বগুড়ার শিবগঞ্জে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে সালিশে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পরে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে সালিশে ডেকে নিয়ে মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) মধ্যরাতে উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের বড় হরিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত আবুল হোসেন (৫০) বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের বড় হরিপুর গ্রামের মৃত জয়নাল মন্ডলের ছেলে।
বুধবার সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রউফ জানান, বিকাল পর্যন্ত মামলা হয়নি। মামলা দিলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় সাধারণ গ্রামবাসীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি মৃত আবুল হোসেন প্রতিবেশী বাদশা মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম সম্পর্কে ‘কটূক্তি’ করেছিলেন। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বজনরা আবুল হোসেনের উপর ক্ষিপ্ত হন। তারা গ্রাম্যসালিশে তার বিচারের সিদ্ধান্ত নেন।
আবুল হোসেনের স্ত্রী শাহিদা বেগম জানান, মঙ্গলবার রাতে তারা খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রাত ১১টার এলাকার মিঠুন, জলিল ও শফিকুল নামে তিন জন তার স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মসজিদের কাছে নিয়ে যায়। তিনিও পিছু পিছু গিয়ে দেখেন, সেখানে আয়োজন করা সালিশ বৈঠকে গ্রামের মাতব্বররা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, বিচারের এক পর্যায়ে মনোয়ারা, তার স্বামী বাদশা মিয়া ও ছেলে সোহাগ মিয়া তাকে (আবুল) কিলঘুষি মারে। তার শরীরে সিগারেটের আগুনের ছেঁকা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আমি চিৎকার করলেও গ্রামের কেউ তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেননি।
পরে আবুল হোসেনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শাহেলা বেগম দাবি করেন, স্বামীকে আহতাবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন এবং রাত ১২টার দিকে মারা যান।
তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে সালিশে ডেকে নিয়ে মারপিটে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এই নারী। তিনি বলেন, শিগগিরই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
অভিযুক্ত বাদশা মিয়া, তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও ছেলে সোহাগ মিয়া পলাতক। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিবগঞ্জ থানার এসআই মনোয়ারুল সবুজ জানান, সালিশে মারপিট ও বাড়িতে মারা যাওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। জিডিমূলে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শিবগঞ্জের মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আশিক ইকবাল জানান, সকালে আবুল হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। বিকাল পর্যন্ত মামলা হয়নি। তদন্তের পাশাপাশি অভিযুক্তদের আটক করার চেষ্টা চলছে।