X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানবতাবিরোধী অপরাধ, শফিকে গ্রেফতার করে রায় কার্যকরের দাবি

ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ
০১ জুলাই ২০২২, ০৪:১৪আপডেট : ০১ জুলাই ২০২২, ০৪:১৪

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মাওলানা শফি উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ও তাজুল ইসলাম, জাহেদ মিয়া, ছালেক মিয়াকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। এমন রায়ে এলাকায় আনন্দ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক মাওলানা শফি উদ্দিনকে খুঁজে বের করে অবিলম্বে রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মাওলানা শফি উদ্দিন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মোড়াকরি ইউনিয়নের মানপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন একই উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়নের মুড়িয়াউক গ্রামের মাহতাব মিয়ার পুত্র মো. তাজুল ইসলাম ওরফে পোকন রাজাকার, একই গ্রামের মৃত আসক উল্লাহর পুত্র মো. জাহেদ মিয়া, জিরুন্ডা গ্রামের মৃত আব্দুস ছত্তারের পুত্র মো. ছালেক মিয়া ওরফে ছায়েক মিয়া।

মানপুর গ্রামের ইকবাল মিয়া বলেন, মাওলানা শফি উদ্দিনকে ফাঁসির রায় দেওয়ায় এলাকায় স্বস্তি বিরাজ করছে, আমরা খুবই আনন্দিত।

মোড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও মানপুর গ্রামের মোশাহিদ মিয়া বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মাওলানা শফি উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ায় আমি ও আমার ওয়ার্ডবাসী আনন্দিত। তবে মাওলানা শফি উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছে, উনাকে দ্রুত খুঁজে বের করে শাস্তি কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।

মোড়াকরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মোল্লা বলেন, একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে যারা এলাকায় হত্যাযজ্ঞসহ নির্যাতন নিপীড়ন পরিচালনা করেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম মাওলানা শফি উদ্দিন। তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ায় আমরা আনন্দিত। অতি দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।

মুড়িয়াউক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোমান মিয়া বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় মো. তাজুল ইসলাম (৮০), মো. জাহেদ মিয়া (৬২) ও ছালেক মিয়াকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ায় আমি এবং আমার ইউনিয়নবাসী খুবই আনন্দিত।

লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে লাখাইয়ের চিহ্নিত রাজাকার শফি উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তাজুল ইসলাম, জাহেদ মিয়া, ছালেক মিয়াকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এ রায়ে আমরা অনেক আনন্দিত।

তিনি বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। খুব দ্রুত এলাকায় ফিরে এ রায়কে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ও তৃণমূল পর্যায়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ তদন্ত শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ শেষ হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত শেষে মামলায় মোট ২১ জনকে সাক্ষী করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ:

০১. ১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ২টার সময় আসামি মাওলানা মো. শফি উদ্দিন, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানার মুড়িয়াউক গ্রামে এমএনএ মোস্তফা আলীর (আওয়ামী লীগ সমর্থক) বাড়িসহ প্রতিবেশী ১০/১২টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। গান পাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।

০২. ১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ৩টার সময় আসামি মাওলানা মো. শফি উদ্দিন, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানার মুড়িয়াউক গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মো. ইলিয়াস কামালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা মো. ইদ্রিস মিয়াকে অপহরণ করে হাত-পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ইসমাইল মাওলানার বাড়িতে নিয়ে আটক ও নির্যাতন করে।

একই সময় আসামি মো. শফি উদ্দিন, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার এবং একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানার মুড়িয়াউক গ্রামের আব্দুল জব্বারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহানকে খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু তাকে না পেয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের বৃদ্ধ বাবা আব্দুল জব্বারকে অপহরণ করে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ইসমাইল মাওলানার বাড়িতে আটক ও নির্যাতন করে। একই দিন বিকালে ওই রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা অপহৃত ইদ্রিস মিয়া ও আব্দুল জব্বারকে নৌকাযোগে লাখাই থানার উজাদার বিলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়।

/এমপি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ