব্যবসায়ী মোহম্মদ আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভালো মানের পটল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় মণ কিনেছি। গত হাটে (রবিবার) আমদানি কম থাকায় এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় মণ কিনেছি। গত বছর এই সময়ে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা ছিল পটলের মণ। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার প্রত্যেক ফসলে অধিক দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।’

মৌমাছি ইউনিয়নের হরিহরপাড়া এলাকার কৃষক দুলাল হোসেন নওহাটা হাটে তিন মণ করলা বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার হাটে আমদানি বেশি থাকায় প্রতি মণ করলা ৭২০ টাকায় বিক্রি করেছি। গত রবিবার এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। এখন দাম কমে গেছে। তবু এই দাম পেয়ে আমরা খুশি। আশা করছি লাভ হবে এবার।’

রাজশাহীতে উৎপাদিত সবজির চড়া মূল্যে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে

দাদপুর পূর্বপাড়া এলাকার চাষি মো. কামরুল ইসলাম দুই মণ পেঁপে বিক্রি করেছেন এক হাজার ৬০০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘এ বছর সব সবজির দাম বেশি। কিন্তু কেন বেশি তা আমরা জানি না। তবে আমরা লাভবান হচ্ছি।’

নওহাটা হাটের সততা এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ঢ্যাঁড়সের মণ কিনেছি এক হাজার ৪০০ টাকা। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি মণ মুলা কিনেছি এক হাজার ৩০০ টাকা, বেগুনের মণ কিনেছি এক হাজার ৬০০ টাকা, কচুর মণ কিনেছি এক হাজার ৪০০ টাকা, কাঁকরোলের মণ কিনেছি ৫৬০ টাকা, আলুর মণ কিনেছি ৮৮০ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ রয়েছে। সবমিলিয়ে খরচ ধরে আমাদের বিক্রি করতে হবে। তবে লাভ যা হওয়ার কৃষকদেরই হচ্ছে।’

শুক্রবার রাজশাহীর খুচরা কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৬০, আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০, কাঁচা মরিচের কেজি ১৫০ থেকে ১৬০, করলার কেজি ৫০ থেকে ৬০, পেঁপের কেজি ২৫ থেকে ৩০, লাউ প্রতি পিস ৪০, ঢ্যাঁড়সের কেজি ৩৫ থেকে ৪০, বরবটির কেজি ৩৫ থেকে ৪০, পটলের কেজি ২৫ থেকে ৩০, ঝিঙার কেজি ৪০, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ থেকে ৩৫ ও চাল কুমড়া প্রতি পিস ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

পাশাপাশি পুঁইশাকের আঁটি ২৫, লাল শাক ও সবুজ শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫, কলমি শাকের আঁটি ২০, কাঁচাকলার হালি ২০ থেকে ২৫, লেবুর হালি ছয় থেকে আট, দেশি শসার কেজি ৮০, হাইব্রিড শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০, মুলার কেজি ৪০, পেঁয়াজের কেজি ৫০, দেশি রসুনের কেজি ১৬০, ভারতীয় রসুনের কেজি ১০০ ও আদার কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পবায় ২০০ হেক্টরে করলা, ১৮০ হেক্টরে ঢ্যাঁড়স, ১৭৫ হেক্টরে বেগুন এবং ৭০০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। মরিচের পাশাপাশি শাকসবজি আবাদ করেছেন চাষিরা। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় খুশি তারা। কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছি আমরা। কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়াসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় দুই হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ রয়েছে। পাশাপাশি ৬৪৮ হেক্টরে করলা, এক হাজার ৩৪ হেক্টরে পটল, এক হাজার ২৮৬ হেক্টরে বেগুন ও ৪৭৪ হেক্টর জমিতে ঢ্যাঁড়স আবাদ হয়েছে। এ বছর ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।’

/এএম/
সম্পর্কিত
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
লাভবান হওয়ায় বেগুন চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা
এক জেলায় দুই হাজার কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন
সর্বশেষ খবর
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি