ভারতের নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এবং বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি ও মে মাস ব্যতীত চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত চার মাসে বন্দর দিয়ে এক হাজার ৫৩টি ট্রাকে ২৮ হাজার ১২১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই ৫১৭টি ট্রাকে ১৪ হাজার ১৫৩ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজের এলসি খোলা রয়েছে এবং আমদানিও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় সাড়ে তিন মাস বন্ধের পর ২ জানুয়ারি বন্দর দিয়ে দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। কিন্তু পড়তা না থাকায় গত ২৭ জানুয়ারি থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেন আমদানিকারকরা। দেশের বাজারে চাহিদা বাড়লে ৩৬ দিন বন্ধ থাকার পর ৪ মার্চ নিত্য এ পণ্যটির আমদানি ফের শুরু হয়। তবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার আইপি ইস্যু বন্ধ করায় ৩০ এপ্রিল থেকে আবারও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এক মাস চার দিন পর ৩ জুন থেকে বন্দর দিয়ে পুনরায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।
সে অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে বন্দর দিয়ে ৩০টি ট্রাকে ৭৭০ টন, মার্চে ২৮৭টি ট্রাকে সাত হাজার ৪৯৮ টন, এপ্রিলে ২১৯টি ট্রাকে পাঁচ হাজার ৭০০ টন এবং জুন মাসে ৫১৭টি ট্রাকে ১৪ হাজার ১৫৩ টন পেঁয়াজ ভারত থেকে দেশে আসে। জুলাই মাসে সাত কর্মদিবসে ১৭৬টি ট্রাকে চার হাজার ৮২৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
প্রতি টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৩০০ মার্কিন ডলার (২৫ হাজার ৫০০ টাকা)। এতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫ টাকা ৫০ পয়সা করে পড়ছে। এর সঙ্গে শুল্ক রয়েছে কেজিপ্রতি দেড় টকা। আবার পরিবহন খরচ রয়েছে ৪/৫ টাকার মতো। সবমিলিয়ে দাম ৩০-৩১ টাকা পড়ছে আর বিক্রি হচ্ছে ৩১-৩২ টাকায়।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকার ইলিয়াস আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যারা এ বন্দর থেকে পেঁয়াজ কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছি, তারা খুব বিপদের মধ্যে পড়েছি। ঈদকে ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই পেঁয়াজের বাজার বাড়ছে। গতকাল যে দামে পেঁয়াজ কিনে মোকামে পাঠিয়েছি, আজ কিনতে এসে কেজিপ্রতি ১/২ টাকা বাড়তি। দাম ওঠানামার কারণে আমাদের পুঁজি হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা পেঁয়াজ কিনে মোকামে পাঠাতেই ভয় পাচ্ছি। তারপরও চাহিদা থাকায় পেঁয়াজ কিনে পাঠাতে হচ্ছে।’ তবে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমদানি যদি কম হতো তবু মেনে নেওয়া যেত। আমদানি তো দিনে ৩০/৩৫ ট্রাক করে হচ্ছে। গতকাল বন্দর দিয়ে ৩২ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, এরপরেও দাম বাড়ছে।’
বন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম একটু বাড়তির দিকে। একদিন আগে যে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ ২৭ থেকে ২৮ টাকা বিক্রি হয়েছিল বর্তমানে তা বেড়ে ২৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ৩০-৩১ টাকায় বিক্রি হওয়া নাসিক জাতের পেঁয়াজের দাম এখন বেড়ে ৩২ টাকা হয়েছে। মূলত দাম বাড়ার কারণে দেশের অন্যান্য বন্দরে পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় বাড়তির দিকে রয়েছে। ঈদকে ঘিরে পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। তবে ঈদের পর চাহিদা কমে যাবে।’
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে দেশের বাজারে নিত্য এ পণ্যের বাড়তি চাহিদাকে মাথায় রেখে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়েছে। সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজের আইপি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের যে দাম রয়েছে, ঈদের পুরোটা সময় সে দামে বেচাকেনা হবে। পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যেই থাকবে, এর বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ কিছুটা ওঠানামা করছে। কোনও সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক করে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে, আবার কোনও সপ্তাহে ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক করে আমদানি হচ্ছে। এভাবে বন্দর দিয়ে ফেব্রুয়ারি ও মে মাস ব্যতীত চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত চার মাসে এক হাজার ৫৩টি ট্রাকে ২৮ হাজার ১২১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচামাল ও পচনশীল পণ্য তাই কাস্টমসের পরীক্ষণ শুল্কায়নসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত তা খালাস করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের উদ্দেশে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়।’