‘ঘরের ভেতর সবকিছু তছনছ করে কিছু পায়নি। বাড়ির আঙিনায় খড়ের গাদা থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে আমার ছেলেকে আটক করে নিয়ে যান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। পরে চার্জশিটে দেখানো হয় ঘরের ভেতর থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিবেশী মনছুর নামে এক ব্যক্তি শত্রুতা করে খড়ের গাদায় মাদক রেখে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে। সবার সামনে খড়ের গাদা থেকে মাদক উদ্ধার করলেও এখন চার্জশিটে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে আমার ছেলের জীবন নষ্ট করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আমি এর আইনগত প্রতিকার চাই।’
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সৈয়দ শামসুল হক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ফুলবাড়ী উপজেলার গজেরকুটি গ্রামের আবদার আলী।
আবদার আলীর ছেলে সাইদুল হককে গত ২৪ মে মাদক রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। পরে মামলা করা হয়। ওই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন সাইদুল হক। বাড়ির বাইরে খড়ের গাদায় মাদক রেখে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন বাবা আবদার আলী।
আবদার আলী অভিযোগ করেন, গত ২৪ মে তার বাড়ির উঠানে খড়ের গাদায় ইয়াবা লুকিয়ে রাখেন তারই প্রতিবেশী মনছুর আলী। ওই দিনই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ডেকে এনে মাদক উদ্ধার করে তার ছেলে সাইদুল হককে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়।
তিনি বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বাড়ির বাইরে খড়ের গাদা থেকে মাদক উদ্ধার করলেও চার্জশিটে ঘরের ভেতর মাদক পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও শত্রুতাবশত করা হয়েছে। ওই দিন তাদের অভিযানের সময় স্থানীয় অনেকে উপস্থিত ছিলেন।’
আবদার আলী দাবি করেন, যে মনছুরের কথায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে তার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে সেই মনছুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ছেলের বিয়ের তিন মাস না যেতেই প্রতিপক্ষের লোকজন শত্রুতা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন আমার পুত্রবধূ সংসার করতে চাচ্ছে না। কেন তারা আমার ছেলের এত বড় ক্ষতি করলো? ছেলেকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়ালো? এ বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফুলবাড়ী থানাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তাছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লোকজন আমাকে বলছেন, চার্জশিট হালকা করে দেবে। তা না করে এখন আমার ও আমার ছেলের বড় ক্ষতি করেছেন তারা। সরেজমিনে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীর বিচার দাবি করছি।’
আবদার আলীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবু জাফর বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অভিযান চালানো হয়েছিল। সেটি যৌথ অভিযান ছিল। মামলার এজাহারে উল্লেখিত অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। কাউকে ফাঁসানোর কোনও সুযোগ নেই। ওই যুবকের বাবার অভিযোগ মিথ্যা।’
সহকারী পরিচালক আবু জাফর আরও বলেন, ‘গ্রেফতার সাইদুল হক বিভিন্ন জেলায় মাদক সরবরাহ করে। আগে সে ৩০০ পিস ইয়াবাসহ নাটোরে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও রয়েছে। তার বাবা আবদার আলী ফুলবাড়ীতে পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণ করেছিলেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।’