হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে ইজারা ছাড়াই দিনারপুর জনতার বাজারে স্থাপিত অবৈধ পশুর হাটের খাজনা আদায় করতো উপজেলা প্রশাসন। বাজারে রসিদ ছাড়াও হাসিল আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অবশেষে অবৈধ জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপম দাস অনুপ বাজার অপসারণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইতোমধ্যে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অবৈধ জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণ করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে টানানো হয়েছে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় সড়ক ও মহাসড়কে নিরাপদ, যানজটমুক্ত এবং গতিশীল যান চলাচল নিশ্চিতকল্পে দিনারপুর জনতার বাজারটি (পশুর হাট) বর্তমানে পেরিফেরিভুক্ত নয়। পশুর হাট বসার দিন মহাসড়কে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণরেখার মধ্যে অবৈধভাবে স্থাপিত দিনারপুর জনতার বাজার পশুর হাটটি জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিদের্শনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অবৈধভাবে স্থাপিত জনতার বাজার পশুর হাট জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অপসারণ করার জন্য এবং ওই স্থানে পুনরায় বাজার স্থাপন করা হলে মহাসড়ক আইন, ২০২১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অবৈধ জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণ করতে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটের বৃহত্তম পশুর হাট নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুরের জনতার বাজারে প্রতিবছর কোটি টাকার গরু-ছাগল বিক্রি হয়। ঈদুল আজহার আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জনতার বাজারে গরু-ছাগল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। প্রতি শনি ও সোমবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় পাশে জনতার বাজার পশুর হাট বসে। এতে প্রায় ৪-৫ হাজার গরু-ছাগল ওঠে। এ সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদেরও উপচে পড়া ভিড় থাকে।
সূত্র বলছে, মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় ইজারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না সিলেটের অন্যতম বৃহৎ এই বাজারকে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মামলা জটিলতায় ইজারা দিতে না পারা জনতার বাজারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসিল আদায় করা হয়। উপজেলা খাজনা আদায় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জনতার বাজার পশুর হাটে একটি স্থায়ী বুথ রয়েছে। ঈদের সময় চারটি অস্থায়ী বুথ বসিয়ে আদায় করা হতো হাসিল। রসিদের মাধ্যমে ওঠা টাকা জমা হতো সরকারি কোষাগারে। তবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রসিদ ছাড়াও হাসিল আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
অবৈধ স্থাপিত জনতার বাজার পশুর হাট নিয়ে ‘মহাসড়কে পশুর হাট, যানজটে ভোগান্তি’, ‘খুঁটিতে গরু বাঁধলেই দিতে হয় টাকা’, ‘রসিদ ছাড়া হাসিল আদায়’সহ বিভিন্ন শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউন-এ একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর অবৈধভাবে স্থাপিত জনতার বাজার পশুর হাট বসায় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টির ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিসহ বাজারসংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপম দাস অনুপ বলেন, ‘অবৈধভাবে স্থাপিত জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি আদেশ অমান্য করে কেউ পশুর হাট বসায় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’