আদালতের বিচারকাজে হস্তক্ষেপ করায় সমাজসেবা অধিদফতর কুড়িগ্রামের প্রবেশন অফিসার গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কুড়িগ্রাম সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালককে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার প্রতিবেদন আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) কুড়িগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মজনু মিয়া এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী লিয়াকত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে মাদক মামলায় কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা বিপুল আহমেদ (৩৬) নামে এক আসামিকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই সাজা কার্যকর না করে আদালতের নির্দেশে বিপুল আহমেদকে এক বছরের প্রবেশন দেওয়া হয়। পরবর্তী এক বছর জেলা প্রবেশন কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার গোলাম রব্বানীর তত্ত্বাবধানে থাকেন বিপুল। তিনি প্রবেশনের সব শর্ত মেনে চলেন বলে আদালতে নিয়মিত প্রতিবেদন দেন প্রবেশন অফিসার। প্রবেশনকালীন একাধিক ডোপ টেস্টের ফলাফলেও বিপুলের মাদক গ্রহণের বিষয়টি নেগেটিভ আসে। মেয়াদ শেষে ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রবেশন অফিসার গোলাম রব্বানীর সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বিপুলকে সাজা ও প্রবেশন থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেন।
গত ৮ এপ্রিল প্রবেশন অফিসার গোলাম রব্বানী নিজ মতামত পরিবর্তন করে বিপুলকে অব্যাহতি দেওয়া আদালতের আদেশ বাতিল ও প্রবেশনের মেয়াদ বৃদ্ধির পত্র পাঠান। এ নিয়ে বিপুলের আইনজীবী প্রবেশন অফিসারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দেন। প্রবেশন অফিসারের বিরুদ্ধে বিপুলকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আদালতে উপস্থিত হওয়ার হুমকি প্রদানের অভিযোগও করেন আইনজীবী।
আদালতের আদেশ সূত্রে জানা গেছে, একই কর্মকর্তার সুপারিশ ও ডোপ টেস্টের ভিত্তিতে সাজা থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি পাওয়া আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ সংবলিত এমন পত্র উদ্দেশ্যমূলক। একইসঙ্গে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিচারকাজে হস্তক্ষেপের শামিল মনে করেন আদালত। এই অপরাধে প্রবেশন অফিসার গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী লিয়াকত আলী বলেন, ‘আদেশের কপি গত বৃহস্পতিবার সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
অব্যাহতি পাওয়া বিপুল আহমেদ বলেন, ‘আমি মাদক ছেড়েছি। আদালতের সব শর্ত মেনে চলে সাজা থেকে অব্যাহতি পেয়েছি। প্রবেশনকালীন প্রবেশন অফিসার আমাকে দিয়ে বিভিন্ন আসামি খুঁজে বের করে নিতেন। আমি নিজ খরচে বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে আসামি খুঁজতাম। তিনি খরচ দেবেন বলেও দেননি। অব্যাহতি পাওয়ার পরও আমাকে তার আসামিদের খুঁজে নিয়ে আসতে চাপ দিতে থাকেন। অন্যথায় আমাকে আবারও প্রবেশনে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। আমি তার হাত-পা ধরে মিনতি করেও রেহাই পাচ্ছিলাম না। অপারগতা প্রকাশ করায় তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে পত্র দিয়েছেন। আমি ন্যায়বিচার চাই।’
এ ব্যপারে জানতে সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রোকোনুল ইসলাম ও প্রবেশন অফিসার গোলাম রব্বানীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।