X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাড়া ফেলেছে ‘সেতুবন্ধন পাঠাগার’

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
০৯ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৫৪আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৫৪

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষের। উপজেলার খালিশা বেলপুকুর গ্রামে আলো ছড়াচ্ছে সেতুবন্ধন পাঠাগার। পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক শতাধিক। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের উদ্যোগে পাঠাগারটি গড়ে উঠেছে।

পাঠাগার ঘুরে দেখা গেছে, সারিবদ্ধভাবে বসে বই পড়ছেন শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী পাঠকরা। কেউ আলমারিতে পছন্দের বই খুঁজছেন। কেউ পত্রিকা পড়ছেন। সবাই যে যার মতো পড়াশোনায় ব্যস্ত। পাঠকদের অধিকাংশই স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুল-কলেজ শেষে শিক্ষার্থী ও এলাকার ছেলেমেয়েরা এখানে বই পড়তে আসেন। প্রতিদিন শতাধিক পাঠক উপস্থিত হন। পড়াশোনার এমন পরিবেশ তৈরি হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। 

স্থানীয় অভিভাবকদের দাবি, প্রতিটি গ্রামে গড়ে উঠুক সেতুবন্ধনের মতো পাঠাগার। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। সমাজে অপরাধ কমবে। ছেলেমেয়েরা দায়িত্বশীল ও মানুষের মতো মানুষ হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার খাতা মধুপুর ইউনিয়নের ময়দানপুর খালিশা গ্রামে সেতুবন্ধন পাঠাগারের অবস্থান। পাঠাগারে ছোট গল্প, ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও বিজ্ঞানসহ অনেক বই। তবে পছন্দের বই খুঁজে পেতে একটু বেগ পেতে হয় বইপ্রেমীদের।

পাঠাগারের এক পাশে গড়ে তোলা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। পছন্দের বই পড়ার জন্য আছে সারিবদ্ধ চেয়ার-টেবিল। তিনটি টেবিলের চারপাশ দিয়ে প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা হয়েছে। সেখানে পছন্দের বই পড়তে ব্যস্ত পাঠকরা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে। সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিরতির সময়। শিক্ষার্থীরা এ সময় পাঠাগারে বই পড়েন। বই বাড়িতে পড়ার জন্য খাতায় নাম লিখে নিয়ে যান কোনও কোনও শিক্ষার্থী। আবার পড়া শেষে ফেরত দেন।

ওই গ্রামের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফা রহমান জানায়, ‘নিয়মিত এই পাঠাগারে বই পড়ি। গল্প ও উপন্যাসের বই পড়তে ভালো লাগে। সময় পেলেই আমি পাঠাগারে বই পড়তে যাই।’

পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক শতাধিক

একই এলাকার জাকির হোসেন জানায়, ‘আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। বিদ্যালয়ে বিরতির সময় পাঠাগারে বই পড়তে যাই। এছাড়া যেদিন কাজ না থাকে সেদিনও পাঠাগারে বই পড়ে সময় কাটাই। পাশাপাশি খবরের কাগজ পড়ি। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী ও সহপাঠী পাঠাগারে বই পড়তে যায়।’

খালিশা বেলপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আরমান হোসেন, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আকলিমা আক্তার ও দশম শ্রেণির সাদিয়া আক্তার জানান, সরকারি পাঠাগারে বই পড়তে গেলে ১০০ টাকা জামানত দিতে হয়। এছাড়া শহরে গিয়ে বই পড়ার খরচ ও সাধ্য নেই গ্রামের শিক্ষার্থীদের। এ অবস্থায় সেতুবন্ধন পাঠাগার হওয়ায় আমরা বিনা খরচে বই, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়তে পারছি। এতে আমাদের বই পড়ার আগ্রহ বাড়ছে। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সেতুবন্ধন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাখি ও প্রকৃতি সুরক্ষায় কাজ করে আসছে। সংগঠনের উদ্যোগে ২০১৭ সালে উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা গ্রামে সেকেন্দার আলী বাড়ির উঠোনে সেতুবন্ধন পাঠাগার গড়ে তোলা হয়। পরে খালিশা বেলপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন তিন শতক জমির ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করা ঘরে পাঠাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে আশপাশের শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠাগারে বই পড়তে যান। লেখক, কবি-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি অনুরাগীদের সহায়তায় বর্তমানে পাঠাগারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও বিজ্ঞানমনস্কসহ দুই হাজারের বেশি বই রয়েছে। পাঠাগারে নিয়মিত পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন পাঁচটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা রাখা হয়। ফলে শিক্ষার্থী ও পাঠকরা সব খবর জানতে পারেন। 

এছাড়া সেতুবন্ধন পাঠাগারে নিয়মিত কবিতা চর্চা, সাহিত্য সভা ও মাসিক গল্প লেখা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে বই দেওয়া হয়। বর্তমানে পাঠাগারে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে চলছে আরও বই সংগ্রহের চেষ্টা।

পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক স্কুলছাত্রী জুই আক্তা জানায়, ‘আমরা ছড়া ও গল্পের বই পড়ি। পাশাপাশি পত্রিকা পড়ি। এতে আমরা উপকৃত হচ্ছি।’ 

স্থানীয় আরেক পাঠক মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘আমরা অবসর সময় পাঠাগারে বই পড়ে কাটাই। গল্প উপন্যাস ও ইতিহাসের বই পড়ি আমি।’

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা পাঠাগারের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী আমরা প্রচুর বই পাঠাগারে রাখার চেষ্টা করছি। এখন নিয়মিত শতাধিক পাঠক রয়েছেন। আমরা এটিকে আদর্শ পাঠাগারে রূপ দিতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।’

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম হুসাইন বলেন, ‘সেতুবন্ধনের এই কার্যক্রম প্রশংসনীয়। তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পাঠাগারটি ওই এলাকায় সাড়া ফেলেছে। তাদের সেবামূলক কার্যক্রমে সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রশাসন।’

/এএম/
সম্পর্কিত
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসগণগ্রন্থাগারে গণফাটল, পাঠকের নিত্যসঙ্গী আতঙ্ক
উচ্চশিক্ষার রেফারেন্স বই চেয়ে চেয়ে আর কতদিন?
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের ৬ বছর, কী প্রভাব পড়েছে সমাজে
সর্বশেষ খবর
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!