X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে এসে সুমন বললেন: এমন ভালোবাসা আগে টের পাইনি

ওয়ালিউল বিশ্বাস
০৮ আগস্ট ২০২১, ০০:০৩আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২১, ২০:৫৬

সাইদুস খালেদ সুমন। মূলত ‘বেজবাবা’ নামে পরিচিত। গিটারের তুমুল ঝংকারের পাশাপাশি তার কথা-সুর আর দরাজ কণ্ঠও দারুণ সমাদৃত। অর্থহীন ব্যান্ডের এই দলনেতা পাঁচ মাস ধরে চিকিৎসার জন্য ছিলেন ব্যাংকক ও দুবাইয়ে। মার্চের শুরুতে ব্যাংককের সামিতিভেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে দুবাইয়ের মেডিক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার (৬ আগস্ট) ভোরে তিনি ঢাকায় ফেরেন। ফিরেই বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তুলে ধরলেন দুঃসহ পাঁচ মাসের ঘটনা প্রবাহ।

পাঠকদের বলে রাখা দরকার, ২০১৭ সালে সার্জারির পর ব্যাংককের হাসপাতাল থেকে ফিরছিলেন এই গায়ক। এমন সময় হঠাৎ তাকে একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। এরপর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সুমনের শরীরে প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে ৯টি সার্জারি করা হয়। ব্যাংককের ওই দুর্ঘটনায় তার স্পাইনাল কর্ডের ক্ষতি হয়। তখন তার মেরুদণ্ডের দুটি ডিস্কও পরিবর্তন করা হয়েছিল। এখন তিনি সেই জটিলতাতেই ভুগছেন। সঙ্গে রয়েছে পুরনো অসুখ ক্যানসারের বিধিনিষেধও।

বাংলা ট্রিবিউন: ডজন খানেক অস্ত্রোপচার করেছেন শরীরে। কেটে ফেলতে হয়েছে পাকস্থলীর একাংশ। কিন্তু এবারের মেরুদণ্ডের সমস্যা তো অন্য সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত পাঁচ মাস কেমন কেটেছে আপনার?

সুমন: আমার স্পাইনের অবস্থা খুবই বাজে ছিল। একেবারে ভাঙা। মার্চের শুরুতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যখন ব্যাংককে নেওয়া হয়, তখন সরাসরি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। 

শুধু হাড় ভাঙা নয়, এটা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে নার্ভগুলো বেশ বাজেভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। এ কারণে ঢাকায় আমি বিছানায় পড়ে গিয়েছিলাম একেবারে। ওরা প্রথমে সার্জারি করার সাহস পায়নি। মানে খুবই জটিল অবস্থা ধারণ করেছিল। 

আলট্রা সাউন্ড ভাইব্রেশন দিয়ে নার্ভের একটা ট্রিটমেন্ট করে। এরপর শুরু হয় ফিজিওথেরাপি। খুবই আস্তে আস্তে ভালো হওয়া শুরু হয়। সেখানে আমি দেড় মাসের মতো হাসপাতালেই ছিলাম। 

বাংলা ট্রিবিউন: এরপরই কি দুবাই চলে গিয়েছিলেন?

সুমন: না, কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আমি ব্যাংককের একটি হোটেলে উঠি। কিন্তু সেখান থেকে আমি প্রতিদিন হাসপাতালে যেতাম ও ফিজিওথেরাপি নিতাম।

মোটামুটি ভালো হওয়ার পর আমি দুবাই যাই। এরচেয়ে বেটার ট্রিটমেন্ট হলো জার্মানিতে। কিন্তু করোনার সেকেন্ড ওয়েভের কারণে সেটা সম্ভব নয়। ইউরোপে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। তাই দুবাই গেলাম। সেখানে গিয়েই তো আরেক ঝামেলায় পড়লাম। আমার ল্যাঙে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলো।

২-৩ বছর আগে একটা সার্জারির সময় এমনিতে আমার বাঁ পাশের ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সেবার মরতে মরতে বেঁচে আসি। ঠিক একই ফুসফুসে এই সংক্রমণটা হয় এবারও। ফলে আবারও মৃত্যুর মুখে পড়ে গিয়েছিলাম।

ফিরে এসে সুমন বললেন: এমন ভালোবাসা আগে টের পাইনি বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে কি ব্যাংককেই আপনি ভালো ছিলেন, এমন? দুবাইয়ে জটিলতা তৈরি হয়ে গেল!

সুমন: ফুসফুসের ঘটনা অন্য। এটা স্পাইনের কোনও ট্রিটমেন্টের কারণে হয়নি। আর দুবাই যাওয়ার আরও একটি কারণ ছিল। আমার বাবা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে দুবাই নেওয়া হয়েছিল। একদিকে আমি এভাবে ব্যাংককে পড়ে আছি, অন্যদিকে বাবার এমন অবস্থা! সব মিলিয়ে আমাদের পুরো পরিবারের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। আপনারা হয়তো জানেন, আমি নিজেকে খুব একটা পাত্তা দেই না। জীবনে এত এত মেজর সার্জারি প্রায় হাসিমুখে করেছি। কিন্তু পরিবারের সদস্য যখন গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, সেটা মেনে নিতে পারছিলাম না। এ কারণেও আমার ট্রিটমেন্ট দুবাইয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন বাবাও বেশ ভালো আছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার অবস্থা এখন কেমন? যাওয়ার আগে বলেছিলেন, দুঃসহ ব্যথার মধ্যে সময় পার করতে হচ্ছে।

সুমন: আমার ব্যথার অবস্থা এমন ছিল যে, দাঁড়ানো তো দূরের কথা, বসতেও পারছিলাম না। সারাটা সময় পেইনকিলার খেয়ে শুয়ে থাকতে হতো।

পেইনের ইনজেকশন নিলে বড়জোর ৩৫-৪০ মিনিট দাঁড়াতে পারতাম। তাও লাঠিতে ভর দিয়ে। আপনাদের হয়তো মনে আছে, আমি সর্বশেষ জয় বাংলা কনসার্টে অংশ নিয়েছিলাম।

ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। তার কারণেই সেদিন সেখানে যাই। এর আগে ক্লিনিকে গিয়ে আমি শরীরে উচ্চমাত্রার ব্যথার ওষুধ ইনজেক্ট করেছিলাম। মাইক্রোবাসে শুয়ে আমি কনসার্টে যাই। মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে আমি গাড়িতে ব্যাক করি। অবস্থা আমার এতটাই খারাপ ছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: এখন তাহলে অবস্থা কেমন?

সুমন: দুবাইয়ে ট্রিটমেন্টের পর দেখলাম আমি শুধু বসে থাকা নয়, আমি টানা কয়েক ঘণ্টা হাঁটতে পারছি! বসে থাকতে পারি ৫-৬ ঘণ্টা। গাড়ি চালাতে পারি ৪-৫ ঘণ্টা। আর হাঁটতে পারছি ২-৩ কিলোমিটার। বেশ ভালো এখন।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে তো জার্মানিতে আর যেতে হচ্ছে না? নাকি সার্জারিও করতে হবে?

সুমন: না, আমার আরও দুটা সার্জারি লাগবে। একটা দুই-আড়াই বছর পর করতে হবে। আরেকটা বছর খানেকের মধ্যে লাগবে। যেহেতু এখন করোনার নতুন নতুন ওয়েভ আসছে তাই আপাতত আর জার্মানিতে যাওয়ার রিস্ক নেবো না। তারাও পুরোপুরি ভিসা ওপেন করুক; তখন যাবো।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে এখন আপনার চিকিৎসা কী চলছে? ফিজিওথেরাপির কোর্স কি শেষ?

সুমন: এখনও আমার ফিজিওথেরাপি চলবে। ঢাকাতেই নেবো। আল্ট্রা সাউন্ড আর লাগবে না। আর ফিজিওথেরাপির সব তো আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। এটা আমি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিতে থাকবো। আশা করছি, এক বছরের মধ্যে জার্মানি ওপেন হবে। তখন সেখানে গিয়ে অস্ত্রোপচার করবো।

গত বছর হাসপাতাল থেকে সুমন বাংলা ট্রিবিউন: যেহেতু আপনি গানের লোক। এখন বেশ সুস্থও। মাথার মধ্যে কোনও গান কি খেলা করছে? আপনি এখন দীর্ঘ সময় বসে থাকতেও পারেন। নিশ্চয়ই স্টুডিওতেও বসবেন।

সুমন: হ্যাঁ, আমি এখন আমাদের পৈতৃক বাড়িতে আছি। এখানে ছোট স্টুডিও আছে। এখানে বসেই গান তৈরির পরিকল্পনা করছি। আমরা সবাই তো এখন রিমোটলি আছি। এভাবেই যে যার জায়গা থেকে কাজ করে একত্রিত করবো। বেশ কিছু কাজ পেন্ডিংও আছে। সেগুলোও করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: ব্যান্ড অর্থহীনের জন্য কিছু ভাবছেন কি?

সুমন: দলের সদস্য শিশির দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরলেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে। আমি চাইছি, আগামী এক মাসের মধ্যে অর্থহীনের নতুন গান প্রকাশ করতে। ভক্তদের জানাতে চাই আমি ফিরে এসেছি, গানের জন্য, তাদের ভালোবাসার জন্য। আমি আসলে সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এত দীর্ঘ সময় যেমন আমি টানা দেশের বাইরে থাকিনি, তেমনি সবার এমন ভালোবাসা আগে টের পাইনি। সবাইকে ধন্যবাদ।

সুমনের গাওয়া শেষ প্রকাশিত গান ও প্রথম প্লেব্যাক

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
‘ম্যাভরিক’-এর শুভেচ্ছাদূত হলেন বেজবাবা সুমন
‘ম্যাভরিক’-এর শুভেচ্ছাদূত হলেন বেজবাবা সুমন
গানের চেয়েও বেশি কিছু নিয়ে ফিরলো ‘অর্থহীন’ (ভিডিও)
গানের চেয়েও বেশি কিছু নিয়ে ফিরলো ‘অর্থহীন’ (ভিডিও)
বেজবাবার কাছে জেমস একজন ‘অসম্ভব’!
শুভ জন্মদিনবেজবাবার কাছে জেমস একজন ‘অসম্ভব’!
অ্যালবামের সুখবর দিলেন বেজবাবা সুমন
অ্যালবামের সুখবর দিলেন বেজবাবা সুমন
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘লম্বা’ নায়িকা প্রসঙ্গে কৃতির ব্যাখ্যা
‘লম্বা’ নায়িকা প্রসঙ্গে কৃতির ব্যাখ্যা
জানা-অজানা ১০ তথ্যে সত্যজিৎ রায়
প্রয়াণ দিনে স্মরণজানা-অজানা ১০ তথ্যে সত্যজিৎ রায়
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
‘ওপারে ভালো থেকো বন্ধু’
অভিনেতা রুমির মৃত্যু‘ওপারে ভালো থেকো বন্ধু’
ফ্লপে হ্যাটট্রিক, মুখ খুললেন অভিনেত্রী
ফ্লপে হ্যাটট্রিক, মুখ খুললেন অভিনেত্রী