X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেলুন থেকে ইয়াবা উদ্ধার, শিক্ষক ছাড়া পেলেও নরসুন্দর কারাগারে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
১৮ মে ২০২২, ০২:৪৯আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ০২:৪৯

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে একটি সেলুনে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় আটক এক কলেজশিক্ষককে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দিলেও নরসুন্দরকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৪ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী বালারহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইয়াবা ব্যবসায় ওই শিক্ষক ও নরসুন্দর জড়িত থাকলেও ‘অর্থের বিনিময়ে’ ওই কলেজশিক্ষককে ছেড়ে দিয়েছে বিজিবি। তবে বিজিবি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আটক নরসুন্দরের নাম নিমাই চন্দ্র শীল (৪২) এবং কলেজশিক্ষকের নাম তৈয়ব আলী (৪২)। তারা বাল্যবন্ধু বলে জানা গেছে। নিমাই চন্দ্র শীল উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়নের নাওডাঙা গ্রামের মৃত পোয়াতু চন্দ্র শীলের ছেলে। আর তৈয়ব আলী একই ইউপির কুরুষাফেরুষা গ্রামের মৃত ময়নুদ্দিনের ছেলে। তিনি বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বালারহাট বাজারে নরসুন্দর নিমাই চন্দ্র শীল ও প্রভাষক তৈয়ব আলী দোকান বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় বিজিবি ওই সেলুনে অভিযান চালায়। তল্লাশি চালিয়ে সেলুনের বৈদ্যুতিক বোর্ডের ফাঁকে একটি প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় ২৬ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় নিমাই চন্দ্র ও তৈয়ব আলীকে আটক করে বিজিবি। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসেন আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মুচলেকা দিয়ে তৈয়ব আলীকে ছাড়িয়ে নেন। পরে বিজিবি নরসুন্দর নিমাইকে ফুলবাড়ী থানা পুলিশে হস্তান্তর করে। পুলিশ রবিবার দুপুরে নিমাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষক তৈয়ব আলীর মামার বাড়ি উপজেলার খালিশাকোটাল সীমান্তে। তৈয়ব আলী ওই সীমান্ত পথে ভারত থেকে ইয়াবা এনে তার বন্ধু নরসুন্দর নিমাইয়ের মাধ্যমে বিক্রি করেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন হওয়ায় বিজিবি শিক্ষক তৈয়ব আলীকে ছেড়ে দিয়েছে।

নিমাইয়ের ছোট ভাই নিরঞ্জন চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমার ভাইকে ফাঁসানো হয়েছে। টাকার বিনিময়ে তৈয়বকে ছেড়ে দিয়ে বিজিবি শুধু আমার ভাইকে ফাঁসিয়েছে। অথচ এলাকার অনেকে বলছে, তৈয়ব আলী মাদক কারবারে জড়িত।’

শিক্ষক তৈয়ব আলী মাদকের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে আমার মামার বাড়ি হলেও আমি দুই মাসেও একবার সীমান্তের দিকে যাই না। মাদক বিষয়ে আমার কোনও ধারণাও নেই।’

মধ্যরাতে সেলুনে থাকার বিষয়ে তৈয়ব আলী বলেন, ‘সেদিন আমার স্ত্রীর জন্য ট্রেনের টিকিটের টাকা পাঠাতে বাজারে অপেক্ষা করছিলাম। নিমাই আমার বাল্যবন্ধু। তাই তার দোকানে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে দোকানের শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’ সেলুন থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা স্বীকার করলেও এ ঘটনায় তার বন্ধু নিমাই জড়িত কিনা তা নিশ্চিত নন বলে জানান তিনি।

বিজিবি ১৫ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আশরাফ আলী শাটার বন্ধ থাকা অবস্থায় দোকানের ভেতর থেকে শিক্ষক ও নরসুন্দরকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই রাতে দোকানের ভেতর নিমাই ও তৈয়ব আলীকে পাওয়া গেছে। তাদের দেহ তল্লাশি করে কোনও কিছু পাওয়া না গেলেও দোকানের সুইচ বোর্ডের আড়ালে ২৬ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেকে কলেজ শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। যেহেতু সেলুনের ভেতর ইয়াবা পাওয়া গেছে সেজন্য নরসুন্দর নিমাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

‘চেয়ারম্যানসহ অনেকে বলছিলেন ওই কলেজশিক্ষক বৃষ্টির কারণে ভেতরে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত নন। আমরাও নির্দোষ কাউকে হয়রানি করতে চাইনি। এজন্য তাকে চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে অন্য কোনও বিষয় নেই।’ যোগ করেন সুবেদার আশরাফ।

ইউপি চেয়ারম্যান হাসেন আলী বলেন, ‘কোনও আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটেনি। ওই প্রভাষক যে কলেজের শিক্ষক আমি সে কলেজের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে আগে কখনও মাদকে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাইনি। তিনি ওই দোকানে বৃষ্টির কারণে আটকা পড়েন। এজন্য বিজিবিকে অনুরোধ করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছি।’

ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব বিষয়ে জানতে ওই শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দিয়েছি। কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট বিজিবি ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম তৌহিদুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

/এএম/এলকে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ