X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত খামারিরা

সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ,পঞ্চগড়
১৫ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৩৮আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৪৯

খামারে বাঁধা আছে গরু আর কয়েকদিন পরই মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদের বড় বৈশিষ্ট্য পশু কোরবানি করা। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তে কোরবানির গরুসহ অন্যান্য পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ও কৃষকরা। ভালো দামের আশায় তারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন। সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু না আসলে হাটে গরুর ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে আশা করছেন তারা।

পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি উপজেলায় এবার মোট ৪৬ হাজার তিনশ ৪৬টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেনে খামারির কৃষকরা। এর মধ্যে ২৬ হাজার আটশ ৪৬টি গরু এবং ১৩ হাজার দুইশ ১০টি ছাগল রয়েছে। জেলায় মোট খামারির সংখ্যা ছয় হাজার দুইশ ৯০ জন। এর মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় মোট বড় খামারির সংখ্যা চারশ জন। অন্যান্য পাঁচ হাজার আটশ ৯০ জনের সবাই একক পর্যায়ে একটি বা দুইটি পশু পালন করে থাকেন।

খামারে বাঁধা আছে গরু প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে কৃমিনাশকসহ নির্দিষ্ট রোগের ওষুধ খাওয়ানো হলেও ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট পরিহার করে সবুজ ঘাস ও খড়ের পাশাপাশি খৈল, গুড়া, ভুষি খাওয়ানোর মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে পুশুগুলোকে। কোনও ভ্যাকসিন ছাড়াই প্রস্তুত করা হয়েছে দেশি, নেপালি, হারিয়ানা, অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ামসহ নানা জাতের গরু। ফলে খামারি ও কৃষকদের এসব গরুতে কোনও ধরনের রোগ বালাইয়ের ঝুঁকিও নেই। এ কারণে বাজারে এই অঞ্চলের গরুর চাহিদাও অনেক বেশি।

বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি খামারে ৪/৫ জন লোক নিয়মিত গরুগুলোকে খাবার দেওয়া ও গোসল করানোসহ বিভিন্ন পরিচর্যা করছেন। ভালো দাম পেতে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে পরম যত্নে গরুগুলোর দেখভাল করছেন খামারি ও কৃষকরা। গরুর খাদ্য তালিকাটাও বেশ সমৃদ্ধ।

গরুকে গোসল করানো হচ্ছে পঞ্চগড় জেলা সদরের হাফিজাবাদ এলাকার খামারি অহাম্মেদ শফি বলেন, ‘কোরবানির হাটে বিক্রি করার জন্য দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ৪০টি গরু নিয়ে খামার গড়ে তুলেছি। ২২ লাখ পাঁচশ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি এসব গরু। খামারে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে গরুগুলোকে লালন পালন করছি। গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়ের পরিমাণও বেড়েছে। অবৈধপথে ভারতীয় গরু না আসলে কোরবানির হাটে গরুগুলো বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো।’

জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট এলাকার খামারি সফিয়ার রহমান জানান, আমি প্রত্যেক ঈদে গরু বিক্রি করি। এবারও ৮/১০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি। ঘাস ও খড়ের পাশাপাশি খৈল, গুড়া, ভুষি খাওয়ানোর মাধ্যমে গরুগুলোকে বিক্রির জন্য তৈরি করেছি। কোনও ইনজেকশন বা ট্যাবলেট ব্যবহার করি না, এজন্য প্রতিবারই আমার গরু বিক্রি হয়ে যায়।

খামারে বাঁধা আছে গরু জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর এলাকার খামারি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু মোটাতাজাকরণে অতিরিক্ত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। খরচ বেশি হলেও লাভের আশায় বিনিয়োগ করেছি। ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবো।’

জেলার সদর উপজেলার গরিণাবাড়ি এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘পুঁজি কম তাই বাড়িতে তিনটি গরু লালন পালন করছি। দাম কেমন পাবো জানি না। ভারতীয় গরু আসায় কোরবানির হাটে গরুর দাম কম শুনেছি। কোরবানির হাটে ভারতীয় গরু আসলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। ন্যায্য দাম না পেলে পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে যাবে।’

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি এলাকার প্রন্তিক খামারি আবুল হোসেন বলেন, ‘খামার করার সামর্থ্য নাই। বাড়িতেই দুটি গরু পালন করছি। কোরবানির হাটে বিক্রি করবো। বাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু ব্যবসায়ীরা এসে গরুর দরদাম করছেন। আমার দুটি গরু ৫০ হাজার টাকায় কেনা আছে। ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করার আশা করছি।’

গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারি পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ দাশ জানান, পঞ্চগড় জেলায় কোরবানির জন্য ১৫ হাজার গরু এবং পাঁচ হাজার ছাগল প্রয়োজন। এবার কোরবানির হাটে গরুর সংকট হবে না। বরং পঞ্চগড়ের চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি পশু পালন করা হয়েছে। খামারি ও কৃষক পর্যায়ের এসব অতিরিক্ত পশু স্থানীয় হাট-বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হবে। পঞ্চগড় জেলার খামারি ও কৃষকরা যেসব পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন তা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে। এখানে কোনও রকম কৃত্রিম পদ্ধতি বা হরমোন জাতীয় কোনও ওষুধ ব্যবহার করে গরু মোটাতাজাকরণ হয় না। আমরা খামারগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধের দোকানগুলোতেও মনিটরিং করছি। একটা কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে পঞ্চগড়ের কোরবানির পশু এখানকার মানুষ নিবিঘ্নে খেয়ে থাকেন। এখান থেকে যেসব গরু দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হয় সেখানকার ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দে এসব পশু কোরবানি দিতে পারবেন এবং মাংস খেতে পারবেন। ভারত থেকে গরু না আসলে এবছর খামারিরা বেশ লাভবান হবেন।

খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই পশু খামার গড়ে তুলেছেন। খামার গড়ে তুলতে যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন সেরকম অর্থ অনেকেরই নেই। সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ দিলে খামারি ও কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা