বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগের যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এটি বিপথগামী সিদ্ধান্ত।’
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ উদ্বেগের কথা জানান তথ্যমন্ত্রী। নগরীর পাঠানপাড়ার শিমুলতলা মোড়ে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে নানা কথা চলছে। এটি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। তারা কারে ভিসা দেবে, কারে দেবে না। কারে পাঁচ বছর দেবে, কারে এক বছর দেবে বা কারে দেবে না—এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। দেখলেন না, ভারতে কীভাবে সেলফি তুললেন জো বাইডেন। আবার নিউইয়র্কে কীভাবে নৈশভোজে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানালো। সেখানেও তো ছবি তুলল, সঙ্গে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও আছেন। এখানে যারা ছবি আঁকে বা চিত্রশিল্পী, তারা তো বলে ছবিই কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি একটি বিচ্ছিন্ন বিষয় উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের একটি কথায় আমি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেছেন, “ভিসানীতির আওতায় গণমাধ্যমও আসবে।” আমাদের দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত স্বাধীন এবং স্বচ্ছভাবে কাজ করে। দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী। স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম সবসময় গণতন্ত্রের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আপনারা অন্য কাকে ভিসা দেবেন, না দেবেন—কিচ্ছু আসে যায় না। আপনারা কোনও আওয়ামী লীগ নেতাকে ভিসা দিলেন কী দিলেন না, কোনও বিএনপি নেতাকে ভিসা দিলেন কী দিলেন না, তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। আমরা তাতে কিছু মনে করি না। এটি আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু কেন গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি কার্যকর হবে, সেটি আমার বোধগম্য নয়। গণমাধ্যমের সঙ্গে সাংবাদিক থেকে কলামিস্ট যারা যুক্ত আছেন, তারা মনে করছেন এটি আমাদের স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ। অন্য কোনও দেশের আমাদের স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ করা সমীচীন নয়। এটি গণমাধ্যমের কর্মীরা, গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মেনে নিতে পারে না। আশা করবো, তারা বিষয়টির ব্যাখ্যা করবে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একাত্তরে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়, তখনও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ভারত মহাসাগরে সপ্তম নৌবহর এসে চোখ রাঙিয়েছিল। আজও কেউ কেউ চোখ রাঙায়। কিন্তু আমাদের আছেন শেখ হাসিনা, যার ধমনিতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহমান। তিনি এসব রক্তচক্ষুর মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। ২০১৪ সালেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বিএনপি বলেছিল, ভোট করলে সরকার এক মাস টিকবে। আমরা পাঁচ বছর ছিলাম। ১৮ সালে বলেছিল, সরকারকে টান দিয়ে ফেলে দেবে। টান দিতে গিয়ে নিজেরাই পড়ে গিয়েছিল। আমরা এখনও পৌনে পাঁচ বছর ক্ষমতায়। এখন বলছে, নির্বাচন করতে পারে, কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে দেবো না। অত সহজ নয়। আওয়ামী লীগ এত সহজে পরাজিত হওয়ার দল নয়।’
ভূরাজনীতিতে এখন বিএনপি হচ্ছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘যারা বাতাস দিয়ে দিয়ে আপনাদের লাফাচ্ছে, তারা আপনাদের দুধ দেবে না। ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা যেমন দুধ পায় না, আপনারাও পাবেন না। বিএনপি বলেছে, আগামী মাসে ফাইনাল খেলা। আমরা প্রস্তুত আছি। কোথায় খেলবেন বলেন, আমরা যাবো। আমরা যাবো নাকি যুবলীগকে পাঠাবো। আমরা ফার্স্ট টিম পাঠাবো না, সেকেন্ড টিম পাঠাবো। সঙ্গে যুব মহিলা লীগকেও পাঠাবো। আগে তাদের সঙ্গে খেলে আসেন। কিন্তু খেয়াল রাখেন, খেলা শুরুর আগেই আপনাদের খেলোয়াড়রা যেন দলবদল করে না ফেলেন। খেলার আগেই যদি আপনাদের খেলোয়াড়রা দলবদল করে ফেলেন, তাহলে খেলতে পারবেন না। কাজেই লাফালাফি করে লাভ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে শুধুমাত্র দেশ পরিবর্তন হয়েছে তা নয়, তিনি দেশের মানুষের ভাগ্যেরও পরিবর্তন করেছেন। দেশ যখন বদলে গেছে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে, বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারেক জিয়া আবারও হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন তৈরি করবেন। সারাদেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা হয়েছিল, এবার পাঁচ হাজার জায়গায় বোমা হামলা হবে। রাজশাহীর বাগমারায় বাংলা ভাইয়ের উত্থান হয়েছিল, এবার সারাদেশে বাংলা ভাইয়ের উত্থান হবে। বাংলাদেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তানের পর্যায়ে চলে যাবে।’
এর আগে সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।