চেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ির চর্চা ঢালিউডে নতুন নয়। চেয়ার-পদের জন্য মরিয়া হয়ে একে-অপরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত হাজির হয়েছেন সিনেমার শিল্পীরা। কিন্তু অভিভাবকতুল্য নায়কের প্রয়াণের পরই যেভাবে তার সংসদীয় আসন দখলের জন্য কোমরে গামছা বেঁধে নেমে পড়েছেন কিছু শিল্পী, তাতে খানিকটা বিস্মিতই হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
হ্যাঁ, ঢাকা-১৭ আসনের কথাই বলা হচ্ছে। চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক এই আসনের এমপি ছিলেন। গত ১৫ মে তিনি মারা গেছেন। এ কারণে আসনটি শূন্য হয়ে পড়েছে। তাই এই আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন কিছু শিল্পী।
শুরুটা করেছেন নাটকের অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান। অভিনয়ে নিজেকে গ্রহণযোগ্য অবস্থানে নিতে পারেননি তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে নাটকে তার চাহিদাও নেই। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এর ফাঁকে ফাঁকে শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় টিকে আছেন। নায়ক ফারুকের মৃত্যুর পরই কালক্ষেপণ না করে তিনি ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গণমাধ্যমে জোরগলায় বলছেন, ফারুকের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো তিনি পূরণ করতে চান। এজন্য আওয়ামী লীগের সুদৃষ্টি চাইছেন তিনি।
অন্যদিকে চিত্রনায়ক ওমর সানী দাবি তুললেন চিত্রনায়ক ফেরদৌসের জন্য। ওমর সানীর মতে, ফেরদৌস দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আসনে ফেরদৌসকে বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
চাওয়া-দাবির এই মিছিলে নতুন করে যোগ হলো কিংবদন্তি অভিনেতা আলমগীরের নাম। না, তিনি নিজে কিছু বলেননি। বরং তার জন্য আওয়াজ তুলেছেন একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা অঞ্জনা রহমান। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট দিয়ে এ বিষয়ে নিজের ভাবনা জানিয়েছেন তিনি।
অঞ্জনা বলেছেন, ‘সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি চিত্রনায়ক এবং ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ভাই আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় চলচ্চিত্র শিল্পে যেমন শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি শূন্যতা বিরাজ করছে ঢাকা-১৭ আসনটিতে। চলচ্চিত্র শিল্প থেকে অনেকে চাচ্ছে এই আসনটিতে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে যাকে মনোনীত করা হবে, তিনিই হবেন এই আসনের নৌকার মাঝি।’
আলমগীরের প্রশংসা করে অঞ্জনা বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি মহারথীজন, নন্দিত নায়ক প্রিয় আলমগীর ভাই। যার অবদান এই চলচ্চিত্র শিল্পে অতুলনীয়। শুধু চলচ্চিত্র শিল্পই নয়, সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার অনন্য অবদান। আপনারা অনেকে বলতে পারেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আলমগীর ভাইয়ের অবদান কী? এই ক্ষেত্রে বলতে গেলে, আলমগীর ভাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বেড়ে উঠেছেন সেই শৈশব থেকেই। একজন প্রকৃত শিল্পী রাষ্ট্রের সম্পদ। চলচ্চিত্র শিল্প হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় শক্তিশালী মাধ্যম। আর আমাদের চলচ্চিত্র পরিবারের সবচেয়ে বড় গার্ডিয়ান হলেন প্রাণপ্রিয় আলমগীর ভাই। ফারুক ভাইয়ের অসম্পূর্ণ কাজগুলো যদি কারও মাধ্যমে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়, তিনি একমাত্র আলমগীর ভাই।’
অঞ্জনা জানান, আলমগীর নীরবে-নিভৃতে সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কাজ করেন। তাই সংসদ সদস্য হলে আরও বড় পরিসরে মানুষের সেবা করতে পারবেন। অঞ্জনার ভাষ্য, ‘তিনি যা করেছেন, এ দেশের অনেক সংসদ সদস্যও তা করতে পারেননি। তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণ করেছেন, স্কুল নির্মাণ করেছেন এবং প্রতিনিয়ত তিনি দুঃখী মানুষের সাহায্যার্থে কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে নিভৃতে। এরকম মহৎ হৃদয়বান ব্যক্তি বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে এলে দেশ ও জনগণের শুধু উপকারই হবে না, জনমনে এক প্রকার শান্তি আবির্ভূত হবে। আলমগীর ভাই না চাইলেও আমাদের চলচ্চিত্র পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা সবাই চাই, প্রয়াত ফারুক ভাইয়ের অসম্পন্ন কাজগুলো আলমগীর ভাইয়ের হাতে পূর্ণতা পাক।’
বলা প্রয়োজন, নায়ক ফারুক কৈশোর থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশের ঐতিহাসিক বিভিন্ন আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচিত হন। তবে এর কিছু দিন পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেভাবে কাজ করার সুযোগ পাননি।