X
শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
২১ আষাঢ় ১৪৩২

কান উৎসবের ডাক পেয়ে ইতিহাসের পাতায় স্পাইক লি

জনি হক
১৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০আপডেট : ২০ মার্চ ২০২০, ১৬:১৮

স্পাইক লি আমেরিকান পরিচালক স্পাইক লি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা, সম্পাদক ও প্রযোজক। কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৩তম আসরে বিচারকদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত ছবিগুলোর মধ্যে কোনটি স্বর্ণ পাম জিতবে সেই গুরুদায়িত্ব থাকছে ৬২ বছর বয়সী এই নির্মাতার কাঁধে। তিনিই তুলে দেবেন সম্মানজনক পুরস্কারটি। এবারই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ কোনও পরিচালক কানে বিচারকদের সভাপতি হলেন। তাই তার নাম ঢুকে গেলো ইতিহাসের পাতায়।

স্পাইক লি’র নেতৃত্বে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে কাজ করবেন আরও কয়েকজন বিচারক। তাদের নাম জানানো হবে আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি। আগামী ১২ মে শুরু হয়ে এবারের উৎসব চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। আজ (১৪ জানুয়ারি) উৎসব আয়োজকরা ইমেইল বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছেন। স্পাইক লি’কে এই আয়োজনে আজীবন সম্মাননা হিসেবে সম্মানসূচক পাম দ’র দেওয়া হবে।

চার দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য ছবি বানিয়েছেন স্পাইক লি, সময়ের সঙ্গে যেগুলো পেয়েছে ধ্রুপদী মর্যাদা। সমকালীন সিনেমায় নানান প্রশ্ন ও বিতর্কিত বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। জনসাধারণের দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের একের পর এক ছবিতে যৌক্তিকতার সঙ্গে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। কৃষ্ণাঙ্গদের চিরকালের দুঃখ, যন্ত্রণা আর বৈষম্যের কবিতা বলা যায় তার প্রতিটি কাজকে।

বরাবরই মুঠো শক্ত রেখে কাজ করেন স্পাইক লি। গত বছর কান উৎসবের লালগালিচায় দুই হাতের আঙুলে ‘লাভ’ (ভালোবাসা) ও ‘হেট’ (ঘৃণা) শব্দ লেখা আংটি পরে হাজির হয়ে আলোচনার জন্ম দেন তিনি।

স্পাইক লি’র কাজে ও চলাফেরায় যেন চিরন্তন কিশোরের প্রতিফলন পাওয়া যায়। স্নিকার ও ক্যাপ ছাড়া কখনও তাকে দেখা যায়নি জনসমক্ষে। তিনি রসিক ও অদম্য, বাকপটু ও বলিষ্ঠ, কখনও রাগী আর সবসময় ব্যস্ত!

স্পাইক লি কান উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃবিতে স্পাইক লি বলেন, ‘তাদের (কান উৎসবের আয়োজক) কাছ থেকে হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে ডাক পাওয়া আমার জন্য বড় আশীর্বাদ। ২০২০ সালের কানের বিচারকদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে একইসঙ্গে হতবাক ও খুশি হয়েছি, চমকে গিয়েছি আর গর্ববোধ করেছি। আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে কান উৎসবের (বিশ্বের অন্যান্য চলচ্চিত্র উৎসবের পাশাপাশি, কাউকে খাটো করছি না) ভীষণ প্রভাব রয়েছে। অনায়াসে বলতে পারি, বিশ্ব সিনেমায় আমার গতিপথ বদলে দিয়েছে কান।’

স্পাইক লি’র ইতিবাচক সাড়া পেয়ে কান উৎসবের সভাপতি পিয়েরে লেসকিউর ও উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো আনন্দিত। তারা বলেন, “স্পাইক লি’র দৃষ্টিভঙ্গি অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে মূল্যবান। যারা (পুনরায়) জেগে ওঠেন এবং আমাদের অবস্থান ও চেনা ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারেন তাদের জন্য কান একটি প্রাকৃতিক স্বদেশ ও বৈশ্বিক ধ্বনির জায়গা। তার শিহরণ জাগানো ব্যক্তিত্ব নিশ্চিতভাবেই এসব ব্যাপারকে নাড়া দেবে। কেমন জুরি সভাপতি হবেন তিনি? কানে এসে সেটাই দেখুন!”

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টায় ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন স্পাইক লি। বেড়ে উঠেছেন নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে। প্রকৃত নাম শেলটন জ্যাকসন লি। শুরুতে লেখালেখিকে গুরুত্ব দিতেন। নিজের সব চিত্রনাট্য নিজেই লিখতেন। আমেরিকান সিনেমার মুক্তমনা মানুষটি শুরু থেকেই নিজের প্রতিটি ছবিতে জোরালো ও সাহসী বিষয়, ক্ষুরধার পরিচালনা, বলিষ্ঠ সংলাপ, ছন্দময় দক্ষতা ও জুতসই গানের সম্মিলন ঘটিয়েছেন।

১৯৮৬ সালে কান উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে স্পাইক লি’র প্রথম ছবি “শি’জ গটা হ্যাভ ইট’ ইয়ুথ প্রাইজ জেতে। এরপর ১৯৮৯ সালে মূল প্রতিযোগিতায় স্থান করে নেয় তার ‘ডু দ্য রাইট থিং’। ১৯৯১ সালে ‘জঙ্গল ফিভার’ ছবির মাধ্যমে আবারও প্রতিযোগিতা বিভাগে ফেরেন তিনি। আউট অব কম্পিটিশন বিভাগে ১৯৯৬ সালে দেখা গেছে ‘গার্ল সিক্স’। ১৯৯৯ সালে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে ছিল তার ‘সামার অব স্যাম’। ২০০২ সালে তার ‘টেন মিনিটস ওল্ডার’ জায়গা পায় আঁ সাঁর্তে রিগারে। সব মিলিয়ে পাঁচবার কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে স্থান করে নিয়েছে তার কাজ।

২২ বছর পর ২০১৮ সালে ‘ব্ল্যাকক্ল্যান্সম্যান’ ছবির মাধ্যমে কান উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে ফেরেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিন নিবাসী স্পাইক লি। বুড়িয়ে গেলেও ক্যামেরার পেছনে তেজ ও শৈল্পিক মনোভাবের সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তিনি। দারুণ রসবোধ, গোয়েন্দাধর্মী থ্রিলার ও রাজনৈতিক আবহে সাজানো ছবিটি কানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রাঁ প্রিঁ পেয়েছে। এরপর চিত্রনাট্যকার হিসেবে প্রথমবার অস্কার জেতেন তিনি। ১৯৮৯ সালে ‘ডু দ্য রাইট থিং’ ছবির জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যকার বিভাগে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তাকে। তবে ওইবার পুরস্কার জোটেনি কপালে। অবশেষে ৯১তম আসরে অস্কারের সোনালি মূর্তি পান তিনি। এর আগে ২০১৫ সালে সম্মানসূচক অস্কারে ভূষিত করা হয় তাকে।

অস্কারজয়ের দিন স্পাইক লি স্পাইক লি’র ছবির তালিকায় আরও উল্লেখযোগ্য– ‘ম্যালকম এক্স’ (১৯৯২), ‘গেট অন দ্য বাস’ (১৯৯৬), ‘হি গট গেম’ (১৯৯৮), ‘দ্য ভেরি ব্ল্যাক শো’ (২০০০), ‘শি হেট মি’ (২০০৪), ‘ইনসাইড ম্যান’ (২০০৬), প্রামাণ্যচিত্র ‘ফোর লিটল গার্লস’, ‘হোয়েন দ্য লেভিস ব্রোক: অ্যা রিক্যুইয়েম ইন ফোর অ্যাক্টস’ (২০০৪)।

পথিকৃত হিসেবে নতুন প্রজন্মের আফ্রিকান-আমেরিকান পরিচালকদের জন্য পথ সুগম করে দিয়েছেন স্পাইক লি। যেমন রায়ান ‍কুগলার (ব্ল্যাক প্যান্থার), জর্ডান পিলে (গেট আউট), ব্যারি জেনকিন্স (মুনলাইট), অ্যাভা ডুভারনে (সেলমা)।

গতবার কান উৎসবে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বিচারকদের সভাপতি ছিলেন মেক্সিকান নির্মাতা আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু। তিনি স্বর্ণ পাম দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বঙ জুন-হো পরিচালিত ‘প্যারাসাইট’কে। বিশ্বব্যাপী সিনেমা হলে ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়ার পর কয়েকদিন আগে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসে সেরা বিদেশি ভাষার ছবির পুরস্কার জিতেছে এটি। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ৯২তম অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রসহ ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ‘প্যারাসাইট’।

কানের ইতিহাসে এশিয়ার একমাত্র নির্মাতা হিসেবে হংকংয়ের ওঙ কার-ওয়াই বিচারকদের সভাপতিত্ব করেছেন। ১৯৯৭ সালে প্রথম আফ্রিকান বংশোদ্ভুত তারকা হিসেবে ফরাসি অভিনেত্রী ইজাবেল আজানি বিচারকদের নেতৃত্ব দেন। তার বাবা ছিলেন আলজেরিয়ান।

আরও পড়ুন-

৯১তম অস্কার: অবশেষে অস্কার জিতলেন স্পাইক লি

গ্রাঁ প্রিঁ পেলেন স্পাইক লি

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বান

৪ মিনিটের করতালি ৬ মিনিটের অভিবাদন

/এমএম/
সম্পর্কিত
এবার কান-আবাসিকে সুযোগ পেলেন তারা
এবার কান-আবাসিকে সুযোগ পেলেন তারা
প্রসঙ্গ ‘কান’ পোশাক: অঞ্জনার নিশানায় কে
প্রসঙ্গ ‘কান’ পোশাক: অঞ্জনার নিশানায় কে
কান নিয়ে হুমার ‘খোঁচা’ ও প্রত্যাশা
কান নিয়ে হুমার ‘খোঁচা’ ও প্রত্যাশা
কান ২০২৪: স্বর্ণপামসহ পুরো বিজয়ী তালিকা
কান ২০২৪: স্বর্ণপামসহ পুরো বিজয়ী তালিকা
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
প্রকৃতিকন্যা মিম
প্রকৃতিকন্যা মিম
সামনে এলো সালমানের নতুন সিনেমার ফার্স্টলুক
সামনে এলো সালমানের নতুন সিনেমার ফার্স্টলুক
গোয়েন্দা সিরিজ নির্মাণে ফেরদৌস ওয়াহিদ
গোয়েন্দা সিরিজ নির্মাণে ফেরদৌস ওয়াহিদ
‘সুশান্তের মতো কার্তিককেও সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে’
‘সুশান্তের মতো কার্তিককেও সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে’
আই উইল বি আ মাদার: জায়েদ খানকে তিশা
আই উইল বি আ মাদার: জায়েদ খানকে তিশা