কুড়িগ্রাম শহরের জিয়া বাজারে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে দেখা মেলে মধ্যবয়সী নারী জোবেদার সঙ্গে। হাতে একটি পলিথিনে সবজি। তাতে কয়েকটি করলা আর বেগুন। আলুর প্রশ্নে জোবেদা জানান, আলুর দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারেননি। কয়েকটি পচা করলা আর বেগুন নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
বাজারের ব্যাগসহ জোবেদার ছবি নিতে চাইলে তাতে সম্মতি দেননি জোবেদা। তিনি জানান, অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার জীবিকা চলতো। কিন্তু স্ট্রোকে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে কাজ করতে পারেন না। আর্থিক সংকটে এখন অনটনে দিন কাটে শহরের খলিফা মোড় এলাকার এই নারী বাসিন্দার।
শুধু জোবেদা নন, সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার অনেকটা আবশ্যিক পণ্য আলু এখন অনেক দিনমজুর ও দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে মিলছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর সংকটের কারণে বাজারে সরবরাহ কম। এজন্য দামও চড়া। সরকার দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে কেনাবেচা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ জেলার হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত আলুর মজুত থাকার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার কুড়িগ্রাম শহরের জিয়া বাজারে আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্ডিনাল জাতের আলুর পাইকারি মূল্য প্রতি ৫ কেজি ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা এবং পাকড়ি/রোমানা জাতের আলু প্রতি ৫ কেজি ২৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে এসব আলু বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৪০ টাকা ও ৬০ টাকা কেজি।
আলু ব্যবসায়ী একরামুল বলেন, ‘বাজারে আলুর সংকট। কেন সংকট তা আমরা জানি না। সংকটের কারণে দামও বেশি। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে এত দাম হইতো না।’
ব্যবসায়ীরা আলুর সংকট বললেও জেলার হিমাগারগুলোর চিত্র ভিন্ন। জেলা কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম জেলায় প্রতি মাসে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন আলুর চাহিদা রয়েছে। দফতরের ১৯ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলার চারটি হিমাগারে এখনও প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীর হাজার হাজার বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষিত থাকলেও অধিক মুনাফার আশায় তারা বাজারজাত করছেন না।
কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের আলুচাষি কাজল বলেন, ‘উৎপাদন, পরিবহন ও হিমাগার খরচ মিলে প্রতি কেজি আলু ২৪ টাকা বিক্রি করলেও চাষিদের লাভ থাকবে। তারপরও কেন আলুর দাম এভাবে বাড়ছে, তা বুঝতে পারছি না। সিন্ডিকেটটা কোথায় সেটা সরকারের খুঁজে বের করা উচিত।’
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ বলেন, ‘কুড়িগ্রামে উৎপাদিত আলু সাধারণত জেলার বাইরে চলে যায়। বাইরের জেলাগুলোতে দাম বেশি হওয়ায় কুড়িগ্রামের স্থানীয় আলু ব্যবসায়ীরা আরও দাম বাড়ার প্রত্যাশা করছেন। ফলে তারা হিমাগার থেকে আলু বের করা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং শুরু করেছি। হিমাগারগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা বেশি পরিমাণে আলু সংরক্ষণ করেও হিমাগার থেকে তুলছেন না তাদেরকে আলু বাজারজাত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’