পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া আল আমিন নামে এক ইজিবাইক চালককে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ক্ষুব্ধ লোকজন ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘ভোট চোর, ভোট চোর’সহ নানা স্লোগান দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক মিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক এ রেলমন্ত্রীর ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতের বিচারক নাহিদা আকতার জুলিয়েট শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলায় হাজির করার জন্য সুজনকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে নিয়ে আসা হয়।
মামলার শুনানিকালে আদালতের উদ্দেশে সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ‘আমি গত ২০ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি দীর্ঘদিন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদকের দ্বায়িত্বে ছিলাম, সরকারের সাবেক মন্ত্রী ছিলাম। একই দিনে তিনটি ঘটনায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও পঞ্চগড়ের মামলায় আমাকে আসামি করা হচ্ছে। আমি এই ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাকে রাজনৈতিক উদ্দেশে হয়রানি করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে আসা-যাওয়াতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আদালতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার পরিবর্তন না হলে এখানে আসতে হতো না।’ আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সুজন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) অ্যাডভোকেট আদম সুফি, জিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী, এপিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট হাবীব আল আমিন ফেরদৌসসহ অন্তত ১০ জন অংশগ্রহণ করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট মির্জা সারোয়ার হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান আজু, অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট আলী আসমান বিপুলসহ ১০ থেকে ১৫ জন আইনজীবী অংশ নেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মির্জা সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘এজহারনামীয় আসামি নুরুল ইসলাম সুজনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি ছিল। রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ঘটনার সময় সুজন সাহেব মোবাইল ফোনে গুম ও পরে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা শুনানিতে বলেছি, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সেই রেকর্ড বের করা সম্ভব। মামলার বাদী আমাদের একটি অ্যাফিডেভিট দিয়েছেন যাতে তিনি বলেছেন, আসামি সুজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। তার সঙ্গে কোনও শত্রুতা নেই বলে উল্লেখ করেছেন। দীর্ঘ শুনানিতে আমরা তার জামিনের আবেদন করেছি। কিন্তু আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আশা করি তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আদম সুফি বলেন, ‘এটি রহস্যাবৃত। ভিকটিমের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রহস্য উদঘাটনের জন্য এই মামলায় আসামির রিমান্ড প্রয়োজন ছিল। এটি আদালত অনুধাবন করেছেন বিধায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আর আসামিপক্ষ যে অ্যাফিডেভিট দেখিয়েছে আদালতে, তাতে কোনও সাক্ষীর সই নেই। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সেটি সাজানো। আগামী দিনে এই মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ।’
উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৪ আগস্ট থেকে গুম হয় আল আমিন। এ ঘটনায় আল আমিনের বাবা মনু মিয়া গত ১০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনসহ ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা ও গুমের মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।