X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বানের পানি নামলেও কমেনি দুর্ভোগ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২৭ মে ২০২২, ১৫:০৭আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ১৫:১৪

সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলা থেকে বানের পানি নেমে গেছে। উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। তবে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। 

গত পাঁচ দিন ধরে জ্যৈষ্ঠের রোদ ও অনুকূল আবহাওয়ায় বসতঘরের কাঁচা মাটির মেঝে শুকিয়ে গেছে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে কোনও কোনও বসতঘরের আঙিনা ও সড়কে পানি জমে আছে। নষ্ট হয়েছে বোরো ধান, সবজি ক্ষেত, পুকুর, সড়ক অবকাঠামো, সেতু ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।

সুনামগঞ্জ শহরের কেজাউড়া কাঠমিস্ত্রি গ্রামের রতন পাল বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে স্বামী, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরে ফিরে আসি। ঘরের মেঝেতে প্রচুর কাদা হয়েছে। তাই সংসারের জিনিস এখনও উঁচু স্থান থেকে মাটিতে নামানো যাবে না। রান্নার চুলা বানের পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন অস্থায়ী চুলায় রান্না চলছে।’

রতনের স্ত্রী রিংকু পাল বলেন, ‘বানের পানি থেকে সংসারের জিনিসপত্র রক্ষা করতে উঁচু স্থানে রেখে গিয়েছিলাম। ঘরের মাটি শুকরো হলে এগুলো নিচে নামাবো।’

কয়েকটি বসতঘরের আঙিনা ও সড়কে পানি জমে আছে

একই এলাকার সুশংকর বিশ্বাস বলেন, ‘বন্যার সময় পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন পানি নেমে গেছে। তাই ঘরে ফিরে এসেছি। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।’

শহরের সুলতানপুর এলাকার তাজুদ আলী বলেন, ‘বানের পানি নেমে গেলেও ১০ দিনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চারপাশের টিনের বেড়া ভেঙে গেছে। বাঁশের পালার গোড়া পচে গেছে। তাই ঘরে বাঁশ পালা না লাগানো পর্যন্ত ঘরে থাকা যাবে না। এজন্য দরকার নগদ টাকা ও ঢেউ টিন। এখন ভাত খাওয়ার চাল কেনার টাকা নেই, টিন কিনবো কীভাবে?’

রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘বন্যায় রোজগার বন্ধ ছিল। দান-খয়রাত পেয়ে দিন কেটেছে। এখন ত্রাণের চেয়ে বেশি দরকার ঘর বানানোর টিন ও নগদ টাকা।’

নষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত, পুকুর, সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

রিকশাচালক আইনুদ্দিন বলেন, ‘বানের পানিতে রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ চালিয়েছি। স্ত্রী ও সন্তান অন্যের বাড়িতে কাজ করে। তা দিয়ে সংসার চলে। এখন ঘর সংস্কারের জন্য নগদ টাকা ও ঢেউ টিন দরকার।’

এদিকে ১১০০ হেক্টর বোরো দান, আউশ ধান ১৩০ হেক্টর, বীজতলা ৫০ হেক্টর, সবজি ক্ষেত ৮০ হেক্টর, বাদাম ক্ষেত ১০০ হেক্টর বানের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ১৩০০ পুকুরের মাছ, ৫০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সহযোগিতা করা হবে ‘ 

জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সরকার ও প্রশাসন বানভাসি মানুষেরর পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছেন। তালিকা তৈরি শেষ হলে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। 

বসতঘরের কাঁচা মাটির মেঝে শুকিয়ে গেছে

সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক জানান, বন্যায় ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসন সরকার ও আওয়ামী লীগ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কোনও মানুষ কষ্টে থাকবে না। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল হক বলেন, ‌‘উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সুনামগঞ্জে সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ১৭ মে সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্ট ও ছাতক পয়েন্টে সুরমা নদী, তাহিরপুরে শক্তিরখলা ও লাউড়েরগড় গ্যাজ স্টেশনে নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যায়। শুরু হয় পানি বৃদ্ধি। সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ির ঘাট, বড়পাড়া, তেঘরিয়া কালিপুর, হাছনবসত, সুলতানপুর, শান্তিবাগ, পাঠানবাড়ি, জলিলপুর ওয়েজখালী এলাকার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে বানের পানি ঢুকে পড়ে। শুরু হয় বানিভাসি মানুষের দুর্ভোগ। এই সময়ে জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। 

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
তলিয়ে গেছে দুবাই বিমানবন্দর, বিপাকে প্রবাসীরা
৭৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টি দেখলো আমিরাত, মরু শহর দুবাইয়ে বন্যা
কাজাখস্তানে ভয়াবহ বন্যা, প্রায় এক লাখ মানুষ স্থানান্তর
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা