X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ সিনেমার হাত ধরে শৈশবে ফিরে গেলেন আফজাল হোসেন!

বিনোদন রিপোর্ট
০৯ জুলাই ২০২৩, ১৪:১৪আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৩, ২০:১১

দেশ স্বাধীনের দুই বছর আগে আফজাল হোসেনের জন্ম। দেশ বেড়ে ওঠার সঙ্গে তিনিও বেড়ে উঠেছেন। আর হয়েছেন দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের উত্থানের সাক্ষী। বিশেষত সিনেমার সেই ঝলমলে অধ্যায়ের পুরোটাই নিজ চোখে দেখেছেন তিনি। একসময় নিজে ছিলেন সিনেমার পোকা, নিয়ম করে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতেন। এফডিসির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। সিনেমা নিয়ে মানুষের উন্মাদনা পরখ করতেন। আবার সেই তিনিই একপর্যায়ে দেখলেন ঢাকার সিনেমা মৃত্যুশয্যায়, ধুঁকছে!

আফজাল হোসেন নিজেও ঢাকার অভিনয় জগতের নন্দিত তারকা। তবে এই তারকা হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তিনিও অন্য সব সাধারণ দর্শকের সারিতে ছিলেন। সেই জায়গা থেকেই সিনেমার স্বর্ণালি সময়ের উপাখ্যান বর্ণনা করলেন। তার ভাষ্য, “আমি ছিলাম সিনেমার পোকা। সত্তর সালে ঢাকায় পা দিয়ে প্রথম রাতেই বলাকা সিনেমা হলে দেখি, রাজ্জাক-কবরী অভিনীত ‘দর্পচূর্ণ’। স্কুলে থাকতে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের ছবি কেটেকুটে অ্যালবাম বানিয়েছিলাম। রাজ্জাক, কবরী, আজিম, সুজাতা, নাদিম, শাবানা, শবনম, সুচন্দা, নাসিমা খান, রানী, জেবা, ওয়াহিদ মুরাদ, মোহাম্মদ আলী এমনকি উল্টো রথের পাতা থেকে উত্তম, সুচিত্রা, দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর, দেব আনন্দ, বৈজয়ন্তিমালা, মধুবালাদের ছবিও সে অ্যালবামের সম্পদ ছিল।”  

শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে আফজাল হোসেন বললেন, “কম বয়সে সিনেমা দেখা, গল্পের বই পড়া খারাপ কাজ বলে বিবেচনা করা হতো। আব্বা আমাদের সঙ্গে নিয়ে একটাই ছবি দেখিয়েছিলেন- ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। দেখানোর কারণ, তা থেকে ইতিহাস জানা, শেখা হবে- সেটা ঐতিহাসিক ছবি। আমার নানাবাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। সীমান্তের এপার-ওপারের মানুষদের ধ্যান ধারণায় পার্থক্য অনেক। ছোট একটা লাইব্রেরি ছিল নানাবাড়ির দোতলার চিলেকোঠায়। সেখানে গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, সাহিত্য পত্রিকা সবই ছিল। নানাবাড়ির দেয়ালে মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত নেহরু, নেতাজি সুভাষ, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত ভট্টাচার্যের বাঁধানো ছবি ঝোলানো থাকতে দেখেছি। সে বাড়িতে সিনেমা দেখা, গল্প উপন্যাস পড়া অত খারাপ কাজ বলে মনে করা হতো না।”

আফজাল হোসেন সাতক্ষীরার গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার পরই মূলত সিনেমা-অভিনয় জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন আফজাল হোসেন। সেই গল্প বর্ণনা করলেন এভাবে, ‘ঢাকায় এসে আমার কপাল খুলে গেলো। তখন এই শহরে ইংরেজি, বাংলা আর উর্দু ভাষার সিনেমা চলে। ফাঁক পেলেই এ হল ও হলে ঘুরে বেড়াতাম। সেকালে মন মজানো সৌরভে ম ম করতো হলগুলো। আসিতেছে চলিতেছে লেখা বাক্সের মধ্যে কোন ছবি আসবে আর চলছে যে ছবি, উভয়ের স্থিরচিত্র প্রদর্শনের জন্য সাজিয়ে রাখা হতো। দর্শক কাচ লাগানো বাক্সের সামনে ভিড় করে ছবির বৃত্তান্ত উপভোগ করতেন। তখন সপ্তাহে কমপক্ষে তিনটি সিনেমা না দেখলে পেটের ভাত হজম হতো না। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আমি। থাকতাম বাংলামোটর (তখন পাক মোটর) জহুরা মার্কেটের পেছনে সাতক্ষীরা মেসে। রোজ বিকালে আর্ট কলেজ থেকে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে সামনের ইউসুফ কনফেকশনারি থেকে কিছু একটা খাবার কিনে নিয়ে পূর্বদিকের ঢাল বেয়ে নেমে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতাম এফডিসির দিকে। তখন সেই গেটের সামনে দেখতাম উপচে পড়া মানুষের ভিড়। ভিড় করে থাকা সব মানুষের মনে একটাই আশা, আহা যদি একবার ভিতরে ঢোকা যেতো! সবার কাছে সেটা ছিল স্বপ্নপুরী। সিনেমার স্বপ্ন তৈরির সাধ্য ছিল বলে মানুষের মনে তা নিয়ে আগ্রহ, কৌতূহল ছিল বিশেষ।’

আফজাল হোসেন জানান, এত সব ঘটনা বলেছেন মূলত সিনেমার সেই সময়কার রমরমা অবস্থার কথা বোঝানোর জন্য। তার ভাষ্য, ‘সিনেমার জন্য মানুষের টান, উন্মাদনা কতটা ছিল সচক্ষে সবই দেখা। আবার উন্মাদনা, আকর্ষণ নানা কারণে কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় ঠেকতেও দেখেছি। আকাশ থেকে পাতালে ছিটকে পড়ার মতো বেদনাদায়ক ঘটনা।’

তবে সম্প্রতি সেই ঝিমিয়ে পড়া ইন্ডাস্ট্রি ফের জেগে উঠছে বলে মনে করছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘উত্থান ও পতনের ছন্দেই চলে জগৎ ও জীবন। সেই নিয়মে ২০২৩-এর মাঝামাঝি এসে অনুভব হচ্ছে, চলচ্চিত্রের হারানো গৌরব আবার ফিরছে। বহুদিন পর সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। ঈদ উপলক্ষে পাঁচটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তার মধ্যে তিনটি সিনেমা নিয়ে খুব চর্চা হচ্ছে। এমনটা অনেককাল পর ঘটতে দেখেছি। দেখেছি সিনেমা দেখার জন্য সকল শ্রেণির মানুষের হুড়োহুড়ি। এমনই ছিল। দর্শকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, এমন সিনেমাবিমুখ হওয়ার কারণ। যারা ভালো সিনেমা বানাতেন একে একে সবাই একসময় সরে পড়লেন। জায়গা ফাঁকা থাকে না, পরবর্তীতে যেমন সিনেমা নির্মিত হতে থাকলো- সেসকল সিনেমা থেকে বিরাট সংখ্যক দর্শক আগ্রহ সরিয়ে নিতে বাধ্য হন।’

সবশেষে আফজাল হোসেন বলেছেন, “লম্বা সময় ধরে দর্শককে বিচ্ছিন্নতার জন্য, সিনেমা দেখার প্রতি অনীহার জন্য দোষারোপ করা হয়েছে। ‘প্রিয়তমা’, ‘প্রহেলিকা’ আর ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমা নিয়ে দর্শকের ব্যাপক আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে, মন্দ উদ্দেশ্যের সিনেমা ধীরে ধীরে ভয়ংকর দূরত্ব রচনা করেছিল; সদিচ্ছায় নির্মিত সিনেমাই আবার দর্শকদের টেনে আনছে সিনেমা হলে। মন্দের সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন দর্শক। এখন উৎসাহ, আনন্দ প্রকাশ করে জানিয়ে দিচ্ছেন, ভালোর সঙ্গে তারা ছিলেন, আছেন, থাকবেন। দর্শক সিনেমার পোকা হতে চান- এমন ইচ্ছার প্রতি সমীহ দেখানো খুব জরুরি। আরও জরুরি হচ্ছে- তাদের বোকা না ভাবা।”

ঈদের আলোচিত তিন সিনেমার নায়ক- শাকিব খান, আফরান নিশো ও মাহফুজ আহমেদ বলা দরকার, আফজাল হোসেনের অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল মঞ্চনাটক দিয়ে। এরপর সিনেমা ও টিভি নাটকে অভিনয় করে সমাদৃত হয়েছেন। যদিও তাকে টিভি নাটকেই বেশি পাওয়া গেছে। এর বাইরে পরিচালনা এবং লেখালেখিতেও সমুজ্জ্বল তিনি।

/কেআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আফজাল হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হলেন শহীদুজ্জামান সেলিম 
আফজাল হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হলেন শহীদুজ্জামান সেলিম 
হাসপাতালে আফজাল হোসেন, অবস্থার উন্নতি
হাসপাতালে আফজাল হোসেন, অবস্থার উন্নতি
বঙ্গবন্ধুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো তার জীবনে!
বঙ্গবন্ধুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো তার জীবনে!
এবারের নির্মাণ নিজের জীবনের গল্প নিয়ে
এবারের নির্মাণ নিজের জীবনের গল্প নিয়ে
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকার জ্যাম আর গরম নিয়ে প্রেমের গান!
ঢাকার জ্যাম আর গরম নিয়ে প্রেমের গান!
তামান্নার শুভ সূচনা
তামান্নার শুভ সূচনা
ওটিটিতে মঞ্চনাটক ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন’
ওটিটিতে মঞ্চনাটক ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন’
আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান!
আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান!