কবীর সুমনের আধুনিক গানে কম-বেশি সবারই মুগ্ধতা। কিন্তু তিনি নিজে মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছেন বাংলা খেয়ালে। তার মতে, খেয়াল গাওয়ার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। যদিও সংগীতের এই ধারা খুব একটা জনপ্রিয় নয় কিংবা তিনিও ‘কথিত’ সাফল্য পাননি; এরপরও খেয়ালের প্রতি তার আবেগ সর্বোচ্চ।
সেই আবেগের কয়েক ছটা ছিটিয়ে দিলেন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিকালে বসেছে কবীর সুমনের বাংলা খেয়াল অনুষ্ঠান। সেখানেই নিজের সৃষ্টি করা খেয়াল পরিবেশন করেছেন তিনি। একইসঙ্গে শুনিয়েছেন এই সংগীত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গল্প।
নিখাদ সংগীতানুরাগীরাই মূলত খেয়ালের শ্রোতা। তা এদিনের মিলনায়তন দেখেই বোঝা যায়। আধুনিক গানে যত শ্রোতার ভিড় ছিলো, মঙ্গলবার সেটা অনেকটা কম লক্ষ্য করা গেছে। এরপরও মিলনায়তনের সিংহভাগ আসন পূর্ণ ছিলো শ্রোতায়। সুমনের খেয়াল ও গল্প শুনে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে। যা দেখে সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন এ গায়ক। তাই বললেন, ‘এই যে কারও কারও মুখে হাসি দেখছি, এটার জন্যই আমি জন্মেছি আসলে।’
খেয়াল শুনতে কিংবা গাইতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে কবীর সুমন বলেন, ‘ড্রাম বাজান, ঢোল বাজান। দেখুন, শুধু সংগীতটা যেন থাকে।’
নবীন শিল্পীদের উদ্দেশে সুমন বলেন, ‘গান নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন। এক্সপেরিমেন্ট করতে ভয় পাবেন না। গান নিয়ে ভয় পাবেন না। মনের আনন্দে গান করুন। মনের আনন্দে ভুল করুন। ভুল করে থেমে যাবেন না। আবার ভুল করুন।’
দীর্ঘ ১৩ বছর পর ঢাকার মঞ্চে গাইতে এসেছেন কবীর সুমন। এই সফরের প্রধান শর্ত ছিলো, একদিন আলাদা করে শুধু বাংলা খেয়ালের আয়োজন রাখতে হবে। সেটারই বাস্তবায়ন হলো আজ। এদিন সুমনের খেয়াল শুনতে হাজির হয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণব; সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী-গায়িকা সুনিধি নায়েক। এছাড়া সংগীতশিল্পী-অভিনেতা জন কবির, গাউসুল আলম শাওন, শুভেন্দু দাস শুভসহ অনেকে।
গানের ফাঁকে ফাঁকে খেয়ালের বর্ণনা করেছেন কবীর সুমন। বলেছেন, ‘ধরুন আপনারা আমার কাছে গল্প শুনতে চাইলেন, আমার তৃতীয় বিয়ের গল্প। আমি যদি সেটা সংক্ষেপে বলে ফেলি, যেমন অপর্ণার কাছে গিয়ে সোজাসুজি বললাম, চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। আপনারা কিন্তু থামিয়ে দিয়ে বলবেন, থাক গল্প বলা লাগবে না। কারণ গল্প তো একটু রসিয়ে বলতে হবে। গল্পের ভেতরেও তো গল্প থাকে। গল্পটাকে নানানভাবে বলাই মূলত খেয়ালের কাজ।’
বাংলাদেশ সরকারের কাছেও একটি অনুরোধ জানান কবীর সুমন। বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাড়া কিন্তু বাংলা খেয়ালের কোনও উপায় নেই। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যদ্দিন বেঁচে থাকবো, জানাবো; বাংলা খেয়ালের পাশে থাকবেন।’
আরও একদিন ঢাকায় গাইবেন সুমন। আগামী ২১ অক্টোবর একই স্থানে তিনি শোনাবেন আধুনিক গান। এরপর ফিরে যাবেন কলকাতায়। যদিও তিনি ইতোপূর্বে ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশে আবারও আসতে চান। এমনকি ডাকলে তিনি বিনামূল্যেই গান গেয়ে যাবেন বলেও স্পষ্টভাষ্যে বলেছেন।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন