X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পথে হলো দেখা: খানিক গল্প এবং অপার মুগ্ধতা

সুধাময় সরকার
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৫৫আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫২

তারকাদের ফ্যান-ফলোয়ার থাকবেই। তা না হলে কেমনতর তারকা! ফ্যানক্লাব, ফ্যান পেজ তো বটেই, বাসার ফটকে কিংবা চলতি পথেও সেই তারকাদের নিয়ে ঘটবে ভক্তদের কত-শত রোমাঞ্চকর ঘটনা। যদিও সোশাল হ্যান্ডেলের এই ‌ফলোয়ার-নির্ভর সময়ে একজন তারকার ওজন মাপা হয় মূলত সংখ্যায়। ভিউ আর ফলোয়ারের মারপ্যাঁচে সব তারকা যেন তালগোল পাকিয়ে বসে আছে। কাজ বা উদ্যোগ নয়, ভক্ত বাড়ানোর আশায় তারকারা ঝুঁকে আছে পেজ অ্যাডমিন আর সোশাল মিডিয়া ম্যানেজারদের আনুকূল্যের দিকে। ফলে তারকাদের সত্যিকারের ‌‘ভক্ত’ এই ‘ফলোয়ার’ সময়ে খুঁজে পাওয়া ঢের কঠিন।

সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। গেলো চারদিন ধরে অবস্থান করছেন চট্টগ্রাম শহরের কুমিরাঘাট ও রেলওয়ে হাসপাতাল এলাকায়। উদ্দেশ্য একটি বিশেষ প্রজেক্টের শুটিং। সহশিল্পী হিসেবে যথারীতি আছেন নিলয়। শুধু চট্টগ্রাম কেন, শুটিং-সুবাদে দেশ-বিদেশের অসংখ্য স্থানে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ান হিমি। তবে এবারের সফরটা তার অভিনয় জীবনের অন্যতম স্মৃতিকাতরতার কারণ হয়ে থাকবে বলে মনে করেন অভিনেত্রী। কারণ, শুটিংয়ের ফাঁকে বাস্তবে ঘটা এই গল্পের নায়ক একজন পথশিশু। যার পেশা ছোট বালতিতে করে চট্টগ্রামের রেলওয়ে অঞ্চলে ফুল বিক্রি করা।

পথশিশুর সঙ্গে গল্পে মশগুল হিমি রবিবার (২৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম থেকে হিমি বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন পুরো ঘটনার সবিস্তার, ‘‘চট্টগ্রামে আমরা চারদিন হলো বিভিন্ন হাসপাতাল, সড়ক আর রেলওয়েতে ঘুরে ঘুরে শুটিং করছি। তো তৃতীয় দিন রেলওয়ে হাসপাতালের পাশের একটি সড়কে কাজ করছিলাম। অনেক মানুষ জমে গেছে। হঠাৎ দেখলাম সব মানুষ ঠেলে একটা পিচ্চি আমার আর নিলয় ভাইয়ার দিকে আসছে। দেখে মনে হলো, সে তার লক্ষ্যে বেশ কনফিডেন্ট। মানে পছন্দের কিছুর জন্য সে কাউকে কেয়ার করবে না। মাথার চুলগুলো স্পাইকের মতো খাড়া খাড়া। ও আমাদের কাছে এলো। টুকটাক কথা বললো- আমাদের সে নাটকে দেখেছে। যেটা সচরাচর শুনি আমরা। তবে বয়সে খুবই ছোট বলে আমরা একটু অবাকই হলাম। এরপর নিলয় ভাইয়া মজা করে ওকে বললো, ‘তোমার চুল এত খাড়া কেন!’ এরপর আর মনে নেই। আমি শটে চলে যাই।’’

পরদিন (২৯ জানুয়ারি) শুটিং লোকেশন রেলওয়ে হাসপাতাল। হিমির চরিত্রটি হাসপাতালের আয়ার। তেমনই গেটআপ আর ঝাড়ু নিয়ে বসে আছেন হাসপাতালের বাইরের সড়ক ডিভাইডারে। লাইট-ক্যামেরার সেটআপ চলছে। এখনও ক্যামেরা প্রস্তুত নয়। ঠিক এই সময়ে হিমির সামনে হাজির সেই পথশিশু। 

পথশিশুর সঙ্গে গল্পে মশগুল হিমি হিমি বলেন, ‘আজও সে বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমার সামনে এলো। হাতে গোলাপের বালতি। সেটা নিচে রেখে আমার পাশে বসলো। তবে আজ আর চুল খাড়া নেই! একেবারে তেল দিয়ে আঁচড়ানো, পরিপাটি। পায়ে লাল মুজো আর জুতো! মনেই হচ্ছে আজ সে নিজের যতটুকু সম্ভব সেটা দিয়ে প্রস্তুত হয়ে সেজেপেড়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে! এটুকু ভেবেও তখন বেশ আনন্দ লাগছিল। মনের ভেতর কেমন জানি প্রেম প্রেম ভাব জন্মালো।’

পথশিশুর সিঁথিকাটা চুল, পায়ে লাল মুজো আর বালতি ভরা গোলাপ দেখে হিমির মনে প্রেম পেলেও সেটি উবে যায় খানিক বাদেই। পাশে বসেই ছেলেটি হিমিকে বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো, ‘আপনার আম্মু না আপনাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল?’ হিমি এমন প্রশ্নে তাজ্জব বনে গেলেন। অবাক হয়ে বললেন, ‘কী বলো এসব তুমি? আমার আম্মু আমাকে কেন বিষ খাওয়াবে?’

এরপর পথশিশুটি হিমি ও তার পরিবার ঘিরে আরও কিছু ঘটনার কথা বলতে থাকলো। চট করে হিমির মনে পড়লো, খুদে ভক্তটি মূলত তার নাটকের গল্পগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছিল। হিমির ভাষ্যে, ‘‘ও যে আমার নাটকের ঘটনাগুলোর সূত্র ধরে কথা বলছে সেটা আমি পরে টের পাই। মনে পড়লো, মায়ের বিষ খাওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে ‘আইটেম বয়’ নামের একটি নাটকে। কিন্তু বাচ্চাটি ভেবেছে ওই ঘটনাটি বাস্তবেই আমার জীবনে ঘটেছে। ওর ধারণা ছিল, নাটকে যা যা দেখে সেটা আসলে বাস্তবেই ঘটে! সে যাই হোক, আমার চরিত্রগুলো নিয়ে এমন একটি পথশিশু যেভাবে আমার সঙ্গে পথে বসে গল্প করছে; সেটা ভেবেই আমি বাকরুদ্ধ, মুগ্ধ আর বিস্মিত। আমি কম বেশি অনেক ভক্তের দেখা পেয়েছি। যাদের বেশিরভাগ আসলে সেলফিটাই তোলে। কিন্তু শিশুটি তাদের মতো নয়। সে বেশ আলাদা। ভক্তদের তালিকায় আমার অভিনয় জীবনের অন্যতম পাওয়া বলে মনে করি।’’

পথে হলো দেখা: খানিক গল্প এবং অপার মুগ্ধতা পথশিশু আর নায়িকার প্রেমের গল্প এখানেই শেষ নয়। বরং বাঁক নিয়েছে অন্যদিকে। হিমি এরপর শিশুটিকে বুঝিয়ে বললেন, নাটক আর বাস্তব এক বিষয় নয়। গল্পের প্রয়োজনে শিল্পীরা বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। যার সঙ্গে বাস্তব জীবনের সংযোগ খুবই কম। এরপর হিমি শিশু-ভক্তকে সুধালেন- 

: তুমি এত ছোট মানুষ। আমার নাটক কোথায় দেখলা? 
- টিভিতে।    
: পড়াশোনা করো? স্কুলে যাও?
- ক্লাস টু-এ পড়ি। কিন্তু ফাঁকিবাজি করি। রেগুলার যাই না।

হিমি বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে যখন এই গল্পগুলো রাস্তায় বসে শুটিংয়ের ফাঁকে করছিলাম, তখন আমার ম্যাকাপম্যান কিছু ছবি তুলে নিলো। পরে সেগুলো দেখে খুব আরাম পেয়েছি। তারচেয়েও বিস্ময়, আমাদের এই একান্ত আলাপ দেখে ডিরেক্টরও তার চিত্রনাট্যে খানিক বদল আনলেন। বললেন, ‘তোমাদের গল্পটা খুবই ন্যাচারাল ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওকে নিয়েই একটা সিকোয়েন্স শুট করবো’। কিন্তু আমার খুদে-নায়ক বেঁকে বসলেন! বললেন, তার নাকি লজ্জা লাগে। শুটিং করবেন না! এরপর ঠিকই ওখানে বসে একটা সিকোয়েন্স করি আমরা।’’  

এই খুদে ভক্তকে পেয়ে হিমির শেষ প্রতিক্রিয়াটি এমন, ‘তো এমন ভক্ত, পথশিশু বা ফুল বিক্রেতা আসলে জীবনে খুব কমই আসে। অনেক ভক্তই তো আছে, যারা আমাদের নাটক দেখে, পছন্দ করে। বাট এটা একেবারে আলাদা অভিজ্ঞতা। এর সঙ্গে অন্য ভক্তদের মেলানো অন্যায় হবে। ওর কথা আমার আজীবন মনে থাকবে।’

কিন্তু চার-পাঁচদিন ধরে চট্টগ্রামের পথে পথে হিমি-নিলয় জুটি করছে কী! বললেন, ‘কাজটির নাম-পরিচয় কিছুই বলা যাবে না। পরিচালকের কড়া নিষেধ আছে। তবে যাই করছি, সেটি উন্মুক্ত হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে।’

জে এস হিমি

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইউটিউব ট্রেন্ডিং: ঈদের কোন কাজগুলো এগিয়ে
ইউটিউব ট্রেন্ডিং: ঈদের কোন কাজগুলো এগিয়ে
গাইলেন অভিনেত্রী হিমি 
গাইলেন অভিনেত্রী হিমি 
‘দীর্ঘদিন পর একটা সিরিয়াস গল্পে কাজ করলাম’
‘দীর্ঘদিন পর একটা সিরিয়াস গল্পে কাজ করলাম’
নিলয়ের গ্যারেজে গিয়ে হিমির এই হাল!
নিলয়ের গ্যারেজে গিয়ে হিমির এই হাল!
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া