‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি, এক নম্বর ক্ষতি করা হয়েছে। দেশের নাগরিকদের দক্ষ করে তোলা এবং জনসম্পদে পরিণত করার দর্শনকে কবর দেওয়া হয়েছিল ওই ঘটনার মাধ্যমে’। বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (২৭ আগস্ট) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আনিস আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘জ্ঞান সৃজন ও দক্ষতা অর্জনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ড. কুদরৎ-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন করেছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে ক্ষতির তালিকা তৈরি হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি, এক নম্বর ক্ষতি করা হয়েছিল শিক্ষা ক্ষেত্রে। কারণ, জাতির প্রত্যেক নাগরিককে দক্ষ করে তোলা এবং জনসম্পদে পরিণত করার যে দর্শন তার ছিল সেটাকে কবর দেওয়া হয়। তার ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেখা হয়েছে দল ভারী করা, ক্যাডার তৈরি করা, অপরাজনীতির সূচনার জায়গা হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেখা হতো সেনা ছাউনি থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে বিশেষায়িত দর্শন ছিল তা ডিপারচার হয়ে এমন সম্প্রসারণ হয়, পরবর্তীতে আমাদের দেশে লক্ষ-কোটি গ্র্যাজুয়েট পাচ্ছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুযায়ী দক্ষতানির্ভর যদি গ্র্যাজুয়েট পেতাম, অনেকেই বলছেন দক্ষতা ও জ্ঞানের জায়গাটাতে স্বল্পতা রয়ে যাচ্ছে। ’
বেসরকারি উচ্চশিক্ষায় দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি খাতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব উদ্যোক্তাকে অনুরোধ জানাতে চাই—আমরা যাতে মূল্যবোধও দিতে পারি, বঙ্গবন্ধু তার জীবনে যেগুলো চর্চা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, তিনি মানুষের মধ্যে সমতা দেখতেন, নারী ও পুরুষের সমতা দেখতেন। ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নাগরিক হবে, মানুষের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। আমরা যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসব মূল্যবোধ শেখাতে না পারি তাহলে সুনাগরিক পাবো না। ধর্ম বা শ্রেণি বিশেষে অন্যকে নিচু করে দেখলে বিশ্বনাগরিকও হতে পারবো না।’
উপমন্ত্রী দক্ষ নাগরিক তৈরির আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘৯৯ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট কর্মজগতে প্রবেশ করেছে। তবে আমরা এখনও দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে পিছিয়ে আছি।’