X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

জোড়াতালি দিয়ে চলছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগ

মোয়াজ্জেম হোসেন, লালমনিরহাট
২৫ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৫৬আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৫৬

জোড়াতালি দিয়ে চলছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ ও জনবল সংকটের কারণে জোড়াতালি দিয়ে চলছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগ। এ বিভাগে ৯টি সেকশনে ৫৬টি ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও বর্তমানে চলছে ৩৮টি ট্রেন। এছাড়া, লোকোমোটিভ ও ক্রু (ট্রেনচালক) সংকটের কারণে বিভিন্ন সময়ে ১৮টি ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এসব কারণে শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলাচল করতে পারছে না। ফলে যাত্রীসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে লালমনিহাট রেলওয়ে বিভাগ।
জানা গেছে, এ অঞ্চলে ৩২টি লোকোমোটিভের মধ্যে চারটি বিভিন্ন সময়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এবং ছয়টি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট ২২টি লোকোমোটিভের মধ্যে একটির মেয়াদ থাকলেও বাকি ২১টি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। পরিত্যক্ত এসব লোকোমোটিভ নিলামে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট রেলওয়ের সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী (লোকো) আকরাম হোসেন।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, লালমনিরহাট ডিভিশনের ৯টি সেকশন তথা লালমনিরহাট-ঢাকা ও রংপুর-ঢাকা ছাড়া অন্য সাতটি সেকশন লালমনিরহাট-বুড়িমারী, লালমনিরহাট-তিস্তা, তিস্তা-রমনা বাজার, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর, লালমনিরহাট-সান্তাহার, পার্বতীপুর-বিরল ও কাঞ্চন-পঞ্চগড় রুটে ট্রেনের সময়সূচি অনুযায়ী এসব সেকশনে প্রতিদিন ‘মেইল এক্সপ্রেস’ ২০টি, ‘লোকাল মিশ্র’ ২৪টি ও ‘আন্তঃনগর এক্সপ্রেস’ ১২টি ট্রেন চলাচলের কথা। জোড়াতালি দিয়ে চলছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগ
কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ক্রু এবং লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন না থাকায় চারটি ‘মেইল এক্সপ্রেস’, ১৪টি ‘লোকাল মিশ্র’ ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, ১৬টি মেইল এক্সপ্রেস, ১০টি লোকাল মিশ্র ও ১২টি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন কখনও নিয়মিত আবার কখনও অনিমিয়তভাবে চলাচল করছে। এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬২টি লোকোমোটিভ প্রয়োজন। কিন্তু লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের সংগ্রহে আছে মাত্র ২৮টি লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন।
এরমধ্যে তিনটি লোকোমোটিভ মেরামত অযোগ্য হওয়ায় কেলোকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ছয়টি লোকোমোটিভ ট্রেন পরিচালনার জন্য অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলো শান্টিং কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশিষ্ট ১২টি লোকোমোটিভ দিয়ে কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে ৩৮টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু যে লোকোমোটিভ সমস্যা তা নয়, এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য মঞ্জুরি করা লোকো মাস্টার (এলএম) প্রথম গ্রেডের (এলএম) ৮০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪২ জন, দ্বিতীয় গ্রেডের (এএলএম) ১৩২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭৭ জন এবং শান্টিং কাজে ৪২টি পদের বিপরীতে ১৫ জন কর্মরত আছেন।
এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। একদিকে লোকোমোটিভ অন্যদিকে চালক বা ‘ক্রু’ (লোকো মাস্টার) সংকটের কারণে সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবুও তারা আশা করছেন, আগামী জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা নতুন কোচ ও লোকোমোটিভ লালমনিরহাট বিভাগে পাঠানো হবে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় সহকারী যন্ত্র প্রকৌশল (লোকো) আকরাম হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে ১২টি আন্তঃনগর, মেইল এক্সপ্রেস ১৬টি ও ১০টি লোকাল মিশ্র ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য ৫০ নম্বর টাইম টেবিল (ট্রেন পরিচালনার জন্য বিশেষ সময়সূচির ছক) অনুযায়ী প্রতিদিন ৬২টি লোকোমোটিভ প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ রয়েছে মাত্র ২৮টি। এরমধ্যে ১৬টি লোকোমোটিভ জোড়াতালি দিয়ে চলছে।’
সহকারী লোকো মাস্টার আল আমিন বলেন, ‘১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২ ‘ সিরিজের (এমইজি-৯) ১১টি, ১৯৬৯ সালে কানাডা থেকে ২৩শ’ সিরিজের (এমইএম-১৪) ৮টি, ফের কানাডা থেকে ১৯৭৮ সালে ২৪শ’ সিরিজের (এমইএম-১৪) আনা আরও ৯টি এবং ১৯৮১ সালে হাঙ্গেরী থেকে ৩৩শ’ সিরিজের (এমএইচজেড-৮) তিনটি লোকোমোটিভ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য আনা হয়েছিল। এরপর আর কোনও লোকোমোটিভ দেওয়া হয়নি। তবে ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা ২৯শ’ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি লোকোমোটিভ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেওয়া হয়। এসব লোকোমোটিভের ইকোনোমিক মেয়াদ ২০ বছর নির্ধারিত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা ১১টির বয়স হয়েছে ৫৭ বছর। কানাডা থেকে প্রথম ধাপে আনা আটটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, এগুলোর ৪৮ বছর। দ্বিতীয় ধাপে কানাডা থেকে আনা ৯টি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে ৩৯ বছর হয়েছে। হাঙ্গেরী থেকে আনা তিনটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে ৩৭ বছর হয়েছে।
লোকোমোটি ও জনবল সংকটের কারণে চারটি মেইল এক্সপ্রেস ও ১৪টি লোকাল মিশ্র ট্রেন চলাচল বন্ধের সত্যতা স্বীকার করে লালমনিরহাট বিভাগীয় সহকারী যন্ত্র প্রকৌশল (লোকো) আকরাম হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে কিংবা রিলিফ লোকোমোটিভ পাঠানোর প্রয়োজন হলে অন্য কোনও একটি ট্রেন বাতিল, কিংবা অস্বাভাবিক বিলম্ব করতে হচ্ছে। এছাড়া, কোনও ক্রু অসুস্থ হয়ে পড়লে, কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে ছুটিতে গেলেও ট্রেন বাতিল করার উপক্রম হচ্ছে। দ্রুত ক্রু নিয়োগ এবং লোকোমোটিভ সংযোজন করা না গেলে টাইমটেবিল ৫০ নম্বর অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনা করা যেমন অসম্ভব হবে, তেমনি আরও ট্রেন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এসব সমস্যা উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘লালমনিরহাট বিভাগের বিভিন্ন সেকশনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন লোকোমোটিভ, কোচ ও জনবল সংকট সমাধান করা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংসদ সদস্যকেও জানানো হয়েছে। লোকোমোটিভ, কোচ ক্রয় ও জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের ফলে সমস্যা সমাধান হবে।’

/এআর/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা