বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের প্রার্থী করা হয়েছে জেলা জাসদের সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে। অপরদিকে, উভয় আসনের জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দুটি আসনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। রাগেবুল আহসান রিপুও একই সময় তার মনোনয়নপত্র নেন।
বগুড়া সদর আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু জানান, রবিবার রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি সোমবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, দফতর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিপু জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তাকে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় দলীয় স্বার্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যান। তবে এবার তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন বলে আশা করেন।
বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র নেওয়া ১৪ দলের প্রার্থী কেন্দ্রীয় জাসদের সহ-সভাপতি ও জেলা জাসদের সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন জানান, আওয়ামী লীগ এ আসনে শরিক দল জাসদকে ছেড়ে দিয়েছে। এ ছাড়া তিনি জাসদ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এবারের উপনির্বাচনে জয়লাভ করবেন বলে আশা তার। এ বিষয়ে তিনি দলমত নির্বিশেষে ভোটারদের ভোট ও দোয়া চেয়েছেন।
আলোচিত কন্টেন্ট নির্মাতা আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সোমবার দুপুরে তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান এ তথ্য দেন।
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হিরো আলম জানান, তিনি এবার দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তার বাড়ি বগুড়া সদরে হওয়ায় তিনি এলাকাবাসীদের দাবির মুখে এ আসনে ভোট করবেন। এ ছাড়া বগুড়া-৪ আসনে (২০১৮) তিনি একবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বলেই এবারও সেখান থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
হিরো আলম বলেন, বগুড়া সদর ও কাহালু-নন্দীগ্রামের ভোটাররা যাতে মনক্ষুণ্ন না হন সে জন্যই তিনি দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আশা করেন, এবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
দুটি আসনে জয়লাভ করলে কোন আসনে থাকবেন- এমন প্রশ্নে হিরো আলম বলেন, সব ভোটারের ভালোবাসা নিয়েই ভোট করতে মাঠে নেমেছেন। জয়লাভের পর তিনি আসন রাখা বা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
হিরো আলম আরও জানান, প্রার্থীরা ভোটের আগে অনেক বড় বড় কথা বলে থাকেন। কিন্তু তিনি বড় বড় কথা বা অঙ্গীকার করতে চান না। ভোটে জিলতেই এলাকায় কাজ করে দেখিয়ে দেবেন। সবসময় জনগণের জন্য সেবামূলক কাজ করে থাকেন; তাই জনগণ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। এ ছাড়া তিনি নির্বাচনে পরাজিত হলেও মাঠ থেকে সরে যাবেন না। কারণ আরও নির্বাচন করার বয়স রয়েছে। আর তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। কারণ চেষ্টা অব্যাহত রাখলে একদিন সুফল আসবে। হিরো আলম ভোটের দিন কড়া নিরাপত্তা প্রদানে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাহলে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করতে পারবেন।
এলাকাবাসীরা জানান, বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বহুল আলোচিত হিরো আলম একসময় ডিশ সংযোগের ব্যবসা ও সিডি বিক্রি করতেন। শৈশবে চানাচুরও বিক্রি করেছেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি মডেলিং শুরু করেন। এরপর নিজের অভিনয় ও মিউজিক ভিডিও গান রেকর্ড করে ডিশে প্রচার করতে থাকেন। এতে তার জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হওয়ায় তিনি বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নে পর পর দুবার সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। পরে ২০১৬ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ খুলে অভিনয় ও মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেন।
পরে ইউটিউবে এসব আপলোড করে আলোচনায় আসেন। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা হিরো আলম একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বগুড়া-৪ আসনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। সিংহ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৬৩৮ ভোট পান। নির্বাচনে তিনি জামানত হারান। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন। এর প্রতিবাদে বেলা ২টার দিকে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।