টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় দফা বন্যায় সিলেটের মানুষের যেন দুর্ভোগ আর দুর্দশার কোনও শেষ নেই। এখন পর্যন্ত আট লাখের বেশি মানুষ এই বন্যার কবলে পড়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন প্রায় ২০ হাজার। ২০২২ সালে যেভাবে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, এবারের বন্যা সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে সিলেটবাসীকে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ভোর থেকে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে কিছুটা পানি কমতে দেখা গেছে। তবে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি হয়নি। এদিকে সিলেটের নদ-নদীর পানি সবক’টি পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ওপরে রয়েছে।
এর আগে, গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিলেও তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রথম দফার বন্যার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শনিবার (১৫ জুন) থেকে দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়ে সিলেট।
সিলেট আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটে আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল থেকে বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বুধবার রাতে সিলেটে বৃষ্টি কম হওয়া এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় বিপদসীমা থেকে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটে বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জনে। একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় এক লাখ। নগরের ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জেলা ও নগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে এক হাজার ৫৪৮টি গ্রাম।